ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ কার্তিক ১৪৩১, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

আইসিসিবিতে ১৯তম জাতীয় ফার্নিচার মেলা শুরু

ফার্নিচারের রপ্তানি বাড়াতে হলে কর কাঠামো ঠিক করতে হবে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০২৪
ফার্নিচারের রপ্তানি বাড়াতে হলে কর কাঠামো ঠিক করতে হবে

ঢাকা: দেশে আসবাবপত্র বা ফার্নিচার খাতের বাজার ২৫ হাজার কোটি টাকার। তবে কর কাঠামো পুনর্বিবেচনা, উদ্যোক্তাদের ঋণ সহায়তা, আলাদা ফার্নিচার শিল্পপার্ক প্রতিষ্ঠা, ভ্যাট কাঠামো সহজ করা এবং এই খাতের উদ্যোক্তা ও কর্মীদের দক্ষতা বাড়ানো গেলে আন্তর্জাতিক ফার্নিচার বাজারের একটা বড় অংশ দখলে নিতে পারে বাংলাদেশ।

আন্তর্জাতিক বাজারে ফার্নিচারের রপ্তানি বাড়াতে হলে কর কাঠামো ঠিক করতে হবে।

মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর কুড়িলে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার (আইসিসিবি) পুষ্পগুচ্ছ হলে দেশিয় ফার্নিচার শিল্পের সবচেয়ে বড় প্রদর্শনী ১৯তম জাতীয় ফার্নিচার মেলা ২০২৪ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বক্তব্যে এসব কথা বলেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) অ্যাডমিনিস্ট্রেটর মো. হাফিজুর রহমান। মেলার আয়োজন করে বাংলাদেশ ফার্নিচার শিল্প মালিক সমিতি (বিএফইএ)।

নতুন রপ্তানির মার্কেট হিসাবে চামড়া শিল্পের পর ফার্নিচার শিল্প সম্ভাবনাময় উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত বছর ফার্নিচার সেক্টরে ১২০ মিলিয়ন ইউএস ডলার রপ্তানি হয়েছে। এ বছরের পরিমাণ কিছুটা কম। আমরা আশা করছি সামনে আমাদের রপ্তানি আরও বাড়বে। আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যে পণ্যের সংখ্যা খুবই অল্প। আমাদের প্রায় ৮৪ শতাংশ এক্সপোর্ট হয় গার্মেন্টস সেক্টর থেকে। এটাকে আমরা বলি হাইলি কনসেনট্রেটেড বাস্কেট। আর এই রপ্তানি ৫৪ শতাংশ হয় শুধুমাত্র ইউরোপে। তবে কনসেনট্রেটেড মার্কেট এবং কনসেনট্রেটেড প্রোডাক্টে সমস্যা হচ্ছে কোনো কারণে যদি পণ্যটি বাজার হারিয়ে ফেলে তাহলে অর্থনীতিতে বড় ধরনের একটি ধাক্কা আসে। সেই হিসেবে নতুন রপ্তানির মার্কেট হিসাবে চামড়া শিল্পের পর ফার্নিচার শিল্পই সম্ভাবনাময়।

ফার্নিচার সেক্টরের সমস্যাগুলো উল্লেখ করে এ এফবিসিসিআই কর্মকর্তা বলেন, প্রথমত বন্ডেট ওয়ার হাউজের একটি সমস্যা আছে। পাশাপাশি এই সেক্টরে হিউজ ট্যারিফ ট্যাক্স নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করে। আমার ধারনা, আমরা যদি ট্যাক্সের সমস্যাটা সমাধান করতে পারি তাহলে এই শিল্পকে অনেক উন্নত করা যাবে। আমরা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) অফিসে গিয়ে এ বিষয়ে আলোচনা করব কীভাবে ট্যাক্সের সমস্যা সমাধান করা যায়।

হাফিজুর রহমান আরও বলেন, আমাদের এই নতুন বাংলাদেশের বাধা বলে কোনো কিছু থাকবে না। অপ্রয়োজনীয়, যেটা অত্যাবশ্যক নয় সে ধরনের বাধা সৃষ্টি করে ট্রেডকে নষ্ট করা এই সরকারের উদ্দেশ্য নয়। সবকিছুকে নতুনভাবে সাজিয়ে আমাদের এই সরকার বাণিজ্যসহ সব কিছুকে সহজ করতে চায়। রপ্তানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে লেস ডেভেলপমেন্ট কান্ট্রি (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পর আমরা কিছু সুবিধা পাব। রপ্তানির ক্ষেত্রে ট্যাক্স ফ্রি যে সুবিধা আছে সেটা আমরা পাব। পেইড এবং ইনসেন্টিভ এই দুই সুবিধা পাওয়ার জন্য যেটা দরকার তা হচ্ছে ট্রেডের কস্ট কমিয়ে আনা।

ব্যবসায়ীদের যাতে ট্যাক্সের অফিসসহ অন্যান্য সার্টিফিকেশন অফিসে দৌড়াদৌড়ি কম করতে হয়, সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব আমাদের ব্যবসাগুলোকে কার্যকরী করে আরও সহজতর করা হবে। যারা রপ্তানি বাণিজ্য সঙ্গে যুক্ত তাদের ঠিক যেভাবে সুবিধা দিলে তারা উন্নয়ন করতে পারবে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

মধ্যবিত্ত যারা তারা যেন ফার্নিচার কিনতে পারে সেই ক্রয়সীমার ভেতর ফার্নিচারের দাম রাখার আহবান জানিয়ে মো. হাফিজুর রহমান বলেন, উদ্যোক্তাদের বলব, আপনি চাইলেই হুট করে দাম কমাতে পারবেন না। তার জন্য দরকার ইনোভেশন এবং রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের। এর মাধ্যমে আপনারা ব্যবসাকে উন্নত করতে পারবেন। যে সকল বড় বড় উদ্যোক্তা আছেন তারা যদি ডেভেলপমেন্টে কিছু বিনিয়োগ করেন তাহলে ফার্নিচারের দাম যদি কমে, এক্ষেত্রে আমাদের দেশের মানুষ যেভাবে কিনতে পারবে আপনারা রপ্তানির বাজারেও কম্পিটিশন দিতে পারবে।

মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৫০ কোটি ডলারের ফার্নিচারের বাজার রয়েছে। ২০২৫ সালে বিশ্বে ফার্নিচার খাতের বাজার হতে পারে ৬৫ হাজার ৪৬০ কোটি ডলারের। বাংলাদেশ একসময় শতভাগ ফার্নিচার আমদানি করতো। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশ দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও ফার্নিচার রপ্তানি করছে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ খাতে বাংলাদেশ আরও ভালো করতে পারবে।

আইসিসিবিতে আয়োজিত দেশিয় ফার্নিচার শিল্পের সর্ববৃহৎ এই আয়োজনে অংশ নিচ্ছে হাতিল, আখতার, ওমেগা, নাভানা, রিগ্যাল, নাদিয়া, ব্রাদার্স ফার্নিচারসহ নামীদামী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।

বাংলাদেশ ফার্নিচার শিল্প মালিক সমিতির চেয়ারম্যান সেলিম এইচ রহমানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইসচেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. আনোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ ফার্নিচার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ও এফবিসিসিআই পরিচালক ড. কে এম আখতারুজ্জামান।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ফার্নিচার শিল্প মালিক সমিতির ভাইস চেয়ারম্যান ও মেলা কমিটির আহ্বায়ক শেখ আব্দুল আউয়াল, সাংগঠনিক সম্পাদক এ করিম মজুমদার, মহাসচিব মো. ইলিয়াস সরকার প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০২৪
ইএসএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।