বরিশাল: যুবদল নেতাকে অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী, রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ কমিশনারসহ ৩৯ বিরুদ্ধে নালিশি মামলা দায়ের হয়েছে।
রোববার (১০ নভেম্বর) বরিশালের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মামলাটি করেন বরিশাল জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মশিউল আলম খান।
অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. হাবিবুর রহমান চৌধুরী নালিশি অভিযোগ এজাহার হিসেবে রুজু করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য মহানগর পুলিশের বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছে বেঞ্চ সহকারী আরমান হোসেন।
মামলার নামধারী আসামিরা হলেন- সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল-৫ আসনের সংসদ সদস্য কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম, সাবেক পুলিশ কমিশনার রুহুল আমিন, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক অজিয়র রহমান, উপ-পুলিশ কমিশনার মো. মোয়াজ্জেম হোসেন ভুঁইয়া, বন্দর থানার সাবেক ওসি মো. মোস্তফা কামাল হায়দার, পরিদর্শক (তদন্ত) শাহ মো. ফয়সাল আহম্মেদ, এসআই আব্দুল মালেক, কনস্টেবল ফয়জুল, এএসআই এরফান হোসেন মিদুল, এএসআই সহিদুল ইসলাম, এএসআই রফিকুল ইসলাম, এএসআই রাসেল মিয়া, এএসআই মোহাম্মদ মিলন বিশ্বাস ও এএসআই মো. মেহেদি হাসান। এছাড়াও অজ্ঞাতনামা ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী এমএ মালেক বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে পথরোধ করে অপহরণ করে হত্যার চেষ্টায় মারধর, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার বরাতে বেঞ্চ সহকারী মো. আরমান হোসেন বলেন, আসামিরা পুলিশের ও প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। তারা বিগত সরকারের অন্যায় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে মানুষের মৌলিক অধিকারকে হরণ করেছেন। ২০১৮ সালে শেখ হাসিনার পাতানো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকার দলের মনোনয়ন প্রাপ্ত প্রার্থীকে বিনা ভোটে নির্বাচিত করার হীন চক্রান্তে লিপ্ত ছিল। মামলা প্রধান আসামি কর্নেল অব. জাহিদ ফারুক শামীম সরকার দলের প্রার্থী। মামলার প্রধান সাক্ষী অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ছিলেন। আসামিরা বিএনপির প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত জানতে পেরে প্রচারণায় বাঁধা, কর্মীদের মারধর, হুমকি, মিথ্যা মামলায় গণগ্রেপ্তারসহ গুম করার মতো প্রক্রিয়া শুরু করে।
২০১৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর দুপুরে সদর উপজেলার চন্দ্রমোহন বাজারে লিফলেট বিতরণ করে বরিশাল নগরীতে সমাবেশে অংশ নিতে প্রার্থী অ্যাডভোকেট সরোয়ারসহ রওনা দেন। তারা সদর উপজেলার বিশ্বাসের হাট নদীর পাড়ে এসে পৌঁছলে প্রধান তিন আসামির পরিকল্পনা ও হুকুমে অন্যান্য আসামিরা দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীর মতো পুলিশের পোশাক পরে এসে তাদের দুই পাশ থেকে ঘিরে ধরে। বিএনপির প্রার্থীকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। বাদী বাঁধা দিলে আসামির অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে টেনে হিঁচড়ে তাকে স্পিড বোট থেকে অপহরণ করে। পরে একটি বদ্ধ ঘরে নিয়ে তার কাছে অস্ত্র ও গান পাউডার আছে এবং নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততা আছে বলে মিথ্যা স্বীকারোক্তি চায়। বাদী যুবদল নেতা স্বীকারোক্তি দিতে না চাইলে পায়ের বুট দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে। এছাড়াও রাইফেলের বাট ও লাঠি দিয়ে আঘাত করে ক্রস ফায়ারে হত্যা করে লাশ গুম করার আলোচনা করে। ক্রস ফায়ার দেওয়ার উদ্দেশ্যে বদ্ধ ঘর থেকে নিয়ে বের হলে আসামিরা জানতে পারে ঘটনাটির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তখন ভুক্তভোগীকে বন্দর থানায় সোপর্দ করে আসামিরা। পরে তাকে দুটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলে পাঠানো হয়।
স্বৈরশাসন বহাল থাকায় নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে এতদিন মামলা করেননি বাদী। এজাহারে সেটিও উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০০১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০২৪
এমএস/এমজে