ঢাকা: আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে। মেগা প্রকল্প নেয়া হবে না।
মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) অর্থ মন্ত্রণালয়ের ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ)-এর সঙ্গে আয়োজিত প্রক-বাজেট আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালা এবং সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম’র নেতৃত্বে সংগঠনের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাধারণ সদস্যরা আলোচনায় অংশ নেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বাস্তব সম্মত প্রস্তাবনা চাচ্ছি। বিরাট আশ্বাস দেব না, যেটা বাস্তবায়ন করা যাবে না। বাজেটে কিছু কিছু মধ্য মেয়াদি, দীর্ঘমেয়াদি বিষয় থাকবে। সেটা ফুটপ্রিন্ট হিসেবে থাকবে। আমরা মূল্যস্ফীতি, কর্মসংস্থান, ম্যাক্রো ইকনমিক স্টাবলিটি এবং প্রাইভেট সেক্টরকে মাথায় রেখে বাজেট প্রণোয়ন করছি। আগে আড়াইশ তিনশ পাতা হলেও এবার ৫০ থেকে ৬০ পাতায় বাজেট শেষ করবো। ডাইরেক্ট টু দ্যা পয়েন্ট কথা বলবো। আগের মতো ভূমিকা, অবতারণা এসব কিছু থাকবে না। বাজেটে সার, বিদ্যুতে ভর্তুকি থাকবে। কৃষকে আমরা যে ভর্তুকি দেয়, সেটা তেমন কিছু না। এই ভর্তুকি আমরা অব্যাহত রাখবো।
কর দেওয়ার জন্য উৎসাহ দিয়ে তিনি বলেন, আমি এই সেবা পেলাম না, ওই সেবা পেলাম না এসব চিন্তা না করে সামাজিক সেবার কথা চিন্তা করে আপনারা কর দিন। আপনার বাসায় লাইটে সমস্যা হচ্ছে এ জন্য কর দেবেন না বিষয়টি তা নয়। আপনার বাসায় না জ্বললে অন্য কোনো পরিবারের লাইট জ্বলবে। ট্যাক্স দেবেন দেশের মঙ্গলের জন্য। এবারও কিছু শূল্ক যৌক্তিকিকরণ করা হবে। ডিজিটালাইজেশন করবো যাতে করে মুখ দেখাদেখি না হয়। মুখ দেখাদেখি হলেই কেবল টেবিলের নিচ দিয়ে হাত নাড়াচাড়া করে।
উপদেষ্টা বলেন, এডিপি আমরা এখন পর্যালোচনা করছি। মেঘা প্রজেক্ট (প্রকল্প), যেটাকে আমি বলি মনোমেন্ট প্রজেক্ট, এগুলো আমরা বাদ দিয়ে লোকাল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এ ধরনের প্রকল্পে বেশি জোর দেবো। এগুলো আবার একেবারে ছোটও না। এক একটা ৫০০-৬০০ কোটি টাকার। অবকাঠামো, নদী শাসন এ ধরনের বিষয় আছে। এর সঙ্গে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে গুরুত্ব দেয়া হবে। আমরা প্রবদ্ধি ও মহিলাদের ভাতা কিছুটা বাড়াবো। তবে ৪-৫ গুন ভাতা বাড়বে না, এতো সম্পদ আমাদের নেই।
আইএমএফ’র ঋণের বিষয়ে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাহির থেকে ঋণ একেবারে না নেয়াটা ভালো। ঋণ নিয়ে ঘি খাওয়া খারাপ। এটা আমরা দেখছি। তবে বাংলাদেশের ট্যাক্স জিডিপি, আর ঋণ দেখেন তা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। গ্রিকে ১৬০ শতাংশ, আমেরিকায় অনেক বেশি। ওদের ক্যাপাসিটি ভালো। মেইনলি আমরা দেখছি ঋণ ব্যবস্থাপনাটা। আমরা শোধ দিতে পারবো কি না। আমরা ডিফল্টার হয়নি কোনদিন। আইএমএফ’র ঋণ হলো বাজেট সাপোর্ট। প্রজেক্টে অনেক ঋণ আসে। কিন্তু বাজেট সাপোর্ট বা রিজার্ভ কমে গেলো, রেমিট্যান্স কমে গেলো এগুলো তো আমি প্রজেক্ট বেজ ঋণ দিয়ে করতে পারবো না। মেইনলি বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ’র কিছু বাজেট সাপোর্ট লাগে। এ জন্য ঋণ নেই আমরা।
তিনি বলেন, আমরা যদি ঋণ না নিই সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। সেটা বড় চ্যালেঞ্জ, তাৎক্ষণিক তো আমরা পারবে না।
ডলারের দাম কি বাজারের ওপর ছেড়ে দেবেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এটা জুলাইয়ের মধ্যে পারবে কি না বলতে পারছি না। এটা দেখতে হবে। কারণ হঠাৎ করে ছেড়ে দিলে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার মতো হয়ে গেলো তো বিপদ।
ব্যাংকিং খাত নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খারাপ ব্যাংক কিভাবে অবসায়ন হবে সেটা আইনে নির্ধারণ করা হবে। তবে একটা জিনিস আমনতকারীরা সবাই নিসন্দেহে টাকা ফেরত পাবেন।
অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, ভ্যাট কমানোর দরকার। তবে ভ্যাট একক হারে নিয়ে আসতে পারলে তখন চিন্তা ভাবনা করা যাবে। ভ্যাটের একক হার বাস্তবায়ন হলে তখন সুনির্দিষ্ট কিছু খাতে যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসা হবে। তবে হোল্ডিং ট্যাক্স নেয় সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ। ভবিষ্যতে সম্পদ কর চালুর ইঙ্গিত থাকবে এই বাজেটে। একটা সময় পরে আমরা সম্পদ কর বাস্তবায়নে যাব।
অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার বলেন, কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাদ দেয়া। এই কাজটি আমরা করে যাচ্ছি। এডিপি ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা থেকে সংশোধিত বাজেটে ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে। তারপরও অনেক টাকা রয়ে গেছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় নিতে পারছে না। তার কারণ হলো প্রথম থেকেই আমরা অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বাদ দিচ্ছি। ভর্তুকির বিষয়টি বাজেটে বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। আগামী বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও তথ্য প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হবে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে তাদের ব্যয়ের প্রস্তাব চাওয়া হয়েছে। সবার মতামত নিয়েই আমারা বাজেট প্রণয়ন করবো।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৫,২০২৫
জিসিজি/এমএম