সংসদ ভবন থেকে: সংসদে অসংসদীয় ও অশালীন বক্তব্য প্রদানের দায়ে সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্যের বেতন থেকে ৩০ হাজার টাকা কেটে নেওয়া দাবি জানিয়েছেন সরকার দলীয় সংসদ সদস্য জুনায়েদ আহমেদ পলক।
এছাড়া সর্বপ্রথমে ব্যক্তিগত কৈফিয়তে দাঁড়িয়ে জাতীয় সংসদে অশ্লীল বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান বিজেপি’র সংসদ সদস্য আন্দালিব রহমান পার্থ।
যদি কেউ সংসদে এ জাতীয় বক্তব্য প্রদান করে তবে স্পিকারকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও আহ্বান জানান পার্থ।
সোমবার সকালে জাতীয় সংসদের ১৮ অধিবেশনের শুরুতে ২৭৪ বিধিতে ব্যক্তিগত কৈফিয়তে দাঁড়িয়ে আন্দালিব রহমান পার্থ সংসদ সদস্যদের এ আহ্বান জানান।
পার্থ বলেন, “আওয়ামী লীগের কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেমন একটি স্তম্ভ তেমনি আমাদের বিরোধী দলের কাছে বেগম খালেদা জিয়াও একটি স্তম্ভ। যখন এই দুই নেতার বিরুদ্ধে তাদের পরিবার নিয়ে বক্তব্য দেওয়া হয় তখন আমরা সংসদ সদস্যরা সংসদের কার্যকলাপ ভুলে যাই। ”
ব্যক্তিগত কৈফিয়তে পার্থ বলেন, “বাজেট আলোচনায় আমার বক্তৃতার পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য আমার পারিবারিক বিষয় নিয়ে এমন সব বক্তৃতা দিয়েছেন তার পুঙ্খানুপুঙ্খ জবাব দেওয়া আমার সামাজিক অবস্থান, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও পারিবারিক ঐতিহ্য অনুমতি দেয় না। তাদের বক্তৃতা শুনে মনে হলো আমার মৃত বাবার অপরাধ তিনি আমাকে জন্ম দিয়েছেন, আর আমার অপরাধ আমি বস্তুনিষ্ঠ ভাবে সরকারের সমালোচনা করেছি। ”
সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের প্রশংসা করে পার্থ বলেন, “আমার বক্তৃতার পরিপ্রেক্ষিত সিনিয়র পার্লামেন্টেরিয়ান সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত যেভাবে আমাকে উপদেশ দিয়েছেন আমি বয়সে তরুণ একজন সংসদ সদস্য হিসেবে তা আন্তরিকভাবে গ্রহণ করেছি। আর যখন তিনি বলেছেন, তিনি আমার বাবার সঙ্গে রাজনীতি করেছেন, তখন আর আমার কিছু বলার নেই। তখনই তিনি আমার মুরব্বি হয়ে গেছেন। ”
এদিকে ব্যক্তিগত কৈফিয়তে দাঁড়িয়ে জোনায়েদ আহমেদ পলক বলেন, “সম্প্রতি সংসদ সদস্যদের অশালীন ও অসংসদীয় বক্তব্যে সংসদের পবিত্রতা নষ্ট হচ্ছে। মানুষ এখন আমাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। দেশের কোমলমতি শিশুরা আমাদের এসব ভাষা থেকে কি শিখছে তা আমাদের ভাবা উচিত। ”
তিনি বলেন, “ফেসবুক খুললেই দেখি আই হেইট পলিটিক্স, আই হেইট পলিটিশিয়ান। জাতীয় সংসদে অশ্লীল বক্তব্য জাতি আর দেখতে চায়না। ”
জুনায়েদ আহমেদ পলক বলেন, “গত কয়েক দিন জাতীয় সংসদে যে ভাষায় কথা বলা হচ্ছে তা প্রত্যেক সংসদ সদস্যের জন্য অপমানজনক। ”
স্পিকারকে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “সংসদে কথা বলার জন্য প্রতি মিনিটে খরচ হয় ৩০ হাজার টাকা। এই টাকা খরচ করে আমরা আমাদের মান সম্মান খোয়ানোর জন্য আসিনি। মাত্র কয়েকজন সংসদ সদস্যের জন্য পুরো সংসদের পবিত্রতা নষ্ট হতে দেওয়া য়ায় না। ৩৫০ জন সংসদ সদস্যের অপমান মেনে নেওয়া যায়না। ”
পলক অশালীন কথা বন্ধে একটি অশালীন শব্দের জন্য সংসদ সদস্যের বেতন থেকে ৩০ হাজার টাকা কেটে নেওয়ার দাবি জানান। প্রয়োজনে সংসদ সদস্য পদ থেকে বরখাস্ত করারও দাবি জানান তিনি।
জুনায়েদ বলেন, “অসংসদীয় বক্তব্যের মাত্রা এমন পর্যায়ে গেছে যে বঙ্গবন্ধু ও তার বাবা-মাকেও বাদ দিয়ে কথা বলা হচ্ছে না। আর বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের এসব অশালীন বক্তব্য আমাদের দেশে সংবাদপত্রগুলো প্রথম ও শেষ পাতায় বড় বড় করে ছেপে তাদের উৎসাহ দিচ্ছেন। আমি সাংবাদিকদের বলবো এসব অশালীন ও অসংসদীয় বক্তব্য আপনারা পত্রিকায় ছাপবেন না। ”
পলক বলেন, “সংসদে সরকার দলের সংসদ সদস্যরা বিরোধী দলের অশালীন বক্তৃতার জবাব দিতে গিয়ে বাজেট নিয়ে আলোচনা করতে পারছে না। ”
সম্প্রতি জাতীয় সংসদের ১৮তম অধিবেশনের শুরু থেকে সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের অশালীন বক্তব্যের ফলে সংসদ প্রতিদিনই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। সর্বশেষ রোববার বিএনপির সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য রেহানা আক্তার রানু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম ও বাবা-মা নিয়ে কটুক্তি করে বক্তৃতা দেন। রেহানা আক্তারের বক্তৃতাকালে স্পিকার তাকে বার বার সতর্ক করে মোট ৬ বার মাইক বন্ধ করে দেন।
রানুর বক্তৃতার পরপরই সরকার দলের সংরক্ষিত সংসদ সদস্য ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পি বিরোধী দল ও দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের পাল্টা আক্রমণ করে বক্তৃতা দেন। একই সঙ্গে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর চারিত্রিক বিষয় নিয়ে কটুক্তি করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৫ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০১৩
এসএম/এসএমএ/জেডএম/সম্পাদনা: মীর সানজিদা আলম, নিউজরুম এডিটর