জামালপুরঃ জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের ডাংধরা ইউনিয়নের পাথরেরচর গ্রামের ৫০টি পরিবার এখন ঘর হারা। ভারতীয় বন্য হাতির আতংকে তারা বসতভিটা ছেড়েছেন।
হাতির আক্রমণে শত শত একর জমির ধান, গম, সরিষা ধ্বংস হয়েছে। আতংকে দিন কাটাচ্ছে ইউনিয়নের ৩টি গ্রামের ৫ হাজার মানুষ।
শুধু পাথরের চর গ্রামেই গত এক বছরে শতাধিকবার হাতি আক্রমণ করে। এতে ঈমান আলী নামে ১ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু ও ২৩ গ্রামবাসী আহত হয়। পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে ৪ জনকে।
নিজের জমি ও ভিটা ছেড়ে প্রায় অর্ধশত পরিবার এখন অন্যের বাড়িতে আশ্রিত হয়েছে। এদিকে হাতির অনুপ্রবেশ বন্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা।
গত ৬ মাসে আব্দুর রহিম, আব্দুল জলিল, বদিউজ্জামান, শান্তিমন্ডল, আতাব আলী, সোলায়মান, মনির হোসেন, অহিদ মিয়া, ওসমানগণি, সামিউল হক, কেসমত আলীসহ ৫০টি পরিবারের ঘর ভেঙ্গে দিয়েছে বন্য হাতির দল। তারা নিজ বাড়িঘর ছেড়ে রাস্তার পার্শ্বে, সরকারি বিদ্যালয় মাঠে, নিকটাত্মীয়র বাড়িতে ছোট ছোট ঘর তৈরি করে বসবাস করছেন তারা।
ষাটার্ধ্বো জরিনা বেগম বাংলানিউজকে জানান, আজ আমরা নিজ ভিটি ছেড়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। ২ বিঘা জমি আছে কিন্তু গত ৩ বছর যাবৎ ওই জমি থেকে কোনো কিছুই ঘরে তুলতে পারিনি।
অথচ ওই জমি দিয়ে ৪ সদস্যের পরিবারটি স্বচ্ছলভাবে চলে যেত কিন্তু হাতির পায়ের নিচে সমস্ত সুখ শান্তি ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন আমার শুধু ভিটি আছে ঘর নেই।
একই অভিযোগ আকলিমা বেগমের। ৪ বিঘা জমি নিয়ে অত্যন্ত স্বচ্ছল পরিবারটি এখন অন্যের দয়ায় বেঁচে আছে। জমি থাকার পরও অন্যের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে হয়।
হাতির আক্রমণে বাড়ি ঘর হারিয়েছেন ৬ মাস আগে। বিবাহযোগ্য মেয়েকে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাতে হচ্ছে। এ অবস্থায় মেয়েকেও বিবাহ দিতে পারছেন না।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ ফটিক বাংলানিউজকে জানান, ডাংধরা ইউনিয়নের মাখনেরচর, কামারীকান্দা ও পাথরেরচর ৩টি গ্রামে প্রতিনিয়তই ভারতীয় বন্য হাতি তাণ্ডব চালায়। এ বছর ডিসেম্বর মাসেই ১৩ বার তাণ্ডব চালিয়ে ফসলসহ ঘরবাড়ির অনেক ক্ষতি করেছে। ৩টি গ্রামের প্রায় ৫ হাজার মানুষ হাতি আতংকে দিন কাটাচ্ছে। বারবার প্রশাসনকে বলা পরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, আমরা ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে সহায্য করার জন্য একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। খুব দ্রুতই ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া স্থায়ী সমধানের জন্য ওই তিনটি গ্রামের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জামালপুর জেলা প্রশাসক মোঃ শাহাবুদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, হাতি অনুপ্রবেশ বন্ধে ইত্যিমধ্যেই সরকারের উচ্চপর্যায়ে জানানো হয়েছে। এছাড়া ওই তিনটি গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগের মধ্যে পযাপ্ত লাইটিং ব্যবস্থার জন্য পল্লীবিদ্যুৎকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৪