ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ফিরে দেখা ২০১৪

সিলেটবাসী হারিয়েছে অনেক চিরচেনা মুখ

নাসির উদ্দিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৪
সিলেটবাসী হারিয়েছে অনেক চিরচেনা মুখ

সিলেট: আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা। দরজায় কড়া নাড়ছে ২০১৫ সাল।

নব উদ্যমে শুরু হবে নতুন বছর। কালের পরিক্রমায় হারিয়ে যাচ্ছে ৩৬৫ দিনের আরো একটি বছর ২০১৪।
 
দিন যায়, বছর যায়। সময়ের বিবর্তনে হারায় অনেক কিছু। তেমনি চলে যাওয়া বছরে সিলেটবাসী হারিয়েছে অনেক গুণীজন, চিরচেনা মুখ; যারা তাদের জীবনে স্বমহিমায় ছিলেন উজ্জ্বল। প্রস্থানের পরও তাদের স্মরণ করবে সিলেটবাসী।

বছরের বিদায়ীলগ্নে এসে এমনই এক মানুষকে হারালো সিলেটবাসী। তিনি জাতির বীরসন্তান মুক্তিযোদ্ধা দিলীপ কুমার সিংহ (৬৩)। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টায় শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

স্থানীয় চালীবন্দর মহাশশ্মানঘাটে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার শেষ কৃত্যানুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা দিলীপ কুমার সিংহ সিলেটের প্রথম কংফু ক্যারাতের প্রশিক্ষক।

এর আগে রোববার (২৮ ডিসেম্বর) মারা যান মানুষ গড়ার কারিগর বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর আব্দুল মতিন (৭৪); যিনি সবার কাছে ‘মতিন স্যার’ নামে পরিচিত।

তিনি ছিলেন সিলেট ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ও চেয়ারম্যান। এছাড়াও সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ছিলেন তিনি।

১৯৭০ সালে বরিশাল বিএম কলেজের প্রভাষক হিসেবে অধ্যাপনা শুরু করেন প্রফেসর আব্দুল মতিন। জীবনের দীর্ঘকাল বিভিন্ন সরকারি কলেজে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে গেছেন। রেখে গেছেন নিজ হাতেগড়া সিলেট ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ।

১৬ ডিসেম্বর মারা যান সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজিবুর রহমান নীরু (৬৭)। সিলেট সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত হওয়ার আগে তিনি তিনবার ওয়ার্ড কমিশনার নির্বাচিত হন।
 
২৯ আগস্ট মারা যান একুশে পদকপ্রাপ্ত লোকসঙ্গীতের দিশারী পণ্ডিত রামকানাই দাস। লোকগীতির জন্য তিনি একুশে পদকে ভূষিত হয়েছিলেন।

এর আগে ২৭ আগস্ট পৃথিবীর মোহ ত্যাগ করেন সিলেটের সবার প্রিয় ‘মাসিমা’ খ্যাত লোকসঙ্গীত শিল্পী চন্দ্রাবতী রায় বর্মণ (৮৫)।

তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারের নিয়মিত শিল্পী ছিলেন। দেশের প্রবীণ এই লোকসঙ্গীত শিল্পী ১৯৬৯ সালে বেতারের শিল্পী হিসেবে যোগ দেন।

মৃত্যুর কিছুদিন আগে ১২ আগস্ট বাংলাদেশ বেতার সিলেটে তার দুটি গান রেকর্ড করা হয়। ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে বোরখা পরে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের গ্রেনেড সরবরাহ করতেন। শত্রুর ওপর গ্রেনেড ছুড়ে মেরেছেন। সম্মুখযুদ্ধে শত্রুকে লক্ষ করে ছুড়েছেন রাইফেলের গুলিও।

মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে সিলেটের সেই অন্যতম নারী মুক্তিযোদ্ধা ছায়রুন বিবি (৭৫) মারা যান বছরের আগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে।

সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলার ভাদেশ্বর ইউনিয়নের নালীউরি গ্রামের বাসিন্দা ছায়ারুন বিবির স্বামী প্রয়াত ফজির উদ্দিন মনাইও একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।

যুদ্ধকালীন সময়ে ফজির উদ্দিন-ছায়ারুন দম্পতির বাড়িতেই ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প। এই দম্পতি শুধু যুদ্ধই করেননি, যুদ্ধ চলাকালে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় নিজেদের জমি পর্যন্ত বিক্রি করেছিলেন।

মুক্তিযোদ্ধা ছায়ারুন বোরখা পরে মুক্তিযোদ্ধাদের গ্রেনেড ও অস্ত্র সরবরাহের পাশাপাশি স্বামীর সঙ্গে নিজেও অস্ত্র হাতে পাকিস্তানি হানাদারদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধেও অংশ নেন।

৩০ সেপ্টেম্বর মরণব্যাধি ক্যান্সারে অকালেই মৃত্যুবরণ করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী তাজকিয়া জান্নাত চৌধুরী (২৩)। তাকে সুস্থ করতে হাত বাড়িয়েছিলেন বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষ।

এ বছরের ২০ জুলাই দুরারোগ্য ব্যাধিতে মারা যান সিলেটের জকিগঞ্জ পৌরসভার জননন্দিত মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন সোনাউল্লাহ (৭৫)। উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তার অবদান ছিল অনস্বীকার্য।

এভাবেই চলে যাচ্ছেন অনেকেই। কালের অমোঘ নিয়মে সবাইকেই চলে যেতে হয়। চলে যাওয়াই যেন মানুষের চূড়ান্ত গন্তব্য। কিন্তু সে যাওয়াটা বড় কষ্টের, খুবই অসহনীয়!

বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।