রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ঘুরে: উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ যাত্রাপুর গরুর হাটে ভারতীয় গরু সংখ্যার দিক দিয়ে সবসময় এগিয়ে থাকে। বিশেষ করে ঈদুল আজহা উপলক্ষে ভারতীয় গরুর আধিপত্যে দেশীয় গরুর বাজার ফিকে হয়ে যায়।
কুড়িগ্রামের যাত্রাপুর হাটে ছোট, মাঝারি, বড়সহ সব ধরনের দেশীয় গরুর যে উপস্থিতি রয়েছে, সে তুলনায় ভারতীয় গরুর উপস্থিতি অনেকাংশেই কম। তবে ঈদের ঠিক আগে ভারতীয় গরুর উপস্থিতি আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) যাত্রাপুর গরু-ছাগলের হাটে বাংলানিউজের সরেজমিনে ওঠে এসেছে এসব চিত্র।
তবে গরুর দাম বেশ চড়া বলে জানালেন ক্রেতা ও বিক্রেতারা। আর ভারতীয় গরুর উপস্থিতি কম থাকায় দেশি খামারিরা সন্তুষ্ট প্রকাশ করলেন।
হাট কমিটির বরাত দিয়ে জানানো হয়, সীমান্ত এলাকা হওয়ায় এ হাটে ভারতের গরুর সমাগম সবসময়ই বেশি হয়। কিন্তু গত দুই-তিন মাস ধরে অনেক কমে গেছে।
![](files/Cow_01_132998702.jpg)
দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ক্রেতারা এখানে ভারতীয় গরু কিনতে আসেন। তবে এখন পর্যন্ত ভারতীয় গরু সেভাবে দেখা যাচ্ছে না।
মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, হাটের বিভিন্ন প্রান্তে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নিয়ে আসা গরুগুলো সারিবদ্ধভাবে সাজাচ্ছেন খামারিরা। অনেকেই হাট উপলক্ষে আগেই গরু এনে ঘরে রেখে দিয়েছেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ক্রেতা, বেপারীদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো।
হাটে মাঝারি গরুর সংখ্যাই বেশি রয়েছে। ক্রেতারা যাচাই-বাছাই করে কেনার জন্য বিক্রেতাদের সঙ্গে দরকষাকষি করছেন। কেউ কেউ মনের মতো বড় গরু না পেয়ে চলেও যাচ্ছেন।
মাংস কতটুকু হবে সেই ধারণার উপর ভিত্তি করে গরুর দাম বলছেন ক্রেতারা। আর বিক্রেতারা গরুর বিভিন্ন গুণাগুণ তুলে ধরছেন ক্রেতাদের সামনে।
সিরাজগঞ্জ থেকে চারটি গরু নিয়ে এসেছেন নাজিম উদ্দিন। তিনি জানান, এ হাটে গত বছরও গরু বিক্রি করে লাভ করেছিলেন তিনি। তাই এ বছরও গরু নিয়ে এসেছেন। এবার ভারতের গরু কম আসার কারণে ভালো দামও পাবেন বলে আশা তার। তিনি মাঝারি ধরনের চারটি গরুর দাম চাইছেন দুই লাখ টাকা।
বৃহৎ এ গরুর হাট ঘুরে দেখা যায়, ছোট সাইজের গরু ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা, মাঝারি সাইজের গরু ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা ও বড় সাইজের গরু ৫০ থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হচ্ছে।
আর মাংস হিসাব করে মণ প্রতি ১০ থেকে ১৩ হাজার টাকা পড়ছে বলে ধারণা করছেন ক্রেতা ও বিক্রেতারা। তবে গরুর গায়ের রঙ, আকার ও আকৃতি ভেদে অনেক সময় দামের বেশ পার্থক্যও দেখা গেলো। বিশেষ করে লাল ও কালো রঙের গরুর দাম তুলনামূলকভাবে একটু বেশি।
![](files/Cow_02_940062031.jpg)
ছাগলের চাহিদাও বেশ রয়েছে বলে জানালেন সংশ্লিষ্টরা। গত বছরের চেয়ে কমপক্ষে এক থেকে দুই হাজার টাকা বেশি দামে প্রতিটি ছাগল বিক্রি হচ্ছে বলে জানালেন ক্রেতারা।
আবদুস সামাদসহ কয়েকজন বেপারি জানান, দেশি গরুর (তিন থেকে সাড়ে তিন মণ ওজন) পড়ছে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। তবে গত বছরের চেয়ে একটু বেশি দামেই গরু বিক্রি হচ্ছে।
যাত্রাপুর হাট কমিটির সভাপতি ও যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর গফুর বাংলানিউজকে জানান, গত দশদিন ধরে প্রতিদিনই হাট বসছে। ভারতীয় গরুর সরবরাহ খুবই কম। একটি নৌকায় ২০ থেকে ৩০টি গরু দেখলে মনে হয় অনেক গরু আসছে, কিন্তু হিসাব করে দেখা যায়, সংখ্যায় অনেক কম।
বলা যায়, গত বছরের তুলনায় এবারে ভারতীয় গরুর সংখ্যা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।
কুড়িগ্রাম জেলা শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরত্বে এ হাট অবস্থিত। গত কয়েক দিন ধরে ঈদুল আজহা উপলক্ষে সপ্তাহের প্রায় প্রতিদিনই গরু ও ছাগলের হাট বসছে। তবে মূল হাট বসে মঙ্গল ও শনিবার।
বাংলাদেশ সময়: ০০৩৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৫
একে/এসএস
** কোরবানিতে প্রস্তুত হচ্ছে ৯৬ লাখ পশু