ঢাকা: রাজধানীর এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মো. রিপন প্রামাণিক। স্বজনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগ করে নিতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে যাবেন গ্রামের বাড়ি ঈশ্বরদীতে।
সে কারণে সরকারি ছুটির দিন শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে ঘুম ভাঙার পর রিপন চলে আসেন কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে। উদ্দেশ্যে ২৩ সেপ্টেম্বরের ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করা! স্টেশনে পৌঁছে দেখেন হাজারও টিকিট প্রত্যাশীদের দীর্ঘ লাইন। সেই লাইন কাউন্টারের সামনে থেকে বেঁকে গেছে মূল সড়ক পর্যন্ত।
সকাল ৬টায় ওই বাঁকা লাইনের পেছনে দাঁড়িয়ে যান তিনি। ৯টা থেকে ২৩ সেপ্টেম্বরের আগাম টিকিট দেওয়া শুরু হয়। বেলা বাড়লেও যেন ছোট হচ্ছিল না দীর্ঘ লাইন। অবশেষে দুপুর ২টায় কাউন্টার থেকে চতুর্থদিনের সব টিকিট বিক্রি শেষ হয়ে গেছে বলে ঘোষণা করা হয়।
টানা আট ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিটের টিকিটিও পাননি রিপন, তবুও হাল ছাড়েননি। এবার যেন তিনি পণ করে বসলেন, ঈদের আগের দিন ২৪ সেপ্টেম্বরের টিকিটের জন্য! শনিবার সকাল থেকে দেওয়া হবে সেই টিকিট।
এবার শুধু তিনি নিজেই নন, যারা তার আশেপাশে থেকেও টিকিট পাননি তাদের প্রত্যেকের নাম ও মোবাইল ফোন নম্বর একটি খাতায় লেখা শুরু করলেন তিনি।
এ সময় তাকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাওয়ার জন্য টিকিট কাউন্টারের সামনে মানুষের ভিড় জমে যায়। প্রত্যেকে নাম লেখাতে থাকেন। ১০ মিনিটে প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ টিকিটের জন্য নাম লিপিবদ্ধও করেন।
জানতে চাইলে রিপন প্রমাণিক বাংলানিউজকে বলেন, যেভাবেই হোক ট্রেনের টিকিট তার পেতেই হবে। ট্রেন ছাড়া তার স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েরা যেতে পারবেন না। শত কষ্ট সহ্য করে শনিবার টিকিট না পাওয়া পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে থাকবেন।
যারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা, রাত-দিন সেখানে অবস্থান করবেন, তারা সবাই যেন টিকিট পান, সেই নিশ্চয়তার জন্য টিকিট প্রত্যাশীদের ক্রমানুসারে তালিকা করছেন, জানান তিনি।
২৩ সেপ্টেম্বরের আগাম টিকিটের জন্য রিপনের আগে ও পরে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন এমন আরও হাজারো মানুষ। তাদের মধ্যে একজন মো. আলমগীর, তিনি রাজশাহীর টিকিট সংগ্রহ করতে এসেছেন।
আলমগীর জানান, শুক্রবার সকাল ৭টায় লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম, কিন্তু দুর্ভাগ্য, টিকিট শেষ হয়ে গেছে। এখন পরের দিনের টিকিটের জন্য লাইনে থাকতে নাম লিখিয়েছি।
রাজধানীর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সজীব আহমেদও সকালে এসেছেন স্টেশনে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে বুঝে সঙ্গে প্লাস্টিকের একটি চেয়ারও নিয়ে এসেছেন তিনি।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ২৩ সেপ্টেম্বরের টিকিট পাইনি, এখন দিনের বাকি সময় ও সারা রাত কাউন্টারে এই চেয়ারে বসে থাকতে হবে। যেন শনিবার সকালে ঈদের আগের দিন ২৪ সেপ্টেম্বরের টিকিট পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে তিনি লাইনের সিরিয়াল ধরে রাখতে নাম লিখিয়েছেন।
তিনি তার অসুস্থ বাবাকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামের বাড়ি রাজশাহীতে যাবেন, সে কারণে টিকিটের জন্য এমন ত্যাগ শিকার করছেন বলেও জানালেন সজিব আহমেদ।
এদিকে কমলাপুর স্টেশনের ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী সাংবাদিকদের বলেন, ঈদ উপলক্ষে যাত্রীদের সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রেলের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী ছাড়াও পুলিশ, ৠাব, আর্ম ব্যাটালিয়ান, আনসার ও গোয়েন্দা বিভাগের একাধিক শাখার নিরাপত্তাকর্মীরা দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে স্টেশনের সার্বিক চিত্র পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ০০৫৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৫
টিএইচ/এটি