ঢাকা: বিলবোর্ড, কারো কাছে রুটি-রুজির মাধ্যম, কারো কাছে মানব ঘাতক! কেউ এটি অপসারণের দাবি তুলছেন, কেউবা আবার টাঙিয়ে রাখতে চাচ্ছেন বিলবোর্ড।
সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিলবোর্ড বর্তমানে একটা শিল্পে রূপ নিয়েছে, এখনই অপসারণ না করে, ধাপে ধাপে অপসারণ করা যেতে পারে।
এছাড়া নতুন নীতিমালা করে শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে নিয়মতান্ত্রিক ব্যবসার কথাও বলেছেন তারা।
তবে নগরবাসী বলছেন, যত্রতত্র বিলবোর্ডের কারণে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনাও।
আর এসব ‘ঘাতক’ বিলবোর্ড সরাতে থেমে থেমে উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রেখেছে সিটি করপোরেশন।
তবে নগরবাসী বলছেন, বিভিন্ন সময় অভিযান চালানো হলেও এখনও পুরোপুরি বিলবোর্ড সরানো হচ্ছে না। কিন্তু কবে সরবে এসব অবৈধ বিলবোর্ড।
বিলবোর্ড স্থাপনের অনুমতি দানকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জুন মাসে সব বৈধ বিলবোর্ডের মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে।
এরপর আর কোনো বিলবোর্ড স্থাপনের চুক্তি নবায়ন করা হয়নি। এরই মধ্যে বিভিন্ন ব্যবসায়ীকে বিলবোর্ড অপসারণের নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
সূত্র বলছে, ব্যবসায়ীদের অনুরোধে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। সেপ্টেম্বর থেকে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে বৈধ/অবৈধ বিলবোর্ড অপসারণের কাজ শুরু হয়েছে। থেমে থেমে এখনও এ কাজ চলছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বাংলানিউজকে বলেন, নিয়ম-কানুন ছাড়াই হার-হামেশা নতুন নতুন বিলবোর্ড তৈরি হচ্ছে। বিলবোর্ডের কারণে মানুষ মরার ঘটনাও ঘটছে।
‘নগরবাসীর নিরাপত্তা, নগরীর পরিবেশ ও সৌন্দর্য বিবেচনায় নতুন নীতিমালা হবে। আমরা চাই, নিয়মতান্ত্রিকভাবে শৃঙ্খলার মধ্যে বৈধ ব্যবসা হোক,’ যোগ করেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে বিলবোর্ড নীতিমালার খসড়া তৈরি করতে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ওই কমিটি নীতিমালার খসড়া তৈরি করতে পারেনি।
সওজের প্রধান প্রকৌশলী ফিরোজ ইকবাল বাংলানিউজকে বলেন, বিলবোর্ড নীতিমালা ভূমি নীতিমালার সঙ্গে সম্পৃক্ত। ভূমি নীতিমালা না হওয়ায় বিলবোর্ড নীতিমালাও করা যায়নি।
এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপক রিপন কুমার সাহা জানান, সব বিলবোর্ড অপসারণের পর নতুন বিলবোর্ড স্থাপনের অনুমোদন দেওয়া হবে। যারা অনুমোদন পাবেন, তাদেরও একটি নির্দিষ্ট নীতিমালা মেনে চলতে হবে।
এ জন্য বিশিষ্ট নাগরিকদের সমন্বয়ে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে বলে জানায় সূত্র।
ওই কমিটিতে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সাইয়ীদ, স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, ইকবাল হাবীব ছাড়াও বিলবোর্ড ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিরাও রয়েছেন।
এ কমিটি কোন রাস্তায় কতগুলো বিলবোর্ড থাকবে, কীভাবে থাকবে-এসব বিষয়ে একটি নীতিমালা তৈরি করে দেবে।
এদিকে বিলবোর্ড অপসারণের অভিযানে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যাবসায়ীরা। এর প্রতিবাদে মানববন্ধন, স্মারকলিপি দেওয়াসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন তারা।
ব্যবসায়ীদের দাবি, ৪৫ বছর ধরে নির্ধারিত কর পরিশোধ করে নিয়মতান্ত্রিকভাবে এ ব্যবসা চালিয়ে আসছেন তারা। কোটি কোটি টাকা বিনোয়োগ করে এই শিল্পে ব্যবসায়ী, শ্রমিক, কর্মচারী ও তাদের পরিবার পরিজনসহ লাখো মানুষ জড়িত।
বিকল্প ব্যবস্থা না করে এবং কোনো আলাপ-আলোচনা ছাড়াই বিলবোর্ড অপসারণ করলে মুখ তুবড়ে পড়বেন সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলছেন, সরকারি কাজের যে দীর্ঘসূত্রিতা তাতে ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি আরও বাড়ছে। ২০১৩ সালে যে নীতিমালা হওয়ার কথা এখনও হয় নাই। আর কখন হবে? তাও বলা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৫
এসইউজে/এমএ