ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩০ মাঘ ১৪৩১, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

পৌরসভা নির্বাচন

অবসর নয়, অপসারণে প্রার্থী হতে বাধা

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৫
অবসর নয়, অপসারণে প্রার্থী হতে বাধা

ঢাকা: শিগগিরি সারাদেশে অনুষ্ঠিত হবে পৌরসভাগুলোর সাধারণ নির্বাচন। যে কারণে প্রার্থীর যোগ্যতা-অযোগ্যার বিষয়ে খোঁজ-খবর নিতে শুরু করেছেন অনেক সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীই।

আর অবসর নেওয়ার পরপরই প্রার্থী হতে পারবেন কিনা, এটাই তাদের প্রথম প্রশ্ন।

শুধু সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীই নন, পৌরসভা নির্বাচন আইনে বিভিন্ন পেশার মানুষের জন্যই বেশ কিছু যোগ্যতা-অযোগ্যতার কথা বলা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জান‍ায়, আগামী ডিসেম্বর মাসে সারাদেশের ২৪৫টি পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ইতোমধ্যে নির্বাচনী ম্যানুয়াল ছাপানোসহ বেশকিছু কাজও গুছিয়ে রেখেছে সংস্থাটি।

পৌরসভা আইন-২০০৯ এর ১৯ ধারায় মেয়ব বা কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হওয়ার জন্য চারটি যোগ্যতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথমেই আগ্রহী ব্যক্তিকে বাংলাদেশি নাগরিক হতে হবে এবং বয়স হবে ন্যূনতম ২৫ বছর। মেয়র পদের জন্য সংশ্লিষ্ট পৌরসভার যেকোনো ওয়ার্ডের ভোটার হওয়া বাধ্যতামূলক। আর কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হতে হলে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ভোটার হতে হবে।

এদিকে সুনির্দিষ্টভাবে বেশকিছু অযোগ্যতাও আইনে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, যদি কেউ বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করেন বা হারান, কোনো উপযুক্ত আদালত কর্তৃক অপ্রকৃতিস্থ বলে ঘোষিত হন ও দেউলিয়া ঘোষিত হন এবং দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার পর দায় থেকে অব্যহতি লাভ না করে থাকেন, তবে তিনি মেয়র বা কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য বিবেচিত হবেন।

এছাড়া যদি কোনো ব্যক্তি কোনো ফৌজদারী বা নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং মুক্তি পাওয়ার পরে যদি পাঁচ বছর সময় অতিবাহিত না হয় তিনি অযোগ্য বিবেচিত হবেন।

অযোগত্যার বিধান অনুসারে কেউ যদি প্রজাতন্ত্রের বা পৌরসভার অথবা অন্য কোনো স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কোনো লাভজনক পদে সার্বক্ষণিক অধিষ্ঠিত থাকেন তিনিও পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।

আবার বিদেশি কোনো রাষ্ট্র থেকে অনুদান বা তহবিল গ্রহণ করে এমন বেসরকারি সংস্থার প্রধান কার্যনির্বাহী পদে থেকে পদত্যাগ বা অবসর গ্রহণ বা পদচ্যুতির পর এক বছর অতিবাহিত না হয় তাহলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা হারাবেন।

এদিকে সরকারি বা আধা সরকারি দফতর, কোনো সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, সমবায় সমিতি বা প্রতিরক্ষা কর্ম বিভাগের চাকরি থেকে নৈতিক স্খলন, দুর্নীতি, অসদাচরণ ইত্যাদি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে চাকরিচ্যুত, অপসারিত হলে বা বাধ্যতামূলক অবসরপ্রাপ্ত হওয়ার পরে পাঁচ বছর অতিবাহিত না হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য বিবেচিত হবেন।

আইনে আরও বলা হয়েছে, কোনো সমবায় সমিতি এবং সরকারের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি ব্যতিত সংশ্নিষ্ট পৌর এলাকায় সরকারকে পণ্য সরবরাহ করা, সরকার কর্তৃক গৃহীত কোনো চুক্তির বাস্তবায়ন, সেবা  কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য কোনো ব্যক্তি তার নিজের নামে বা তার ট্রাস্টি হিসেবে কোনো ব্যক্তি ও ব্যক্তিবর্গের নামে কিংবা তার সুবিধার্থে ও তার উপলক্ষে কোনো হিন্দু যৌথ পরিবারের সদস্য হিসেবে তার কোনো অংশ বা স্বার্থ আছে এমন চুক্তি করেন, তবে তিনি প্রার্থী হতে পারবেন না।

এছাড়া কারও পরিবারের কোনো সংদস্য যদি সংশ্লিষ্ট পৌরসভার কার্য সম্পাদনে বা মালামাল সরবরহের জন্য ঠিকাদার নিযুক্ত হন, তার জন্য নিযুক্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অংশীদার হন কিংবা পৌরসভার কোনো বিষয়ে তার কোনো প্রকার আর্থিক স্বার্থ থাকে, সেক্ষেত্রে ব্যক্তি নির্বাচনের অযোগ্য হবেন।

অন্যদিকে মনোনয়পত্র জমা দেওয়ার দিনও কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের থেকে গৃহীত ঋণ মেয়াদত্তীর্ণ অবস্থায় অনাদায়ী রাখলে নির্বাচন করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে গৃহনির্মাণ ও ক্ষুদ্র কৃষি ঋণ অন্তর্ভ‍ুক্ত হবে না।

আবার এমন কোনো কোম্পানির পরিচালক বা ফার্মের অংশীদার, যারা কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে গৃহীত কোনো ঋণ বা তার কোনো কিস্তি মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার তারিখে খেলাপি রাখেন তবে সেই ব্যক্তিও নির্বাচনের অযোগ্য হিসেবে গণ্য হবেন।

পৌরসভা থেকে গৃহীত কোনো ঋণ অনাদায়ী হলে, দায়কৃত অর্থ পৌরসভায় পরিশোধ না করলে, পৌরসভার তহবিল তসরুফের কারণে দণ্ডপ্রাপ্ত হলে বা অন্য কোনো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান বা জাতীয় সংসদের সদস্য হলেও পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া যাবে না।

অন্যদিকে দণ্ডবিধির ১৮৯, ১৯২, ২১৩, ৩৩২, ৩৩৩ ও ৩৫৩ ধারার অধীনে নির্বাচনের পাঁচ বছর আগের যেকোনো সময়ে কোনো ব্যক্তি সাজাপ্রাপ্ত হলে বা আদালত ঘোষিত ফেরারি আসামি হলে এবং কোনো আদালত বা ট্রাইব্যুনাল দ্বারা যুদ্ধাপরাধী হিসেবে দোষী সাব্যস্ত হলে তিনিও নির্বাচনের যোগ্যতা হারাবেন।

এর আগে ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে দেশের পৌরসভাগুলোর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। আইন অনুযায়ী, নির্বাচিত পৌরসভার মেয়াদ হয় প্রথম সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর। আর নির্বাচন করতে হয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের নব্বই দিনের মধ্যে। ২০১১ সালে নির্বাচনের পর পৌরসভাগুলোর প্রথম সভা হয়েছিলো একই বছর ফেব্রুয়ারি মাসে। সে মোতাবেক আগামী ডিসেম্বর থেকে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই নির্বাচন কমিশনকে দেশের ২৪৫টি পৌরসভায় নির্বাচন করতে হবে।

এ বিষয়ে ইসির জনসংযোগ পরিচালক এসএম আসাদুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, ইসির ওয়েব সাইটেই (www.ec.org.bd) আইন দেওয়া আছে। যে কেউ ইচ্ছা করলেই আইনটি সংগ্রহ করে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা-অযোগ্যতাসহ অন্যান্য নিয়ম কানুন জেনে নিতে পারেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৫
ইইউডি/এটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।