ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩০ মাঘ ১৪৩১, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

ট্রেনের টিকিট বিক্রি

পদে পদে ভোগান্তি, দুর্ভোগ

আদিত্য আরাফাত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৫
পদে পদে ভোগান্তি, দুর্ভোগ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কমলাপুর স্টেশন থেকে: ২৪ সেপ্টেম্বরের মহানগর প্রভাতীর টিকিটের জন্য কমলাপুর রেলস্টেশনে এসেছেন শামীমা আক্তার। স্বামী ও দুই বছরের শিশু সন্তানসহ শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ভোরেই স্টেশনে পৌঁছান তিনি।

তবে সকাল আটটার আগেই স্বামী স্টেশন ত্যাগ করেন। ৯টায় অফিস, তাই কোলের সন্তানসহ স্ত্রী শামীমাকে স্টেশনে রেখে যান তার স্বামী সাইফুল ইসলাম।
 
নারীদের জন্য নির্ধারিত কাউন্টারে টিকিটের জন্য অপেক্ষমান শামীমার সঙ্গে বেলা পৌনে ১১টায় কথা হয়। বললেন, স্বামীর অফিস তাই বাধ্য হয়ে কোলের শিশুকে নিয়ে বাসায় তালা দিয়ে এখানে টিকিটের জন্য দাঁড়িয়েছি। পুরুষের জন্য ১৮-২০টি কাউন্টার থাকলেও নারীদের জন্য কাউন্টার মাত্র দু’টি। এজন্য টিকিটের জন্য বেশ ঝামেলা পেতে হচ্ছে।
 
শামীমার মতো আরও কয়েকজন নারীকে দেখা গেছে শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়াতে।
 
শনিবার ঈদ-উল আযহার অগ্রিম টিকিট বিক্রির শেষ দিন। এদিন বিক্রি হচ্ছে ২৪ সেপ্টেম্বরের টিকিট।
 
শেষ দিনের টিকিট কাটতে কেউ এসেছেন আগের দিন বিকেলে, আবার কেউ সন্ধ্যায়। ১৮ থেকে ২০ ঘণ্টা অপেক্ষা করে কেউ কেউ ট্রেনের টিকিট পাচ্ছেন।
 
কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, টিকিটের জন্য মানুষের বাঁধভাঙ্গা স্রোত। বুকিং কাউন্টারের সামনের লাইনগুলো স্টেশনের সীমানা ছাড়িয়ে গেছে।
 
খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেসের টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়ানো মিজবাহুল ইসলাম বেলা সাড়ে ১১টায় বাংলানিউজকে বলেন, গতকাল (শুক্রবার) রাত পৌনে ১২টায় টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছি। সামনে এখনও সম্ভবত ৭০-৮০ জন আছেন। প্রতিটি টিকিট কাটতে কাউন্টারে ৩-৪ মিনিট সময় লাগছে। এতে দুর্ভোগ বাড়ছে।
 
টিকিট কাটতে আসা যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, বুকিং কাউন্টারে প্রতি টিকিট কাটতে সময় বেশি লাগায় প্রতি ঘণ্টায় ২০ থেকে ২৫ জনকে টিকিট দেওয়া যাচ্ছে। অথচ এ সময়ে দ্বিগুণের বেশি টিকিট ছাড়া যায়।
 
আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এ সময় আরও কমিয়ে আনা যায় দাবি করে টিকিট কাটতে আসা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেহরাব হাসনাইন বাংলানিউজকে বলেন, ট্রেনের টিকিট প্রিন্ট হওয়ার যে মেশিন, সেগুলো অনেকটা অ্যানালগ সিস্টেমের। বর্তমানে অনেক দ্রুতগতির প্রিন্টিং মেশিন রয়েছে, যা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ব্যবহার করতে পারে।
 
কমলাপুর স্টেশনে কারো মুখে হাসি, কারো বা শঙ্কা দেখা গেছে। টিকিট যারা পেয়েছেন তাদের কাছে তা ছিলো যেনো সোনার হরিণ!
 
রামপুরা থেকে আসা গৃহিণী তাসনুবা আক্তার বলেন, অনেকক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে অবশেষে টিকিট পেয়েছি, এটাতেই শান্তি।
 
কমলাপুর স্টেশনের ম্যানাজার সিতাংশু চক্রবর্তী বাংলানিউজকে বলেন, শেষদিকে টিকিটের জন্য লোকের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে যায়। তাই যাত্রীদের একটু কষ্ট পোহাতে হয়।
 
গত চারদিনে প্রায় সবাই টিকিট পেয়েছেন দাবি করে তিনি বলেন, ২৪ সেপ্টেম্বরের টিকিটও যারা লাইনে থাকবেন শেষ সময় পর্যন্ত তারা পাবেন। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়ানো হয়তো কষ্টকর, কিন্তু যারা থাকবেন তারা টিকিট পাবেন।
 
কমলাপুর স্টেশন সূত্র জানায়, ১৫ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৯ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বরের টিকিট  বিক্রি হয়েছে। শনিবার বিক্রি হচ্ছে ২৪ সেপ্টেম্বরের টিকিট।
 
একইভাবে ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে পাওয়া যাবে ফিরতি টিকিট। এদিন বিক্রি হবে ২৭ সেপ্টেম্বরের টিকিট। ২৪ সেপ্টেম্বর বিক্রি হবে ২৮ সেপ্টেম্বরের টিকিট, ২৫ সেপ্টেম্বর বিক্রি হবে ২৯ সেপ্টেম্বরের টিকিট, ২৬ সেপ্টেম্বর ৩০ সেপ্টেম্বরের টিকিট এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বিক্রি হবে ১ অক্টোবরের টিকিট।
প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্য্যন্ত ঈদ-উল আযহার অগ্রিম টিকিট দেওয়া হচ্ছে। একজন যাত্রী সর্বোচ্চ ৪টি টিকিট কিনতে পারবেন। ঈদের সময় বিক্রিত টিকিট ফেরত দেওয়া হবে না।
 
জানা গেছে, বর্তমানে রেলের মোট ৮৮৬টি কোচ রয়েছে। ঈদ উপলক্ষে ১৩৮টি কোচ ঈদের ঈদের আগেই ট্রেনের বহরে যুক্ত হবে। ১৯৯টি ইঞ্জিন চালু রয়েছে, ঈদ সামনে রেখে মেরামতকৃত আরো ২৫টি বহরে যুক্ত হবে।
 
রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতিদিন সারাদেশে এক লাখ ৮০ হাজার টিকিট ইস্যু করা হয়। ঈদ মৌসুমে অতিরিক্ত চাপ মোকাবেলায় প্রতিদিন সব ট্রেন মিলিয়ে দুই লাখ ৫০ হাজার টিকিট বিক্রি করা হবে। এছাড়া ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন রুটে পাঁচ জোড়া বিশেষ ট্রেন চালানো হবে। এ ট্রেনগুলো ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ, ঢাকা খুলনা, চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটে ঈদের আগে তিনদিন এবং ঈদের পরে সাতদিন চলবে। এছাড়া ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ শোলাকিয়া রুটে ঈদের দিন দুই জোড়া স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে।
 
এদিকে গত মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) কমলাপুর স্টেশন পরিদর্শনে এসে রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয়রোধে তারা সতর্ক রয়েছেন। যাত্রীদের নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। র্যাব, পুলিশ, বিজিবি ছাড়াও রেলওয়ের দু’টি নিরাপত্তা বাহিনী যাত্রীদের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে। যেখানেই যাত্রী হয়রানি, অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা দেখা যাবে সেখানেই যাত্রীদের নিরাপত্তায় সক্রিয় হবে এসব নিরাপত্তা বাহিনী।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৫
এডিএ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।