খুলনা: মিষ্টি হাসি দিয়ে চারপাশ উজ্জ্বল করে রাখতো পারভীন। রাগ কী জিনিস দেখিনি।
শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এভাবেই আহাজারি করছিলেন বাবা-মেয়েকে হত্যার পর ডাকাতির ঘটনায় নিহত পারভীন সুলতানার স্বামী আশিকুর রহমান।
শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে খুলনায় সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে এক্সিম ব্যাংকের খুলনা শাখার ক্যাশ কর্মকর্তা পারভীন সুলতানা (২৬) ও তার বাবা ইলিয়াস হোসেন চৌধুরীর (৭০) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
![](files/khulna1_968321650.jpg)
পুলিশের ধারণা, ডাকাতি ও মেয়েকে ধর্ষণের পর দু’জনকেই শ্বাসরোধ করে হত্যা করে মালামাল লুট করেছে ডাকাতরা।
পারভিনের মৃত্যুর খবর শুনে ঢাকায় কর্মরত স্বামী আশিকুর রহমান ছুটে এসেছেন খুলনায়।
আশিকুর রহমান জানান, তিনি ঢাকার একটি ট্রাভেলস এজেন্সিতে কাজ করেন। সেখানেই থাকেন তিনি। ইচ্ছা ছিলো পারভীনকে বদলি করে সেখানে নিয়ে যাবেন। এজন্য তিনি ঢাকায় বাসাও দেখছিলেন।
তিনি আরও জানান, অক্টোবরের ৭ তারিখ তাদের প্রথম বিবাহ বার্ষিকী। এজন্য তাদের দু’জনের অনেক পরিকল্পনাও ছিলো। শুক্রবার বিকেলে পারভীনের সঙ্গে শেষ কথা হয়েছে। পরে আর তার ফোন খোলা পাননি বলে কেঁদে ফেলেন আশিকুর রহমান।
নিহত ইলিয়াস হোসেন চৌধুরীর বড় মেয়ে নার্গিস আহমেদ সাথি বলেন, বুড়ো মৌলভীর দরগার পেছনে ৩নং রোডের এ টিনশেড বাড়িটি আমার। এখানে বাবা ও পারভীন তিন বছর ধরে থাকতো। শুক্রবার রাতে পারভীনের স্বামী জানান, পারভীনের মোবাইল ফোন দীর্ঘক্ষণ ধরে বন্ধ পাচ্ছে। পরে জানতে পারি, বাবা ও পারভীনকে হত্যা করে সেফটিক ট্যাঙ্কের মধ্যে রাখা হয়েছে।
নানা ও খালাকে হারিয়ে অনেকটা নিশ্চুপ হয়ে গেছে নার্গিস আহমেদ সাথির ছেলে আজান (১২)। সে বাড়ির পেঁপে গাছ দেখিয়ে বলছে, নানা এ গাছ লাগিয়েছেন। কিন্তু ফল খেয়ে যেতে পারলেন না।
পারভীনের বোন রিজিয়া সুলতানাসহ নিহতদের স্বজনদের নির্বাক চাহনি ও আহাজারি দেখে উপস্থিত সকলের চোখে পানি এসে গেছে । পারভীনের স্বামী আশিকুর রহমান বিয়ের স্মৃতিময় ছবিগুলো দেখে শুধু নীরবে কেঁদেই চলছেন।
![](files/khulna2_514881311.jpg)
রিজিয়া সুলতানা বলেন, ২০ সেপ্টেম্বর আমাদের মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী। এজন্য বাসায় মিলাদের আয়োজন করা হচ্ছিল। কিন্তু তার আগেই বাবা বোনকে হারালাম।
এদিকে এ জোড়া খুনের রহস্য জানতে ও স্বজনদের সান্ত্বনা জানাতে নিহতদের বাড়িতে ভিড় করছেন এলাকার বাসিন্দারা। অনেকেই চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন, কী ঘটেছিল সেই রাতে?
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) সহকারী পুলিশ কমিশনার জিয়া উদ্দিন আহমেদ শনিবার দুপুরে বাংলানিউজকে বলেন, আলামত এবং মরদেহ দেখে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ব্যাংক কর্মকর্তা পারভীন সুলতানাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। পরে বাবা-মেয়ে দু’জনকেই হত্যা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, দুপুরে এ ঘটনায় তিন প্রতিবেশিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
লবণচরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারফ হোসেন জানান, মরদেহ দু’টির গলায় শ্বাসরোধের চিহ্ন রয়েছে। ঘাতকচক্র নিহতদের পরিচিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। ডাকাতি করার সময় চিনে ফেলায় তাদের হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।
তিনি আরও জানান, বাসার বাইরে থেকে রক্তমাখা একটি রামদা উদ্ধার করা হয়েছে। ঘরের ভেতরে সিগারেট টুকরো পাওয়া গেছে। ঘরের মধ্যে একটি কনডম পাওয়া গেছে, যা আলমত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে। ব্যাংক কর্মকর্তা পারভীন সুলতানার দেহ বিবস্ত্র অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৫
এমআরএম/ এএসআর