ময়মনসিংহ সদর, তারাকান্দা ঘুরে: ময়মনসিংহের কোরবানির পশুর হাটে বেচাবিক্রি এখনও পুরোদমে শুরু হয়নি। পশুর হাটে ক্রেতারা ভিড় করলেও দরদাম করেই চলে যাচ্ছেন।
কৃত্রিম উপায়ে গরু মোটাতাজাকরণ আতঙ্কে বড় গরু থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন ক্রেতারা। বেশিরভাগ ক্রেতাই বাজার এখন পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। তবে এমন বাস্তবতায় মোটেও হতাশ নন গৃহস্থ ও বেপারীরা। ঈদের আরও ক’দিন বাকি থাকায় যে কোনো মুহূর্তে বিক্রি বেড়ে যেতে পারে বলে প্রত্যাশা তাদের।
শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ময়মনসিংহ সদরের আমতলা পাগলা বাজার ও তারাকান্দা উপজেলার হইরাগাই গরুর হাট ঘুরে এমন চিত্রই দেখা যায়।
![](files/September2015/September19/Goru_Hat_mymensingh_Pic_5_907960818.jpg)
চলতি বছর বড় আকারের গরুর কদর একেবারেই কমে গেছে। ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বাজিতপুর এলাকার আব্দুল মালেক (৫০) বড় আকারের একটি বিদেশি ষাঁড় বাড়ির পাশের আমতলা পাগলা বাজারের হাটে তুলেছেন। দীর্ঘদেহী এ ষাঁড় ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ।
হাতপাখা দিয়ে কালো ষাঁড়টিকে বাতাস দিচ্ছেন তিনি। দাম হাঁকছেন এক লাখ ২০ হাজার টাকা। শহর থেকে আসা আব্দুস সোবহান নামে এক ক্রেতা ষাঁড়টির দাম হাঁকালেন ৭৫ হাজার টাকা। বিক্রেতা সোজা-সাপ্টা জানালেন, নির্ধারিত দামের বাইরে এক টাকাও কম দেবেন না তিনি। মালেকের দামের আগুনে সোজা পথ হাঁটলেন ক্রেতা সোবহান।
অনুযোগের সুরে গৃহস্থ আব্দুল মালেক বললেন, ‘দেশি না, একটু করস (ক্রস) আছে গরুটার। কোনো মেডিসিন খাওয়াইছি না। দুই মাস আগে তিনটা কৃমির বড়ি খাওয়াইছি। কিন্তু কারও সন্দেহ দূর করাইতে পারতাছি না। বেঁচবার না পাইলে আরেক বছর রাখুম। তাও কম দামে বিক্রি করবাম না। ’
![](files/September2015/September19/Goru_Hat_mymensingh_Pic_4_316204517.jpg)
২৪ হাজার টাকায় স্থানীয় আলালপুর এলাকার দুলাল মিয়া কিনেছিলেন একটি ষাঁড়। টানা ছয় মাস লালন-পালন শেষে ৭০ হাজার টাকায় বিক্রির আশায় এ ষাঁড় হাটে তুলেছেন। ‘কীভাবে গরু মোটাতাজা করেছেন’ প্রশ্ন করতেই রেগে গেলেন। গজর গজর ভঙ্গিতে বলছিলেন, ‘ডাক্তার আইন্ন্যা পরীক্ষা করান। একটা পাম বড়িও খাওয়াছি না। একেবারে ফেরেশ গরু। কিন্তু কাস্টমাররা তো বুঝবার চায় না। ’
রশি টেনে ধরে গরুর নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছিলেন বাজিতপুর এলাকার ইসমাইল হোসেন। আর মুগুর দিয়ে খুঁটি গাঁড়ার কাজটি করছিলেন তার স্কুলপড়–য়া ছেলে মেহেদী হাসান। এ হাটে তারা তিনটি গরু তুলেছেন। দু’টি গরু আকারে ছোট। দামও নাগালের মধ্যে। মাত্র ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা।
‘ছোট গরু দুইটার দরদাম বেশি হইতাছে। ৬৫ হাজার টাকার সাদা ষাঁড়ের দিকে সবার আগ্রহ কম। তবে অহনও পুরাপুরি হাট জমে নাই। আর দুইদিন পর জমবো’- বলেন বিক্রেতা ইসমাইল।
![](files/September2015/September19/Goru_Hat_mymensingh_Pic_2_258938515.jpg)
এ হাটের ইজারাদার শুকুর আলী জানান, হাটে গরুর অভাব নেই। বড় গরুর কদর কম। ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর দিকেই ঝোঁক ক্রেতাদের। তবে, ক্রেতারা দেখছেন বেশি, কিনছেন কম। তারা বাজার পর্যবেক্ষণ করছেন। আর দু’তিন দিন বাদে বিক্রি-বাট্টা পুরোপুরি জমে উঠবে।
ময়মনসিংহ সদর উপজেলার এ হাট ঘুরে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরের তারাকান্দার হইরাগাই গরুর হাটের উদ্দেশ্যে ছুটলো গাড়ি। তখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা ছুঁই ছুঁই। হাটে তেমন ক্রেতা না থাকায় সন্ধ্যার পরপরই বিক্রেতারা বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।
এ হাটের বিক্রেতারা জানান, বেশিরভাগ ক্রেতাই ঈদের দু’তিন দিন আগে গরু কিনেন। এখন সবাই হাট ঘুরে ঘুরে দেখছেন। টার্গেট অনুযায়ী দাম বলছেন না। শুধু দরদাম করছেন। আবার স্বাদ ও সাধ্যের সমন্বয় ঘটাতে পারলে কেউ গরু কিনেও বাড়ি ফিরছেন।
![](files/September2015/September19/Goru_Hat_mymensingh_Pic_1_486972748.jpg)
এ হাটে সর্বোচ্চ দাম উঠেছে একটি ষাঁড়ের, দেড় লাখ টাকা। কালো বিদেশি ষাঁড়টির মালিক নজরুল বেপারী। বাড়ি বারইপাড়া এলাকায়। মোটাতাজাকরণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেই ঝটপট উত্তর দিলেন, ‘কোনো কেমিক্যাল ব্যবহার করে গরু মোটাতাজা করছি না। ’
এ হাটেও ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর দিকেই আগ্রহ ক্রেতাদের। শহীদ নামে এক ক্রেতা বললেন, ‘মেডিসিন খাওয়াইয়া বড় গরু ফুলায়। ছোট আকারের গরুতে ঝামেলা নাই। তবে এখন বাজার চেতা চেতা ভাব। দু’একদিন গেলে দাম পড়বো। তখন গরু কিনমু। ’
একই রকম কথা শোনা গেলো তিনটি হাটে গরু তোলা গৃহস্থ রুহুল আমিনের মুখ থেকেও। তিনি বলেন, ‘সবাই ছোট-মাঝারি আকারের গরু খুঁজতাছে। কেনা-বেচাও এখন খারাপ। বড় গরুর দিকে ক্রেতাদের নজর নেই। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৫
এইচএ