ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

ইজারাদারের অবহেলায় মরলো তোফাজ্জলের লাখ টাকার গরু

এ জেড খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৫
ইজারাদারের অবহেলায় মরলো তোফাজ্জলের লাখ টাকার গরু ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: রাতভর থেমে থেমে বৃষ্টি। উপরে পলিথিনের ছাউনি।

কোন রকম বৃষ্টিতে ভিজে ভিজেই রাত পার করলেন গরু ব্যবসায়ী তোফাজ্জল হোসেন। নিজে ভিজেও তার গরুটিকে শুকনো রাখার চেষ্টা করেছেন সারা রাত। তারপরও ছাউনির নীচে পানি জমে কাদার সৃষ্টি হওয়ায় তার মধ্যেই থাকতে হয়েছে তোফাজ্জল এবং তার সযত্নে পালিত গরুটিকে।

মেঘ-বৃষ্টি সরিয়ে বেলা সাড়ে ১০টার দিকে মেঘের আড়াল থেকে বেরিয়ে এল সূর্য। এই সুযোগে হাটে আগত ব্যবসায়ীরা তাদের পশুদের গোসল করিয়ে কাদা ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে নিচ্ছিলেন।

সবার মত তোফাজ্জল হোসেনও তার সিঁদুরে লাল গরুটিকে পরিষ্কার করে কাদা থেকে সরিয়ে শুকনো জায়গায় নিচ্ছিলেন। কিন্তু চলার পথে কিছু বুঝে ওঠার আগেই মাটিতে পড়ে থাকা বৈদ্যুতিক তার জড়িয়ে এক মিনিটের মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো সুস্থ তরতাজা গরুটি। গরু থেকে কয়েক হাত পেছনে থাকায় প্রাণে বেঁচে গেলেও আহত হয়ে হাসপাতালে যেতে হয় তোফাজ্জলকে।     

সোমবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১ টার দিকে রাজধানী ঢাকার রামপুরার আফতাব নগর গরুর হাটে এ ঘটনা ঘটে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, একটি মরা গরুর চারপাশে উৎসুক জনতার ভিড়। পাশে একজন  গরুটির রশি ধরে নির্বাক দাঁড়িয়ে আছে। কি হয়েছে জানতে চাইলে দাঁড়িয়ে থাকা মুন্না বিশ্বাস বলেন, এটা আমার কাকার গরু। গরুটিকে নিয়ে এদিক দিয়ে যাচ্ছিলেন হঠাৎ কারেন্টে ধরে গরুটি মরে গেছে আর আমার কাকা আহত হয়ে হাসপাতালে আছেন।

এ সময় পাশে থাকা ব্যবসায়ীরা হাট মালিকদের অভিযুক্ত করে বলেন, ‘গত তিন দিন ধরে আমরা অভিযোগ দিয়ে আসছি। এই বিদ্যুতের খুঁটিতে কারেন্ট লেগে আছে। দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বললেও তারা আমলে নেননি। রাতে বৃষ্টি হওয়ায় খুঁটির নীচে জমে থাকা পানিও এখন কারেন্ট হয়ে আছে। এখান দিয়া তোফাজ্জল গরু নিয়ে যাচ্ছিলেন । হঠাৎ গরুটা একটা কাঁপুনি দিয়ে মাটিতে পড়ে গেল। তারপরই সব শেষ। কর্তৃপক্ষ যদি আগে ব্যবস্থা নিতো তাহলে এত বড় ক্ষতি হত না। হাট কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণেই আজ এ ঘটনা ঘটলো।

‘এক লাখ টাকা দামের এই গরুটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেল আমার চাচা’ উল্লেখ করেন ভাতিজা মুন্না বিশ্বাস।

এ বিষয়ে আফতাবনগর হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য সোহেল রানা মিঠু বাংলানিউজকে বলেন, ব্যবসায়ীরা অভিযোগ দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। ইলেকট্রিক মিস্ত্রি পাঠিয়েছি। দ্রুতই এ বিষয়ে সমাধান করার চেষ্টা করছি।

এদিকে সারা রাতের বৃষ্টির কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে হাটে আসা গরু ব্যবসায়ীদের। পাতলা পলিথিন দিয়ে কোনো রকমে বৃষ্টির পানি থেকে গরুগুলোকে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন তারা। কাদা আর বৃষ্টির পানি জমে আছে হাটের ভেতর।

কুষ্টিয়া থেকে আসা আব্দুর রশিদ বলেন, গত শুক্রবার হাটে এসেছি। আসার পর থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে। পলিথিন কিনে কোন রকমে ছাউনি দিয়ে গরুগুলোকে শুকনো রাখার চেষ্টা করছি।

তিনি বলেন, বাড়িতে লালন-পালন করার সময় কষ্ট কী জিনিস গরুকে বুঝতে দেইনি। কিন্তু এখানে এসে কষ্ট কাকে বলে গরু হাড়ে হাড়ে বুঝেছে। সারা বছর পরিশ্রম করে এদের (গরু) বড় করছি। কিন্তু শেষ সময়ে তাদের যত্ন করতে পারছি না।

ঈদের বাকি আর তিন দিন। এখনও রাজধানীর পশুর হাটগুলো তেমন জমে উঠেনি। রাতভর থেমে থেমে বৃষ্টি আর কাদা-পানিতে হাটের পশুদের অবস্থা নাজুক। ক্রেতার সংখ্যাও তুলনামূলক অনেক কম। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৃষ্টি কমে একটু রোদ উঠলেই ক্রেতা বাড়বে।

বাংলাদেশ সময়: ০১৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৫
এজেডকে/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।