ঢাকা: ঈদ ও বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে অজ্ঞান পার্টি ও মলম পার্টির তৎপরতা বৃদ্ধি পায়। বিষয়টি বিবেচনায় রেখে নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
অজ্ঞান পার্টির ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে রাজধানীর সর্বত্র। এছাড়াও ছোট নাটিকা ও বিজ্ঞাপন তৈরি করে বিভিন্ন ক্যাবল নেটওয়ার্কের মাধ্যমেও প্রচার করা হচ্ছে। আর সচেতনতামূলক প্রচারণার কাজটি খোদ পুলিশই করছে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করায় এবার রাজধানীতে অজ্ঞান পার্টি ও মলম পার্টির দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে দাবি করেছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা।
বিগত সময়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে অজ্ঞান পার্টির প্রায় দুই শতাধিক সদস্যকে গ্রেফতার ও কারাদণ্ড দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, রাজধানীর সায়দাবাদ, কুমিল্লা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম রুটের বিভিন্ন গাড়িতে হকার সেজে উঠে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যে নেশাজাতীয় ট্যাবলেট মিশিয়ে যাত্রীদের খাওয়ায়। এরপর যাত্রীবেশে বসে থেকে সুযোগ বুঝে টাকা পয়সাসহ সব লুট করে নিয়ে পালিয়ে যায়।
ঈদে ঘরমুখো মানুষ ও ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা। সুকৌশলে খাতির জমিয়ে চেতননাশক ট্যাবলেট ও নেশাজাতীয় দ্রব্য খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খাইয়ে অজ্ঞান করে টাকা ও মূল্যবান সামগ্রী হাতিয়ে নেয় তারা।
গোয়েন্দা সূত্র আরও জানায়, এসব চক্রের সদস্যরা দীর্ঘদিন যাবত এ পেশার সাথে জড়িত থাকে। এদের প্রতিটি গ্রুপে ২০/২৫ জন সদস্য থাকে। তারা একাধিকবার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলেও জামিনে বের হয়ে এসে ফের একই অপরাধ করে।
ঢাকা মেট্রাপলিটান পুলিশের (ডিএমপি) উপ-কমিশনার (ডিসি) মুনতাসিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, গ্রেফতারের পর সঙ্গে সঙ্গে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেওয়ায় কারাগার থেকে সহজে বের হতে না পারায় রাজধানীতে অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা কমে গেছে। এরপরও অজ্ঞান পার্টির কিছু চক্র সক্রিয় রয়েছে।
তিনি বলেন, তবে এদেরকেও গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে বাস, লঞ্চ টার্মিনাল, ট্রেন স্টেশন ও বিভিন্ন পশুর হাটের ভিতরে ও বাইরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
মুনতাসিরুল ইসলাম আরো বলেন, ইতোমধ্যেই অজ্ঞান পার্টির একাধিক চক্রের প্রায় দুই শতাধিক সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে। কোনোভাবেই অপরিচিতদের দেওয়া কিছু খাওয়া যাবে না।
কাউকে অজ্ঞান পার্টির সদস্য সন্দেহ হলে অবশ্যই নিকটস্থ পুলিশকে জানাতে পরামর্শও দেন তিনি।
অজ্ঞান পার্টির অপতৎপরতা বন্ধ করতেই এবার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি কাজ করছে পুলিশের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এ বিষেয়ে ডিএমপি’র নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. মশিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, অজ্ঞান পার্টি ও মলম পার্টির সদস্যদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিলে তারা কোনো না কোনোভাবে জামিনে বের হয়। আবার তারা সক্রিয়ভাবে অপতৎপরতা চালায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ঈদুল ফিতরের পর থেকেই ডিএমপির ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অজ্ঞান পার্টির প্রায় ২০০ সদস্যকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। ঈদুল আযহায় অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে যাতে সাধারণ মানুষ না পড়ে এ জন্য রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ডিএমপির ভ্রাম্যমাণ আদলতের অভিযান চালানো হচ্ছে।
চলতি বছরের গত ৯ আগস্ট (রোববার) দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে অজ্ঞান ও মলম পার্টি চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করে খিলগাঁও থানা পুলিশ। এদের মধ্যে একজন নারী সদস্যও ছিলেন। ওই সময় তাদের হেফাজত থেকে অজ্ঞান করার নেশাজাতীয় ২টি মলম ২টি মরিচের গুড়ার প্যাকেট উদ্ধার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত সদস্যরা হলেন, মো. হামিদুর রহমান, মো. শহিদ, মো. আদম আলী ও মোসা. শাম্মী ওরফে সারমিন বেগম।
চলতি বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর (শনিবার) রাজধানীর কলাবাগানের আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের হানিফ কাউন্টারের সামনে থেকে ৫ সদস্য, গুলিস্তান এলাকা থেকে ৯ সদস্য এবং যাত্রাবাড়ি বাস টার্মিনাল এলাকায় থেকে ৪ সদস্যসহ অজ্ঞান পার্টির মোট ১৮ জনকে গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
এ সময় তাদের কাছ থেকে অজ্ঞান করার ১১৪টি নেশাজাতীয় এটিভেন-২ ট্যাবলেট, ৪৩টি ইয়াবা, ৫টি মানিব্যাগ, ৬টি ব্লেড ও মোবাইলফোন জব্দসহ একটি চুরি করা সিএনজি উদ্ধার করা হয়।
ডিএমপি’র অপরাধ ও তথ্য বিভাগের (উত্তর) উপ-কমিশনার (ডিসি) শেখ নাজমুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, মূলত ঈদ ও বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা তৎপর হয়। কেউ যাতে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে না পরে সেজন্য পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে ডিবি পুলিশও কাজ করছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৫
এসজেএ/এমজেএফ