ঢাকা: রাত সাড়ে ১২টা। মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে।
ট্রেনের টয়লেটগুলোর সামনেও গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে আছে মানুষ। ট্রেনের দরজায় বাদুর ঝোলার মতো ঝুলে আছে অনেকে।
স্টেশনে থামা মাত্রই ট্রেনে উঠতে ঝাঁপিয়ে পড়লো অপেক্ষায় থাকা মানুষ। ট্রেনের দরজায় আগে থেকে ঝুলে থাকা মানুষের সঙ্গে যোগ দিলো তারাও। অনেকে ট্রেনের জানালা দিয়ে ভিতরে প্রবেশের চেষ্টা করে ব্যর্থ হলো।
![](files/September2015/September22/Abdullapur_5_828759862.jpg)
এবার ছাদে ওঠার পালা। ঘুটঘুটে অন্ধকার আর বৃষ্টির মধ্যে ছাদে উঠতে লাগলো মানুষ। মানুষ, মালামালে পরিপূর্ণ হয়ে উঠতে লাগলো ট্রেনের ছাদ। এ বিষয়গুলো তদারকির দায়িত্বে থাকা কাউকে চোখে পড়লো না এ সময়। কিছুক্ষণের মধ্যে এসব মানুষকে নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যায় ট্রেনটি।
মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) দিনগত রাতে এ দৃশ্য দেখা গেছে বিমানবন্দর রেলস্টেশনে।
ট্রেনের দরজায় ঝুলে থাকা ফিরোজা আক্তার লাকি আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, যত কষ্টই হোক বাড়ি যাবো। যদিও লাকি জানে না, কিছুক্ষণ পর তার হাতের মাংস পেশিগুলো ঠিকভাবে কাজ করবে না।
সাইফুল নামে আরেকজন বললেন, বাড়ি যেতে হবে। মানুষের হিসাবে যানবাহন ব্যবস্থা নেই। এখন এভাবে না যেয়ে উপায় নেই। তাছাড়া আরও অনেকেই তো যাচ্ছে।
![](files/September2015/September23/biman_bondor1_906687323.jpg)
ট্রেনের ছাদে উঠে আবার নেমে পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফারহান কবির। তিনি বলেন, সবাই উঠছে দেখে প্রথমে উঠে পড়লাম। পরে মনে হলো ঠিক হবে না। তাই নেমে পড়লাম।
সংবাদ সংগ্রহ করার সময় একজন চেঁচিয়ে বলতে লাগলো, কেউ কেউ এমন ভাবে সংবাদ পরিবেশন করেন যেটা মানুষকে অস্বাভাবিক ঝুঁকি নিতে উৎসাহিত করে।
অনিক নামে এই মেডিকেল ছাত্র বাংলানিউজকে বলেন, অনেক মানুষ যখন একসঙ্গে থাকে তখন সবার মধ্যে একটা উত্তেজনা কাজ করে। তখন মানুষ তার জ্ঞান বুদ্ধির ব্যবহার না করে অতিরিক্ত ঝুঁকি নিয়ে ফেলে। অনেকের মধ্যে একটা সিনেমার নায়কদের মতো একটা অনুভূতিও কাজ করে। যার জন্য প্রতি বছরই মানুষ মারা যাচ্ছে নানা ভাবে।
এ প্রতিযোগিতা শুধু ট্রেনে নয়, বাস এবং ট্রাকেও।
রাত পৌনে ১২টার দিকে রাজধানীর আবদুল্লাহপুর ফুটওভার ব্রিজের ওপর দাঁড়াতেই চোখে পড়ে রাতের অন্ধকার আর বৃষ্টির মধ্যেও প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে বাসের ছাদে মালামালসহ ঠাসাঠাসি করে বাড়ি যাচ্ছে অসংখ্য মানুষ।
![](files/September2015/September23/Abdullapur_4_908525238.jpg)
যে ট্রাকগুলোতে করে বেপারিরা গুরু নিয়ে ঢাকা এসেছে। সেই ট্রাকগুলোতে মানুষ বোঝাই করে ফিরে যাচ্ছে তারা। অনেকে গাড়ি না পেয়ে ঝুঁকি নিয়ে বাসের ছাদে উঠছে বা ট্রাকে করে বাড়ি যাচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে বেশির ভাগই স্বল্প ও নিম্ন আয়ের মানুষ কম টাকায় বাড়ি যেতে এটা করছেন।
বাসের ছাদে সিরাজগঞ্জ যাচ্ছেন আতাউর। তিনি বলেন, ঈদ এলেই বাসের ভাড়া বেড়ে যায়। ছাদের গেলে টাকা কম লাগে তাই ছাদে যাচ্ছি।
![](files/September2015/September23/biman_bondor_3_212561192.jpg)
পরিবারের সঙ্গে ঈদ করবে বলে বাড়ি যেতে সবাই যুদ্ধ করছে। বাড়ি ফেরার লড়াইয়ে এগিয়ে থাকতে একে অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে। একটি দুর্ঘটনা ঈদের সব আনন্দ, নাড়ির টানে বাড়ি ফেরার সব আবেগ মুহূর্তেই বিলীন করে দিতে পারে। তবু মানুষ মৃত্যু ঝুঁকিকে তুচ্ছ করেও ছুটছে। নাড়ির টানে গ্রামে ফিরবে বলে সবাই প্রতিযোগিতা করছে বেশি ঝুঁকি নিতে, মৃত্যুর কাছাকাছি যেতে।
বাংলাদেশ সময়: ০৪০৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৫
এমইউএম/পিসি