ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

ক্রেতা কম, মুখ বেজার বেপারীদের

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৫
ক্রেতা কম, মুখ বেজার বেপারীদের ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ময়মনসিংহ: বাঁশের বেড়াতে গা ঘেষে নিজের ষাঁড় গরুর মুখে সবুজ ঘাস তুলে দিচ্ছিলেন আরিফ হোসেন। ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ডৌহাখলা এলাকায় তার বাড়ি।

ভাল দামের আশায় ময়মনসিংহ শহরের সার্কিট হাউজের হাটে নিয়ে এসেছেন আদরের গরুকে।

কিন্তু প্রথম দিনে হাটে ক্রেতার উপস্থিতি কম। ফলে মুখ বেজার মধ্য বয়সী আরিফ বেপারীর। নিজ থেকেই বললেন, ‘বাজার বেশি যুইত না। ৮০ হাজার টাকার গরু ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা দাম কয়। কাস্টমারও কম। বাজার এই লেইগ্যা ড্যাম মারছে। যেই লাগাত দাম না পামু বিক্রি করতাম না। খেড় (বন) বিছাইয়া হারা রাত বইয়া থাকবাম। ’

আরিফ বেপারীর সঙ্গে কণ্ঠ মেলালেন শহরের কাঠগোলা এলাকার বেপারী জালাল মিয়া। এ বেপারী নিজের বড় আকৃতির একটি ষাঁড় গরুর দাম হাঁকালেন ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা। কিন্তু প্রত্যাশা মাফিক ক্রেতারা দরদাম না করায় বেজার মুখে  বলেন, ‘গরু বেচা-কেনা তেমন হইতাছে না। আমার এতো ভালা গরু মাত্র ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা দাম কইতাছে। ক্রেতা কম থাহায় দাম উঠতাছে না। ’

শুধু আরিফ কিংবা জালাল মিয়াই নন, মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাতে এমন বেজার মুখ দেখা গেলো বেশিরভাগ বেপারী ও গৃহস্থদের। অবশ্য ময়মনসিংহের এ হাটে ভারতীয় কোন গরু না থাকায় বিক্রেতারা চড়া দাম হাঁকাচ্ছেন বলেও অভিযোগও করেন কোন কোন ক্রেতা।

তবে ঈদের আগের শেষ দু’দিন বুধবার বিকেলের পর ও বৃহস্পতিবার এ হাটে ধুম বেচাবিক্রি হবে বলে মনে করেন পশুর হাটের ইজাদার, ক্রেতা ও বিক্রেতারা।

প্রতি বছর শহরের সার্কিট হাউজ মাঠে কোরবানির পশুর হাট বসতো। কিন্তু এবার সেই ঐতিহ্যে ছেদ পড়েছে। পশুর হাট বসেছে শহরের ক্রীড়াপল্লী আবুল মনসুর সড়কে। বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদের নির্দেশের কারণেই এবার ময়মনসিংহ পৌরসভা সার্কিট হাউজ মাঠের বদলে এ সড়কে গরুর হাটের ইজারা দিয়েছে।

মঙ্গলবার রাতে এ হাটে প্রবেশ করতেই কানে ভেসে আসে ইজারাদার কর্তৃপক্ষের মাইকিং। ‘মাঠে কোন গরু প্রবেশ করবে না। কোন গরু উঠানামা করবে না। যদি কেউ গরু নিয়ে প্রবেশ করেন তবে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর এতে ইজারাদার দায়ী থাকবে না। ’

বাপ্পী নামের এক যুবক মুকুল ফৌজ অ্যাথলেটিক ক্লাব থেকে এ মাইকিং করছেন। তার সঙ্গে বসে আছেন আরো জনা পাঁচেক লোক। তাদের কেউ কেউ ব্যাংক কর্মকর্তা। তাদেরই একজন ইভান জানালেন, হাটে জাল নোট শনাক্তকরণে বিভিন্ন ব্যাংকের ৪টি বুথ বুধবার সকাল থেকে কাজ শুরু করবে।

আবুল মনসুর সড়কের পার্কের দিকের মাথা থেকে একটু এগুতেই চোখে পড়ে বড় আকারের ৪টি গরু। বিক্রেতারা এসব গরুর দাম হাঁকাচ্ছেন ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

ঈশ্বরগঞ্জের জালাল ও মজিবুর রহমান বেপারী এসব গরুর মালিক। মলিন মুখে তারা জানালেন, প্রথম দিন হাট তাই ক্রেতার উপস্থিতি অনেক কম। যেসব ক্রেতারা আসছেন তারা দরদাম করছেন। বাজার পর্যবেক্ষণ করছেন। তবে দু’দিন ভাল ব্যবসা হবে। তারা সেই অপেক্ষায় আছেন।

গতবারের মতো এবারো ময়মনসিংহের বৃহৎ এ পশুর হাটের ইজারা নিয়েছেন আব্দুল মান্নান। তিনি ময়মনসিংহ পৌরসভার সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান। হাটের হালহকিকত সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, সার্কিট হাউজ মাঠে কোন গরু যাতে না উঠে, এ কারণে কড়া নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

তবে আবুল মনসুর সড়কে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় গরু রাখতে সমস্যা হচ্ছে। প্রথম দিনে ৫ থেকে ৭’শ বেপারী এ হাটে এসেছেন। ক্রেতা-বিক্রেতাদের সুবিধার্থেই কাঁচারিঘাট সড়কের ফাঁকা জায়গা বরাদ্দ দিতে হবে।

ইজারাদার আব্দুল মান্নান আরো জানান, এ হাটে সব মিলিয়ে দু’ থেকে আড়াই’শ স্বেচ্ছাসেবক ২৪ ঘন্টা দায়িত্ব পালন করছেন। ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র ইকরামুল হক টিটু নিজে সার্বক্ষণিক পুরো বিষয় মনিটরিং করছেন। সব কিছুর খোঁজ খবর রাখছেন। বুধ ও বৃহস্পতিবার হাটের চেহারা বদলে যাবে। এ দু’দিন পুরোদমে বেচাকেনা চলবে।

** হাম্বা সেলফি!

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৫
আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।