কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে: ঘড়ির কাঁটা অনুযায়ী ট্রেন না ছাড়লেও তবুও ট্রেনেই যেনো স্বস্তি ঘরমুখো যাত্রীদের। সড়ক ও নৌ-পথের চেয়ে রেলপথকেই তুলনামূলক নিরাপদ মনে করছেন তারা।
কয়েকটি আন্ত:নগর ট্রেন নির্ধারিত সময়ের ১ থেকে ২ ঘণ্টা দেরিতে ছাড়লেও ক্ষোভ নেই যাত্রীদের। তাদের ভাষ্য—‘ঘড়ির কাঁটা মেনেতো কখনো ট্রেন চলেনি। একটু না হয় দেরি হলো, তবুওতো তুলনামূলক নিরাপদ। ’
বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) মহানগর প্রভাতী ছাড়ার সময় ট্রেনের জানালার ফাঁক দিয়ে কথা হয় রিশাদুল ইসলাম নামে এক যাত্রীর সঙ্গে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে তিনি বলেন, আধ ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ছে ট্রেনটি, তবুও ভালো। সড়ক পথের মতোতো এখানে যানজট হবে না।
![](files/September2015/September23/kamlapur_rail_01_634767148.jpg)
এদিন রাজশাহীগামী ধুমকেতু প্রায় ৩ ঘণ্টা দেরিতে ছেড়েছে। তবুও যাত্রীদের চোখে পড়ার মতো ক্ষোভ দেখা যায়নি। ধৈর্য ধরে যাত্রীরা অপেক্ষা করছিলেন ট্রেনটি কখন ছাড়বে।
এ ট্রেনের যাত্রী তাবাসসুম আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, তিন ঘণ্টা দেরিতে ট্রেন ছাড়া যাত্রীদের জন্য বিরক্তিকর। কিন্তু চাইলেইতো আর এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে না। বাংলাদেশের ট্রেন একটু দেরিতেই ছাড়ে, এটা মেনেই আমরা টিকিট কেটেছি।
পরিবারসহ রাজশাহীগামী এ যাত্রী আরও বলেন, তবুও ট্রেন তুলনামূলক স্বস্তির। ভেতরে খাবারের সুবিধা আছে। টয়লেট যাওয়া যায়। সামগ্রিক দিক দিয়ে এ পরিবহনই আমার কাছে সড়কপথের চেয়ে স্বস্তির।
বুধবার ভোর ৫টার পর থেকে দুপুর পর্যন্ত বেশিরভাগ আন্ত:নগর ট্রেন নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে গেছে। তবে ব্যতিক্রম ঘটেছে ধুমকেতুর ক্ষেত্রে। সকাল ৬টা ২০ মিনিটের এ ট্রেন ছেড়ে গেছে সোয়া ৯টায়। এছাড়া অন্যান্য আন্ত:নগর ট্রেন আধ ঘণ্টা থেকে ২ ঘণ্টা দেরিতে ছেড়েছে। তবে ২০ থেকে ২৫ মিনিট দেরিতে কয়েকটি ট্রেন ছাড়লেও তা ‘রাইট টাইম’ হিসেবেই দেখছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা।
কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী বাংলানিউজকে বলেন, সামগ্রিকভাবে এবার প্রায় সব ট্রেনই নির্ধারিত সময়ে ছাড়ছে। নিরাপদেই বাড়ি যাচ্ছেন ট্রেনের যাত্রীরা। এ পর্যন্ত কোনো দুর্ঘটনার খবরও পাওয়া যায়নি।
![](files/kamlapur_rail_02_757790980.jpg)
বুধবারও শিশু সন্তানকে তাদের অভিভাবকদের ট্রেনের জানালার ফাঁক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করাতে দেখা গেছে। অভিভাবকরা জানিয়েছেন, দরজা দিয়ে প্রবেশে ভিড় থাকায় বাধ্য হয়েই জানালা দিয়ে তাদের সন্তানকে প্রবেশ করাচ্ছেন।
এদিকে সকালে দু’টি ট্রেনে যাত্রীরা ছাদে উঠলে পরে রেলওয়ে পুলিশ তাদের নামিয়ে দেয়। কমলাপুর স্টেশনে ছাদ থেকে নামিয়ে দেওয়া হলেও বিমানবন্দর স্টেশন থেকে ছাদে যাত্রী ওঠার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ছাদে যাত্রী পরিবহন নিষিদ্ধ হলেও প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে ব্যাকুল মানুষের কাছে এ নিষেধাজ্ঞা হয়েছে উপেক্ষিত৷
কমলাপুর স্টেশন সূত্র জানায়, ১৫ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে ঈদ-উল আযহার অগ্রিম টিকিট।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতিদিন সারাদেশে এক লাখ ৮০ হাজার টিকিট ইস্যু করা হয়। ঈদ মৌসুমে অতিরিক্ত চাপ মোকাবেলায় প্রতিদিন সব ট্রেন মিলিয়ে দুই লাখ ৫০ হাজার টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন রুটে পাঁচ জোড়া বিশেষ ট্রেন চালু হয়েছে।
![](files/kamlapur_rail_03_470657205.jpg)
এ ট্রেনগুলো ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ, ঢাকা খুলনা, চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটে মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) থেকে চলছে। ঈদের পরের সাতদিন এসব ট্রেন চলবে। এছাড়া ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ শোলাকিয়া রুটে ঈদের দিন দুই জোড়া স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয়রোধে তারা সতর্ক রয়েছেন। যাত্রীদের নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। র্যাব, পুলিশ, বিজিবি ছাড়াও রেলওয়ের দু’টি নিরাপত্তা বাহিনী যাত্রীদের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে। যেখানেই যাত্রী হয়রানি, অজ্ঞান পাটির তৎপরতা দেখা যাবে, সেখানেই যাত্রীদের নিরাপত্তায় সক্রিয় হবে এসব নিরাপত্তা বাহিনী।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৫
এডিএ/এএসআর