ফেনী: এবারের ঈদুল আজহায় ফেনীর হাট-বাজারে বিদেশি গরুর চেয়ে দেশি গরুর আধিক্য বেশি। আর তাই দামও আকাশ ছোঁয়া।
সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় এ জেলায় প্রতি বছর ভারত থেকে প্রচুর গরু আসত। এবার সেসব গরু সীমান্ত পেরিয়ে প্রবেশ না করায় এই অবস্থা।
সুযোগ পেয়ে ব্যাপারিরা যে দাম হাঁকছেন তাতে কোরবানির পশু কেনা অনেকের পক্ষেই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জেলার ফেনী পাইলট স্কুল মাঠ হাট, সদর উপজেলা হাট, মোহাম্মদ আলী হাট, ছাগলনাইয়ার চাঁদগাজী স্কুল অ্যান্ড কলেজ, পাঠান নগর, বাংলাবাজার, রানীর হাটবাজার ঘুরে পশুর বাজারের এ চিত্র দেখা গেছে।
ফেনী শহরের বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ী জোবায়ের হোসেন জানান, গত বছর যে গরুটি ৭০ হাজার টাকায় কিনেছি এবার সে ধরনের একটি গরুর দাম লাখ টাকা।
বৃহস্পতিবার থেকে ফেনীর বিভিন্ন বাজারে ঈদুল আজহা উপলক্ষে গরু, ছাগলসহ কোরবানির পশুর হাট বসলেও নেই কাঙ্খিত বিকিকিন। বাজারগুলোতে প্রচুর গরু, ছাগল উঠলেও নেই ক্রেতাদের আগ্রহ। বিক্রেতারা দাম হাঁকছেন আকাশচুম্বি। ফলে অনেক ক্রেতা বাজার ঘুরে দেখলেও গরু না কিনে ফিরে যাচ্ছেন।
এদিকে ফেনীতে বন্যার কারণে পশু রাখার জায়গা যেমন নেই, তেমনি গরুর খাবারেরও সংকট রয়েছে।
ইতোমধ্যে ফেনী সদরের বিরলী, পাঁচগাছিয়া বাজার, পুরাতন রানীর হাটের মজিদ মিয়ার বাজার, মালেক মিয়ার বাজার, মোহাম্মদ আলী বাজার, ফাজিলপুর, কাদেরী হাই স্কুল বাজার, হাজী ওসমানগনি বাজার, নতুন মুহুরীগঞ্জ বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে পশুর হাট বসলেও হয়নি তেমন বেচাকেনা। কোনো কোনো বাজারে দু’চারটি গরু বিক্রি হয়েছে। শনিবার বিরলী বাজারে শুধুমাত্র দু’টি গরু বিক্রি হয়েছে বলে জানান বাজারের ইজারাদার প্রতিষ্ঠান বিরলী মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আমীন শরীফ।
ফাজিলপুরের মোহাম্মদ হানিফ জানান, রোববার ফাজিলপুর বাজারে প্রচুর গরু উঠলেও বিক্রেতাদের উচ্চমূল্য হাঁকা, ক্রেতার পশু রাখার স্থানের অভাব-ইত্যাদি কারণে বিক্রি কম হয়েছে। বুধবার পশু বিক্রি বেশি হবে বলে আশা করছেন বিক্রেতারা। এছাড়া অনেকে শেষ সময়ে কমদামে গরু কেনার অপেক্ষায় রয়েছেন।
ছাগলনাইয়ার হাটগুলো ঘুরে দেখা যায়, মাত্র দুইদিন বাকি ঈদুল আজহার। ইতোমধ্যে ছাগলনাইয়ায় পৌর সদরে বসেছে কোরবানির পশুর হাট। হাটে বিপুল ক্রেতা বিক্রেতার সমাগম ঘটলেও বেচাবিক্রি ছিল কম।
ছাগলনাইয়া পৌর সদরের ছাগলনাইয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে গরুর হাট ঘুরে এ চিত্র পাওয়া যায়। হাটে আসা ক্রেতারা জানান, ভারতীয় গরু না আসায় দেশি গরুর দাম এবং চাহিদা দু’টোই বেশি। এ হাটেই ছাগলনাইয়া জমদ্দার বাজারের জলিল মেশিনারিজের মালিক আবদুর রহিম একটি গরু এনেছেন। আলাদাভাবে মালা পরানোর কারণে মানুষের বাড়তি নজর কেড়েছে গরুটি। তিনি গরুটির দাম হাঁকছেন ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা, দাম উঠেছে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা।
গরুটি তিনি নিজে লালন পালন করছেন বলে জানান। গরু কিনতে আসা মো. শাহ আলম জানান, এবার অন্যান্য বারের তুলনায় দাম বেশি। মাঝামাঝি সাইজের গরুর দাম হাঁকা হচ্ছে ৬০-৭০ হাজার টাকা।
অথচ গতবার এই ধরনের গরু পাওয়া গেছে ৪০-৫০ হাজার টাকায়। মো. সাদ্দাম হোসেন নামে এক বিক্রেতা ১৩টি গরু এনেছেন। দাম হাঁকছেন প্রতিটি ৮০ হাজার টাকা করে। আবদুল করিম নামে আরেক বিক্রেতা ১টি গরু বিক্রি করতে এনেছেন। ছোট আকারের গরুটির দাম চাওয়া হয় ৫০ হাজার টাকা।
হাসিল আদায়কারী আবুল বশর জানান, বেচাকেনা খুবই কম। গরুর পাশাপাশি মহিষ ও ছাগলের চাহিদা রয়েছে বলেও ব্যবসায়ীরা জানান। পশু হাটে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা।
সদর উপজেলার ফাজিলপুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, একটি দেশীয় ষাড় বিক্রি করা হয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকায়। সে বাজারটিতে লাখের নিচে সুন্দর কোনো গরুই পাওয়া যায়না। তারপরও ক্রেতার অপেক্ষা করে আছে নিজ সামর্থের আলোকে কোরবানির পশুটি কিনবেন। আর বিক্রেতা বসে আছেন শেষ মুহুর্তে হলেও নিজের চাহিদার আলোকে তার পশুটি বিক্রি করবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৫
আরএ