সিলেট: শিশু সাঈদকে অপহরণের পর আটকে রাখা বাসাটি রাস্তার পাশে অবস্থিত। যে কারণে সাঈদ আর্তচিৎকার করলে লোকজন শুনতে পাবেন।
মূলত মুক্তিপণের জন্যই শিশু সাঈদকে অপহরণ করা হয়েছিলো। খুন করার পরও মুক্তিপণের টাকা আদায়ের চেষ্টা করেন তারা। নিহতের বাবা ও মামার কাছে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণও দাবি করেছিলেন তারা।
হত্যার পর মরদেহ গুম করে একে একে ৭টি বস্তায় ঢুকিয়ে রাখা হয়। খুন থেকে শুরু করে গুম, সবই হয়েছে পুলিশ কনস্টেবল এবাদুরের নগরীর ঝেরঝেরি পাড়ার সবুজ ৩৭ নম্বর বাসায়।
বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) আদালতে দাখিল করা সাঈদ হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে (চার্জশিট) তদন্তকারী কর্মকর্তার তদন্তে এ বিষয়গুলো উঠে এসেছে।
চার্জশিটের বরাত দিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মোশাররফ হোসাইন।
প্রায় ৬ মাস তদন্তের পর সিলেটে আলোচিত শিশু আবু সাঈদ হত্যায় কনস্টেবল এবাদুর রহমান পুতুলকে প্রধান আসামি করে চারজনের বিরুদ্ধে এ চার্জশিট আদালতে জমা হয়। অন্য আসামিরা হলেন, জেলা ওলামা লীগ নেতা নুরুল ইসলাম রাকিব, পুলিশের সোর্স আতাউর রহমান গেদা ও মাহিদ হোসেন মাসুম। আর চার্জশিটে ৩৭ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
বুধবার বিকাল পৌনে ৪টায় সিলেট জেলা ও দায়রা আদালতে নিযুক্ত সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি-প্রসিকিউশন)আব্দুল আহাদের কাছে চার্জশিটটি জমা দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
এসি আব্দুল আহাদ বিকেল ৪টা ২২ মিনিটে চার্জশিট পাওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) মহানগর মুখ্য হাকিম প্রথম আমলি আদালতে চার্জশিট উপস্থাপন করা হবে। চার্জশিট গৃহীত হওয়ার পর তা বিচারের জন্য মহানগর দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তর করা হবে।
চার্জশিটে বলা হয়েছে, গত ১১ মার্চ সকাল সাড়ে ১১টার দিকে অভিযুক্ত চার আসামি মিলে শিশু আবু সাঈদকে অপহরণের পর হত্যা করেন। নিহত আবু সাঈদ (৯) সিলেট নগরীর দর্জিবন্দ বসুন্দরা ৭৪নং বাসার মতিন মিয়ার ছেলে ও রায়নগর শাহমীর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র।
অপহরণের পর ১২ মার্চ কনেস্টেবল এবাদুরের বাসায় শিশুটিকে হত্যা করেন ঘাতকরা। মরদেহ গুম করে রাখা হয় এবাদুরের ভাড়া বাসার ছাদের চিলেকোঠায়। হত্যার পর সাঈদের বাবা ও মামা জয়নাল আবেদীনের কাছে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন ঘাতকরা।
পরে ১৪ মার্চ রাত দশটায় নগরীর ঝেরঝেরি পাড়ার সবুজ ৩৭ নম্বর কনস্টেবল এবাদুরের বাসার ছাদের চিলিকোঠা থেকে ৭টি বস্তায় মোড়ানো আবু সাঈদের গলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
সেদিন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি’র সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে হত্যার আলামত সংগ্রহের পর রাত দেড়টার দিকে মরদেহ ওসমানী মেডিকেল কলেজ মর্গে প্রেরণ করা হয়।
এ ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় মহানগরীর বিমানবন্দর থানার পুলিশ কনস্টেবল এবাদুর, জেলা ওলামা লীগের নেতা নুরুল ইসলাম রাকিব, পুলিশের সোর্স আতাউর রহমান গেদাকে। তারা তিনজনই আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। তবে অপর আসামি মুহিবুর রহমান মাসুম এখনও পলাতক রয়েছেন বলে জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।
শিশু হত্যার এ রোমহর্ষক ঘটনায় বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন নগরবাসী। খুনীদের ফাঁসির দাবিতে বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৫
এনইউ/এএসআর
** শিশু সাঈদ হত্যা: কনস্টেবলসহ চার আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট