বগুড়া: খালি নেই বাসের আসন। ভেতরে ফাঁকা জায়গা নারী-পুরুষে গাদাগাদি।
ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলগামী কোনো ট্রাকও খালি আসছে না। ভাড়া না পাওয়ায় ট্রাকগুলোকে খালি আসতে হচ্ছে না। ঘরমুখো মানুষের স্রোতে ট্রাকের বডিগুলো মানুষেই ভরে যাচ্ছে। তবে ঘরমুখো এই মানুষগুলোর জন্য বৃষ্টি আরেক বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে রশি বাঁধা হয়ে ও পলিথিনে মুড়িয়ে জীবনের সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে মানুষগুলোকে ঘরে ফিরতে হচ্ছে।
একইচিত্র ট্রেনেও। ভেতরে কোনো আসন ফাঁকা নেই। ছাদেও মানুষের ঠাসাঠাসি। ট্রেনের ছাদের দু’পাশ ও ইঞ্জিনের চারদিকে কেবলই ঘরমুখো মানুষ আর মানুষ। তাই বাস, ট্রাক, ট্রেনসহ মানুষ বহনে সক্ষম-এমন সব যানবাহনেই ঈদে ঘরমুখো মানুষের ঢল নেমেছে।
হাতের মুঠোয় প্রাণ নিয়ে এভাবেই তারা নাড়ির টানে নিজ নিজ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছুটে চলেছেন। স্বাভাবিক জীবন নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবেন কি-না তারও কোনো গ্যারান্টি নেই। তবু বাড়ি ফেরা চাই তাদের। কেননা ঈদের আনন্দ মিলেমিশে ভাগাভাগি করে উপভোগ করতেই এতোসব আয়োজন।
![](files/Bogra_Bus1_136280837.jpg)
বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বগুড়ায় উত্তরাঞ্চলমুখী মহাসড়ক ও শহরের রেলস্টেশন এলাকা ঘুরে রশি বাঁধা হয়ে হাজারও ঘরমুখো মানুষের বাড়ি ফেরার এরকম ঝুঁকিপূর্ণ দৃশ্য চোখে পড়ে।
শহরের চারমাথা বাস টার্মিনালে যাত্রাবিরতিকালে কথা হয় লালমনিরহাটের বাবলু মিয়া, মর্জিনা, হাসনা বেগম, রংপুরের মাসুদুর রহমান, ইব্রাহিম হোসেন, কাউনিয়ার জাকির হোসেন, আবুল হোসেন, গাইবান্ধার আবু জাফর, হোসনে আরা, লাইলী বেগমসহ একাধিক ঘরমুখো মানুষের সঙ্গে।
বাংলানিউজকে তারা বলেন, ঢাকার বিভিন্ন গার্মেন্টে চাকরি করি। সাধারণ ছুটি পাইনা। যে কারণে বাড়িতেও আসা হয়ে ওঠে না। তাই বছরের দু’টি ঈদের ছুটিতে বাড়ি আসার চেষ্টা করি। এবারো তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।
কারণ হিসেবে তারা জানান, বছরের অন্যান্য সময় সাধারণত বাড়ি আসা হয়না। ফলে মা-বাবা ও পরিবারের অন্য স্বজনদের সঙ্গে দেখাও হয়না। কিন্তু সবসময় তাদের জন্য মন কাঁদে। তাই প্রতি ঈদের ছুটিতে শত ঝক্কি- ঝামেলা মেনেই বাড়ি ছুটে আসি। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে উপভোগ করতে এই ঈদেও তারা বাড়ি ফিরছেন বলে জানান।
আব্দুল কাদের, কামাল হোসেন, জোবেদা, আছিয়া বাংলানিউজকে জানান, অভাবের সংসার। জীবিকা নির্বাহের জন্য গার্মেন্টের সামান্য বেতনের চাকরি করতে হয়। গরিব মা-বাবাসহ পরিবারের লোকজনের মুখের দিকে চেয়ে কষ্টের এ জীবন বেছে নিতে বাধ্য হয়েছি।
তারা আরও জানান, গার্মেন্টে চাকরি করে সামান্য যে বেতন পান তা দিয়ে অতি কষ্টে নিজেদের চলতে হয়। এ অবস্থায় বেশি বাড়ি আসলে গাড়ি ভাড়ায় সব টাকা শেষ হয়ে যাবে। তখন না খেয়ে থাকা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।
![](files/Bogra_Bus2_456282544.jpg)
তাই বছরে অনন্ত দু’টো ঈদে স্বজনদের টানে তারা বাড়ি আসেন। এজন্য তাদের প্রতিবারই ঝুঁকি নিতে হয়। বিভিন্ন যানবাহনের ছাদে বাদুর ঝোলা হয়ে ঘরে ফিরতে হয়। জীবনের সর্বোচ্চ ঝুঁকি মেনেই উপায় অন্ত না পেয়ে প্রত্যেকবার গ্রামের পানে ছোটেন।
মালিহা, শর্মিলা, শাকিল, হাসান, সোহেল, হুমাইরাসহ ঘরমুখো একাধিক ট্রেনের যাত্রী বাংলানিউজকে জানান, পেশায় তারা গার্মেন্টকর্মী। তাই তাদের ভাগ্যে কখনও আগাম টিকিট জোটে না। সিটও মেলে না। ট্রেনের ছাদ, ছাদের দু’পাশ ও ইঞ্জিনের অংশ হয় তাদের গন্তব্যে পৌঁছার আসন।
পশ্চিমাঞ্চল হাইওয়ে পুলিশের পুলিশ সুপার (এসপি) ইসরাইল হাওলাদার বাংলানিউজকে জানান, ঘরমুখো মানুষের যাত্রা স্বাভাবিক ও ঝুঁকিমুক্ত রাখতে হাইওয়ে পুলিশের একাধিক টিম মহাসড়কে কাজ করছে। এ মুহুর্তে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়া গাড়িগুলো ঠেকিয়ে চেক করার সুযোগ নেই।
কারণ একটু গাড়ি থামিয়ে দিলে শতশত গাড়ি আটকা পড়ে যাবে। তীব্র যানজটের সৃষ্টি হবে। তবে যারা গাড়ি ছাদে ঘুমের কারণে ঝিমান তাদেরকে নামিয়ে বিকল্প গাড়িতে পাঠানো হচ্ছে বলে পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৫
এমবিএইচ/জেডএস