ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

বিড়ম্বনার বাড়ি ফেরা: কষ্ট বেশি নারী-শিশুর

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৫
বিড়ম্বনার বাড়ি ফেরা: কষ্ট বেশি নারী-শিশুর ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চন্দ্রা(গাজীপুর)থেকে: মহাসড়কে অসহায় হয়ে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী নিপা সারবিনা। এমনিতেই মাইগ্রেন সমস্যা।

তার ওপর দীর্ঘ রাত শেষেও যানজটে বাসে আটকে থেকে শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন তিনি।

এর ওপর বাড়ি থেকে মুঠোফোনে বার বার খোঁজ জানার বিপরীতে অভিন্ন উত্তর দিতে দিতে নিজেই কাহিল। চার্জও ফুরিয়ে গেছে ফোনটির।

বুধবার রাতে উত্তরবঙ্গের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে এসে এখনো সাভারই অতিক্রম করতে পারেননি অধিকাংশ বাস। তাই যাত্রীরা পড়েছেন চমর ভোগান্তিতে।

সৈয়দপুরের উদ্দেশে ডিপজল পরিবহনের একটি বাসে চেপেছিলেন নিপা। অনেক হ্যাপা সয়ে টিকিট পেয়েছিলেন বটে। বৃহস্পতিবার রাত দশটার বাসে। রাজধানীর যানজট মাথায় নিয়ে আগেভাগেই চলে এসেছিলেন বাসের কাউন্টারের। ১০টা বাজে। ১১টা পেরিয়ে যায়। বাসের খবর নেই। সেই বাস এলো রাত সাড়ে ১২টায়।

তারপর যাত্রীদের বাসে আরোহনের ক্ষণ এলো রাত দেড়টায়। তারপর বাস ছাড়তে না ছাড়তেই শুরু ভোগান্তি। গাবতলী বাস টার্মিনাল ছাড়িয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে পা দিতেই আমিনবাজারে জট। তারপর হেমায়েতপুর থেকে সামনে পথে টানা ৫ কিলোমিটার যানজট। সাভারের উলাইলে রাস্তার পাশে বসা গরুর হাট ঘিরে যেন থমকে যায় বাসের চাকা।

‘অনেক হাকঁডাক শুনেছি। রাস্তার পাশে আর গরুর হাট হবে না এবার। আমাদের ভোগান্তি নিয়েও রাজনীতির নামে তামাশা চলে’- বেশ ক্ষোভের সাথে কথাগুলো বলছিলেন ঝিনাইগহ জেআর পরিবহনের যাত্রী বেসরকারি সংস্থার কর্মী মমতাজ সুলতানা।

সাভারের এই গরুর হাটের কারণে অনেকক্ষণ থমকে থাকার পর গাড়ি চলতে শুরু করলো। তারপর দুই কিলোমিটার না চলতেই সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডের জটে।

‘অত রাতে রাস্তায় প্রশাসনের কেউ ছিলো’-এমনটি মনেই হয়নি। বাংলানিউজকে জানালেন সৌরভ সরকার নামে সাতক্ষীরার এক যাত্রী।

সেই যাত্রাপথের বিড়ম্বনা কাটিয়ে নবীনগরে পৌঁছার পর আবারও যানজট।

সব পেরিয়ে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কে উত্তবঙ্গের পথ ধরতেই বাইপাইলের পর শুরু বিড়ম্বনার। তারপর থেকে বলতে গেলে সড়কই অচল।

এর মধ্যে কেটে যায় দু:সহ রাত। তীব্র ব্লাডারের চাপে পুরুষ যাত্রীদের অনেকেই নেমে যান। অন্ধকারে সড়কের পাশেই সাড়া দেন প্রকৃতির ডাকে। কিন্তু দু:সহ পরিস্থিতির কবলে পড়তে হয় নারী যাত্রীদের।

‘নিয়মিত যাত্রায় আমাদের টয়লেট ব্যবহারের সুযোগহয় মূলত যাত্রাবিরতিতে। সিরাজগঞ্জে। সেখানে কেউ টয়লেট থেকে ফ্রেস হয়ে খেয়ে দেয়ে আবার রওনা দেন গন্তব্যে। কিন্তু এখানকার পরিস্থিতি আসলে বলে বোঝানোর মতো নয়। সন্তানদের নিয়ে এই পরিস্থিতি কতটা যন্ত্রণার তা কেবল মায়েরাই বোঝে’-বাংলানিউজকে বেশ আক্ষেপের সাথেই কথাগুলো বললেন তানজিনা আলম নামের আটকে পড়া বাসের যাত্রী।

প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে। গিয়েছেন জাতিসংঘের ৭০তম অধিবেশনে যোগ দিতে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ লন্ডনে।

এই পরিস্থিতির জন্যে কারা দায়ী? তারা কি চিত্র মেলে ধরছেন?দেশে প্রশাসন বলে কিছু নেই? বেশ ক্ষোভের সাথে কথা গুলো বলছিলেন ঠাকুরগাঁয়ের যাত্রী শারমিন সুলতানা।

দেশে থাকলে হয়তো প্রধানমন্ত্রী আমাদের দু:খ বুঝতেন। তিনিও নেই। আমাদের দু:খ দুদর্শা বোঝার মতোও কেউ নেই- যোগ করেন তিনি।

বাসে আসন না পেয়ে নিন্ম আয়ের সাধারণ মানুষ অনেকেই চেপেছিলেন বাসের ছাদে কিংবা ফিরতি পথে পশুর ট্রাকে। কিন্তু তাদের নিশ্চল পথযাত্রায় বৃষ্টি বাড়িয়ে দিয়ে গেছে অনেকের দেহের তাপমাত্রা।

উল্টোপথেও ছিলো ভোগান্তি।

চন্দ্রার আগে কালিয়াকৈরে দিনাজপুর থেকে নয়টি গরু নিয়ে রাজধানীর পশুর হাটের গন্তব্যে আসা ফজলুল হক নামের এক ব্যাপারী বলেন, দীর্ঘসময় ট্রাকে থাকতে থাকতে দুটি গরু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। দাঁড়িয়ে না থাকতে পেরে ক্ষণে ক্ষণে নেতিয়ে পড়ছে।

এখানে গরুর ডাক্তার পাবো কই! নিজের গায়েই জ্বর আসতেছে। দিনের বেলায় হাট ধরতে না পারলে তো আমার সব শেষ হয়ে যাবে।
ঢাকা –আরিচা মহাসড়কের চিত্রও প্রায় অভিন্ন।

বাংলানিউজের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট শামীম খান বুধবার রাতে রাজধানী ছেড়ে সক‍াল সোয়া নয়টায়ও ফেরিতে উঠতে পারেননি।

শামীম খান বাংলানিউজকে বলেন, খুলনাগামী ঈগল পরিবহনের যাত্রা শুরুর সময় ছিলো রাত সাড়ে নয়টা। সেই গাড়ি ছেড়েছে রাত আড়াইটায়। তারপর থেকেই ভোগান্তির কবলে।

রাত নয়টায় তিনি আটক ছিলেন পাটুরিয়ায়। ফেরির অপেক্ষায়।

যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থার নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে বলা হয়, ঢাকা টাঙ্গাইলের মহাসড়কে দুর্ঘটনার জেরে নবীনগর – চন্দ্রা মহাসড়কে যান চলাচলে সৃষ্টি হয়েছে ধীর গতির।

আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোস্তফা কামাল বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সড়কে দিবারাত্রিই পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করছি। কিন্তু চন্দ্রা থেকে গাড়িগুলো না টানলে তো আমরা সেখানে ঠেলে দিতে পারি না।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৫
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।