ঢাকা: মো. আলাউদ্দিন শেখ। কুড়িল থেকে ভিক্টর পরিবহনের বাসে উঠেছিলেন গুলিস্তান যাওয়ার জন্য।
মো. জাকির হোসেন। বউ-বাচ্চা নিয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে আছেন নর্দা ফুটওভার ব্রিজের নিচে। যাবেন সাইনবোর্ড। কিন্ত সাইনবোর্ডগামী প্রত্যেকটা বাসের দরজা বন্ধ। ওই বন্ধ দরজা খুলতে হলে জাকির হোসেনকে পকেট থেকে বের করতে হবে ১০০ টাকা। তিনি অপেক্ষায় আছেন কমে যাওয়া যায় কিনা তা দেখার জন্য।
ঈদের আগের দিন বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত কুড়িল বিশ্বরোড, বসুন্ধরার গেট ও নর্দা ফুটওভার ব্রিজের নিচে সরেজমিন পরিদর্শনে এ চিত্র দেখা গেল।
![](files/Public_Suffaring_m3_121279962.jpg)
ঈদের ছুটিতে ঢাকাবাসী যানজটের যন্ত্রণা থেকে কিছুটা নিষ্কৃতি পেলেও গণপরিবহনের ভাড়া নৈরাজ্যে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।
বৃহস্পতিবার সকালে যেসব যাত্রী কম দূরত্বের গন্তবে যেতে ঘর থেকে বেরিয়েছেন তারা পড়েছেন মহাবিপাকে। ১৫/২০ টাকার ভাড়া ৫০/১০০ টাকা দিতে হচ্ছে তাদের।
মহানগরের বেশিরভাগ বাসস্টপেজে গণপরিবহন শ্রমিকরা বাসের দরজা আটকে জন প্রতি ৫০/১০০ টাকা ভাড়া মিটিয়ে যাত্রীদের গাড়িতে তুলছেন। ১৫ টাকার ভাড়া ৫০ টাকা এবং ৩০ টাকার ভাড়া ১০০ টাকা দিতে রাজি না হলে তাদের তোলা হচ্ছে না বাসে। ভাড়া না মিটিয়ে যারা উঠছেন তাদের নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে নির্ধারিত গন্তব্যের আগেই।
![](files/Public_Suffaring_m2_651144879.jpg)
বারিধারা নর্দা ফুটওভার ব্রিজের নিচে কথা হয় ভিক্টর পরিবহনের কন্ডাক্টর রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, এইডা একদিনের কারবার। প্রতিদিন তো আর নেব না।
সাধারণ যাত্রীদের অভিযোগ, গণপরিবহনের এ ভাড়া নৈরাজ্যের সঙ্গে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরাও সম্পৃক্ত। বিভিন্ন স্পটে পুলিশের সামনে এ ধরনের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির অবতারণা হলেও কিছু বলছে না পুলিশ। বরং পরিবহন শ্রমিকদের কাছ থেকে বখরা নিয়ে যাত্রী হয়রানিতে সহযোগিতা করছে।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় বসুন্ধরা গেটের সামনে দায়িত্বপালন করতে দেখা যায় ভাটারা থানার উপ-পরিদর্শক নজরুল ইসলামকে। কুড়িল থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত ১৫ টাকার ভাড়া ৫০ টাকা না দেওয়ায় তার সামনেই বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হয় মো. আলাউদ্দিন শেখকে। কিন্তু নজরুল ইসলাম নির্বিকার।
![](files/Public_Suffaring_m1_941028897.jpg)
এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতেই নজরুল ইসলামের সোজা উত্তর ‘‘লিখিত কমপ্লেন করেন, ব্যবস্থা নেব। ’’ চোখের সামনে ঘটা ভাড়া নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেন-? এমন প্রশ্নে চটে যান পুলিশের উপ-পরিদর্শক নজরুল ইসলাম। তার সঙ্গে থাকা একজন সিপাই ও একজন আনছার সদস্য হয়ে উঠেন মারমুখী।
ঢাকার উত্তর প্রান্ত থেকে দক্ষিণপ্রান্তগামী সালছাবিল, অনাবিল, তুরাগ, ভিক্টর, সুপ্রভাত পরিবহনের বেশিরভাগ বাসেই চলছে এ ভাড়া নৈরাজ্য। বাসের দরজা বন্ধ রেখে স্টপেজে দাঁড়িয়ে থাকা অসহায় যাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে কয়েক শ’ গুণ বেশি ভাড়া।
গন্তব্য যাই হোক, বাসে উঠলেই দিতে হচ্ছে শেষ স্টপেজের জন্য নির্ধারিত ৫০ অথবা ১০০ টাকা করে প্রতিজন।
![](files/Public_Suffaring_m4_555805217.jpg)
কুড়িল বিশ্বরোডে কথা হয় বাসের জন্য অপেক্ষায় থাকা নুরুল ইসলামের সঙ্গে। এ প্রতিবেদককে তিনি জানান, শুধু আব্দুল্লাপুর-যাত্রাবাড়ী-সদরঘাট রুটেই না। অন্যান্য রুটেও একই অবস্থা। সকালে তিনি আজিমপুর থেকে খিলক্ষেত এসেছেন ৩০ টাকার ভাড়া ৫০ টাকা দিয়ে। এখন আজিমপুর ফিরতে ২৭ নম্বর বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু বাসগুলো দরজা বন্ধ করে চলে যাচ্ছে। ভাড়া হাঁকাচ্ছে ৬০ টাকা করে।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৫
এজেড/জেডএম