কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে: রংপুরের যাত্রী আবু হুরায়রা। সকাল থেকেই কমলাপুরে অবস্থান নিয়েছেন ট্রেন ধরার আশায়।
পুরো কমলাপুর রেলস্টেশন জুড়ে যাত্রীদের এমনই হা-হুতাশ। যাত্রীরা নির্ধারিত সময়ের আগে এসে পৌঁছালেও ট্রেনগুলোর দেখা মিলছে না। আর যে দু’একটি আসছে, থামার আগেই তাতে উপচে পড়ছে ভিড়।
চট্টগ্রামগামী চট্টলা ট্রেনটি কমলাপুর ছেড়ে যাওয়ার কথা বেলা ১১টায়। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ট্রেনটি ঢাকায় প্রবেশ করে। সেটি ছাড়তে আরো কিছুক্ষণ দেরি হবে বলে জানালেন যাত্রী হাসিবুল আশরাফ।
পেশায় চাকুরীজীবী এই যাত্রী বলেন, পথের সকল দুর্ভোগের কথা জেনেই বাড়ির পথ ধরেছি। শুধুমাত্র পরিবারের কাছে পৌঁছানোর আশায়। ট্রেনে টিকিট কাটলেও ভিড়ের কারণে নিজের সিটের কাছে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এজন্য ট্রেন ছাড়ার নির্ধারতি সময়ের দেড় ঘণ্টা আগেই স্টেশনে এসেছি। জানি না কখন ট্রেনটি ছাড়বে। আর কখনই বা গন্তব্যে পৌঁছাবে।
এভাবেই কমলাপুর স্টেশন জুড়ে মানুষের অপেক্ষা। কোনো একটি ট্রেন এসে থামলেই সেটির যাত্রীরা হুমড়ি খেয়ে গিয়ে উঠছেন তাতে। সবারই লক্ষ্য, কোনো রকমে নিজের আসনটি দখল করা। সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন যারা পরিবার নিয়ে উঠতে যাচ্ছেন তারা।
চট্টলা ট্রেনটি এসে থামার সঙ্গে সঙ্গেই যেদিক থেকে পারেন সেদিক থেকেই যাত্রীদের উঠতে দেখা গেছে। কেউ জানালা, কেউ দরজা দিয়ে বগিগুলোতে ওঠার চেষ্টায় রত। অন্যদিকে ছাদে ওঠার প্রতিযোগিতাও চলছে। নিরাপত্তাকর্মীরা একদিক থেকে নামিয়ে দিচ্ছেন, অন্যদিকের ছাদ ভরে যাচ্ছে যাত্রীতে। এ অবস্থায় নিরাপত্তা কর্মীরাও হিমসিম খাচ্ছেন। তবে মানুষকে আটকানো দায় বুঝতে পেরে এ অনিয়ম দেখেও না দেখার ভান করছেন কোনো কোনো নিরাপত্তা কর্মী।
![](files/Rail_150924_21_m3_612525870.jpg)
ইশ্বরদী থেকে ছেড়ে আসা ৫০১ নম্বর ফার্স্ট প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি ঢাকায় আসার কথা সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে। কিন্তু ট্রেনটির খবর নেই। এ ট্রেনটিরই আবার ঢাকার যাত্রী নিয়ে ইশ্বরদী যাওয়ার কথা। যাত্রীরাও স্টেশনে অপেক্ষমান।
সাবিনা খাতুন নামে এ ট্রেনের অপেক্ষায় থাকা এক যাত্রী বলেন, নিরাপদে যাওয়ার জন্যই ট্রেনে যেতে চাই। কিন্তু ট্রেনটি এখনো ঢাকাতেই পৌঁছেনি। কাল ঈদ। জানি না আদৌ তার আগে বাড়ি পৌঁছাতে পারবো কি-না। চারদিক থেকেই পথের নানা ভোগান্তির খবর পাচ্ছি।
রেল কর্মকর্তারা জানান, ঈদের আগের দিন স্বাভাবিকভাবেই একসঙ্গে সবচেয়ে বেশি মানুষ ঢাকা ছাড়েন। এ কারণে সারা দেশের রেলপথ, সড়কপথ, নৌ-পথ সবই ব্যস্ত থাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে আমরা সচেতন আছি, যাতে যাত্রীদের অপেক্ষা দীর্ঘ না হয়।
কমলাপুরে কথা হয় এগারসিন্দুর প্রভাতী, সুবর্ণ এক্সপ্রেস, কাকলী এক্সপ্রেস, মহানগর প্রভাতী, সিল্ক সিটিসহ বিভিন্ন রুটের ট্রেন যাত্রীদের সঙ্গে। রুট ভিন্ন হলেও এখানে সবাই আছেন ট্রেনের অপেক্ষায়।
তবে এসব যাত্রীদের নিরাপত্তায় র্যাব, পুলিশ, বিজিবি ছাড়াও রেলওয়ের দু’টি নিরাপত্তা বাহিনী সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে বলে রেলওয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৫
জেপি/এএসআর