ঢাকা: লঞ্চ, পল্টুন, ঘাট ও সদরঘাটগামী রাস্তা জুড়ে মানুষ আর মানুষ। রাস্তা দেখে মনে হবে, কোনো মিছিল বা সমাবেশ।
বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকালে সদরঘাট এলাকায় এ চিত্র চোখে পড়ে।
লঞ্চের ডেকে, ছাদে, সিঁড়ির ওপর-নিচে, প্রবেশ পথে, এমনকি সাইলেন্সারের পাশেও যাত্রী। কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। পল্টুনে হাঁটা যায়না যাত্রীদের চাপে। পল্টুন থেকে ঘাটের সিঁড়িতেও মানুষ। রাস্তায় ঘাটমুখী মানুষ।
সদরঘাট ঘুরে দেখা যায়, যে যার মতো করে লঞ্চে বসে পড়েছেন। কেউ লঞ্চের ডেকে সিট পেয়েছেন, কেউ ছাদে। কেউবা আবার সিঁড়িতে, প্রবেশ পথে। অনেকে সাইলেন্সারের পাশেও বসেছেন।
আবার গন্তব্যের লঞ্চের আসায় পল্টুনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় অনেকে। সবার গন্তব্য একই। আপনজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি এবং ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত হয়ে কোরবানি দেওয়া।
এদিকে, যাত্রীদের চাপের সুযোগে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে লঞ্চগুলো। যে যার মতো দ্বিগুণ বা তার চেয়েও বেশি ভাড়া আদায় করছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের।
![](files/September2015/September24/sadarghat_1_925209753.jpg)
এমভি সৈকত-৯, ঢাকা থেকে আমতলীগামী লঞ্চ। উঠতেই প্রবেশ পথে দাঁড়িয়ে আছেন তিন-চারজন নারী। কথা বলে জানা যায়, তারা গার্মেন্টসে চাকরি করেন। স্বামী-সন্তান-বাবা-মার সঙ্গে ঈদ উদযাপনে বাড়ি যাচ্ছেন।
প্রবেশ পথে কেন দাঁড়িয়ে? এমন প্রশ্নের জবাবে রাজিয়া নামের এক নারী বললেন, ভেতরে প্রবেশের জায়গা নেই। কোনোভাবে প্রবেশ করতে পারলেও বসার সুযোগ নেই। লঞ্চ ছাড়লে এখানেই (প্রবেশপথ) বসে পড়বো।
ভাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, স্বাভাবিক সময়ে ডেকে ভাড়া নেয় ১৫০-২০০ টাকা। এখন ৩৫০ টাকা করে নিচ্ছে।
লঞ্চ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে অবশ্য তথ্যের সত্যতা পাওয়া যায়। এক কর্মকর্তা বলেন, কেবিনে সিঙ্গেল ১৫০০, ডাবল ২৫০০ টাকা। তবে, স্বাভাবিক সময়ে সিঙ্গেল ৮০০, ডাবল ১৫০০ টাকা নেওয়া হয়।
এছাড়া অতিরিক্ত যাত্রী বহন বা ছাদে যাত্রী নেওয়া আইনত দণ্ডনীয় হলেও মিতালী-৬ (ঢাকা-মুলদি), পারাবত (ঢাকা-বরিশাল), পূবালী (পটুয়াখালী-গলাচিপা), দ্বীপরাজ (ঢাকা-মাদারীপুর), প্রিন্স আওলাদ-৪ (ঢাকা-মৌলভিরহাট), এমভি ফারহান-৬ (ঢাকা-চারফ্যাশন), এমভি টিপু-৬ (ঢাকা-দৌলতখা) সবগুলো লঞ্চই অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই করে ছেড়ে গেছে।
এদিকে, পারাবত (ঢাকা-বরিশাল) লঞ্চে যখন পা ফেলার সুযোগ নেই তখন মাইকে ঘোষণা আসছে, এখন পারাবত বরিশালের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। যারা বরিশাল যাবেন, পারাবতে উঠেন।
![](files/September2015/September24/sadarghat__11__676385826.jpg)
তবে যাত্রীর তুলনায় লঞ্চের সংখ্যা কম। কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যের লঞ্চের অপেক্ষায় হাজার হাজার যাত্রী পল্টুনে, পল্টুনের সিঁড়িতে ও ঘাটে অপেক্ষা করছেন।
পল্টুনে যুবকদের একটা জটলায় কথা বলে জানা যায়, তারা বায়িং হাউজে কাজ করেন। যাবেন পটুয়াখালী। দু’ঘণ্টা অপেক্ষা করেও লঞ্চ পাচ্ছেন না। বিআইডব্লিউটিএ’র অনুসন্ধান কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী ওই সময়ে পটুয়াখালী বা ভোলাগামী কোনো লঞ্চও নেই।
মানুষের চাপের কারণে পরিস্থিতি সমাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডিব্লউটিএ) এবং আইন শৃঙ্খলায় নিয়োজিত পুলিশ, নৌপুলিশ, র্যাব ও আনসার সদস্যদের।
নৌ-পুলিশ, ঢাকার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মইনউদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা লঞ্চ মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে অনেকগুলো নির্দেশনা দিয়েছি। যাত্রীদের সতর্ক করতে মাইকিং, প্রজেক্টরে ভিডিও প্রদর্শন ও লঞ্চে সিডি সরবরাহ করে সতর্কতা দিচ্ছি। তারপরও অনেক নিয়মই লঙ্ঘন হচ্ছে। আজ কয়েক লাখ যাত্রী মুভ করবে। এজন্য অনেক নিয়মই পালন হচ্ছে না, হবেও না।
অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা নিয়ে একটা তেলেসমাতি কাণ্ড চলে। সরকার থেকেই অতিরিক্ত ভাড়া নির্ধারণ করা আছে। কারণ লঞ্চগুলো স্বাভাবিক সময়ে ৯০ থেকে ২০০ টাকায় ভ্রমণ করা যায়। আর সরকার নির্ধারিত ভাড়া ২৫৫ টাকা। এখন তারা অনেকেই ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা নিচ্ছেন। আমাদের কিছু করার থাকে না।
![](files/September2015/September24/sadarghat__21__144285941.jpg)
মইনউদ্দিন আহমেদ জানান, সকালে অনেক বেশি চাপ ছিল। এখন একটু কম। তবে দুপুরের পরে আরেকটু চাপ পড়তে পারে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদিন বাংলানিউজকে বলেন, গতকাল (বুধবার) গার্মেন্টসগুলো ছুটি হওয়ায় যাত্রীদের চাপ একটু বেশি। রাতে ১০ হাজার যাত্রী ঘাটে ছিল। সকালেও আসছে। সকাল থেকে এখন পর্যন্ত (সোয়া ১০টা পর্যন্ত) ৩৮টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। গতকাল ১৩২টি লঞ্চ আমরা ছেড়েছি। আজও সমপরিমাণ লঞ্চ ছেড়ে যাবে।
অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে না বলে দাবি তার। অতিরিক্ত যাত্রীবহনের বিষয়টিও নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন, কিন্তু চাপের কারণে কিছু করার থাকে না বলেও জানান জয়নাল আবেদিন।
বিআইডব্লিউটিএ’র চার্টার অনুয়ায়ী, দেশের বিভিন্ন গন্ত্যব্যে যাওয়ার জন্য ১৭৯টি লঞ্চ আছে। তারমধ্যে বিভিন্ন শিডিউলে দৈনিক ৯৩টি লঞ্চ সদরঘাট ছেড়ে যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৫
এসইউজে/জেডএস