ফরিদপুর: ঈদ বা অন্য কোনো উৎসবকে সামনে রেখে বরাবরই নতুন নোটের প্রতি ঝোঁক থাকে সবার। উৎসবে বখশিস, সেলামি দেওয়া থেকে শুরু করে উৎসবের কয়েকদিন রিকশা ভাড়াসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে এ নতুন নোট খরচ করা গ্রাহকদের কাছে একটি মর্যাদার ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে।
কিন্তু এবার সোনালী ব্যাংক নতুন নোট সরবরাহ না করায় ফরিদপুরের গ্রাহকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
ঈদ-উল আযহাকে সামনে রেখে নতুন টাকার নোট দিতে না পেরে গ্রাহকদের তোপের মুখে পড়ছেন সোনালী ব্যাংক ফরিদপুর কর্পোরেট শাখার কর্মকর্তারা। পাশাপাশি তারা ফরিদপুরে কর্মরত ২৯টি বেসরকারি ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বিরাগভাজন হয়েছেন।
সোনালী ব্যাংকের গ্রাহক শহরের আলীপুর এলাকার আজম খান বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বাংলানিউজকে বলেন, ঈদ উপলক্ষে নতুন টাকার জন্য আমি বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ১০ হাজার টাকার একটি চেক জমা দেই। লেনদেনের সময় শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেছি। কিন্তু ব্যাংক আমাকে নতুন নোট দেয়নি।
পশ্চিম খাবাসপুর এলাকার স্কুল শিক্ষক সোনিয়া চৌধুরী বলেন, নতুন টাকার জন্য বুধবার আমি ব্যাংক থেকে পাঁচ হাজার টাকা তুলি। কিন্তু আমাকে কোনো নতুন নোট দেওয়া হয়নি।
ফরিদপুর সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মনিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, শুধু ঈদ-উল আযহা কেন, ঈদ-উল ফিতরের সময়ও সোনালী ব্যাংক আমাদের নতুন টাকা দেয়নি। ফরিদপুরে কর্মরত ২৯ বেসরকারি ব্যাংক এ ব্যাপারে সোনালী ব্যাংকের প্রধান শাখায় লিখিত অভিযোগ করেছিল বলেও তিনি নিশ্চিত করেন।
সোনালী ব্যাংক ফরিদপুর কর্পোরেট শাখা সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংকের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার আব্দুল ওয়াহাব খান বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল শাখার কারেন্সি কর্মকর্তার কাছে ঈদকে সামনে রেখে গত ২০ জুলাই এক হাজার টাকা, পাঁচশ’ টাকা, একশ’ টাকা, পঞ্চাশ টাকা, কুড়ি টাকা, দশ টাকা ও পাঁচ টাকার বিপরীতে ৫০ কোটি টাকার নতুন নোট চান। গত ৬ সেপ্টেম্বর, ১৩ সেপ্টেম্বর ও ২০ সেপ্টেম্বর তিন দফা টেলেক্স ও কুরিয়ারের মাধ্যমে পুনরায় তাগিদ দেন। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে টেলিফোন বা মোবাইল ফোনেও একাধিকবার এ ব্যাপারে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কিন্ত এ আবেদন ও তাগিদের প্রতি কোনো গুরুত্ব না দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক গত ২১ সেপ্টেম্বর ফরিদপুর সোনালী ব্যাংকের কর্পোরেট শাখায় ৫০ কোটি টাকা পাঠালেও কোনো নতুন নোট দেয়নি।
এদিকে বিভিন্ন পত্রিকা ও টেলিভিশনে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রচার করেছে, ২৫ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট ছাপানো হয়েছে। নতুন ছাপানো কোনো নোট ফরিদপুরে না পাঠানোয় ঈদ-উল আযহার সামনে সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে বিপাকে পড়তে হয়েছে। তারা গ্রাহকদের নতুন নোট দিতে পারেনি। পাশাপাশি ফরিদপুরে কর্মরত ২৯টি প্রাইভেট ব্যাংকের চাহিদাও পূরণ করতে পারেনি। ওই ২৯টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপকরা এক যুক্ত অভিযোগে এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ফরিদপুর সোনালী ব্যাংক কর্পোরেট শাখার বিরুদ্ধে অভিযোগ পর্যন্ত করেছেন।
সোনালী ব্যাংক ফরিদপুর কর্পোরেট শাখার সহকারী জেনারেল ম্যানেজার আব্দুল ওয়াহাব খান বলেন, দুই মাস আগে থেকেই আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে টাকা চেয়ে আসছি। কিন্তু তারা আমাদের কোনো নতুন নোট দেয়নি। এ কারণে আমরা গ্রাহক ও ফরিদপুরে কর্মরত বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংকের বিরাগভাজন হয়েছি, রয়েছি তোপের মুখে।
তিনি বলেন, অথচ পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জেনেছি, ২৫ হাজার কোটি টাকা মূল্যের বিভিন্ন মানের নতুন নোট ছাপানো হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৫
এএসআর