গাবতলী পশুর হাট থেকে: মিরপুর ১৪ নম্বরের রফিকুল ইসলাম। গাবতলী পশুর হাটে এসেছিলেন গরু কিনতে।
গরু না কেনা প্রসঙ্গে রফিকুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুর থেকে হঠাৎ গরুর বাজারে আগুন। ভেবেছিলাম, গত বছরের মতো এবারও গরুর দাম শেষ বেলায় কমবে। কিন্তু সেটা আর হল না। গত দুই দিনের চেয়ে বৃহস্পতিবার হাটে গরুর দাম হঠাৎ করেই বাড়লো।
তিনি আরও বলেন, এ বছর হয়তো গরুর বদলে অন্যকিছু কোরবানি দিতে হবে।
শেষ মুহূর্তেও পশুর হাটে মায়ানমারের গরুর কোনো দেখা মেলেনি। তবে ভারতীয় ও নেপালি কিছু গরু দেখা গেছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ সংখ্যা একেবারেই হাতে গোনা।
শেষদিন পযর্ন্ত রেখে যেসব গরু ব্যবসায়ী ঝুঁকি নিয়ে গরু বিক্রি করেছেন তারা অনেক লাভ করেছেন। মাত্র একদিনের ব্যবধানে অনেকে মাঝারি দেশি ষাঁড় গরু প্রতি ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা অতিরিক্ত লাভ করেছেন।
চাপাইনবাবগঞ্জের কানসাটের হাসমত বেপারি বৃহস্পতিবার ২২টি দেশি মাঝারি ষাঁড় বিক্রি করেছেন। প্রতিটি গরুতেই লাভ করেছেন তিনি। গরু বিক্রি করে তার মনে যে অনেক খুশি, তার মুখায়ব দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। মাঝে মধ্যে আনন্দ উল্লাস করছেন অন্য ব্যবসায়ীরাও।
গরু বেচা-কেনা কেমন হলো এমন প্রশ্নের জবাবে একগাল হেসে হাসমত বেপারি বলেন, ‘পর পর দুই বার লস খাইয়ে বাড়ি ফিরচি। খইদদিরে দুই কোরবানি মজা লুটেছে। এবার আমরা উল্টা মজা লুইটে নিয়েছি। সব গরুতে আল্লাহ দিলে ভালো পয়সা হয়েছে’।
![](files/Gobtoly_hat00_717554982.jpg)
বৃহস্পতিবার ব্যবসায়ী ও ক্রেতা সমান তালে আফসোস করেছেন। অনেক ব্যবসায়ী আফসোস করছেন কম লাভে মঙ্গলবার ও বুধবার গরু বিক্রি করে। তারা বলছেন, ঝুঁকি নিয়ে বৃহস্পতিবার গরু বিক্রি করলে আরও বেশি লাভ হতো।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের ময়েজ বেপারি বলেন, ২৮টা গরু আনছি। দুইবার ৫ লাখ টাকা বসান খাইচি (লোকসান)। সেই ভয়ে ১৫টা গরু আগেভাগে বিক্রি করছি। শেষ দিনে(বৃহস্পতিবার) ১৩টি গরুতে আল্লাহ অনেক লাভ দিয়েছে। গরুগুলো শেষ দিনে বিক্রি করলে আরও লাভ হতো। শেষ বেলায় গরুর দাম বাড়বে কে ভেবেছে?
অন্যদিকে শেষদিনে কম দামে গরু কেনার আশায় থেকে অনেক ক্রেতা আফসোস করছেন। কারণ, বৃহস্পতিবার গরুর দাম আগুন। মঙ্গলবার ও বুধবার সেই তুলনায় গরুর দাম অনেক কম ছিল।
বৃহস্পতিবার ঘড়ির কাটা বাড়ার সঙ্গে বাড়তে থাকে ক্রেতাদের ঢল। রাত সাড়ে ৮টার সময়ও স্রোতের মতো বাজারে প্রবেশ করতে থাকেন ক্রেতারা। কিন্তু সেই তুলনায় গরু হাতে গোনা। যেসব গরু আছে তার দাম আকাশচুম্বি।
শেষ মুহূর্তে বড় গরুরও চাহিদাও বাড়তে থাকে। সাড়ে ৫ মণ মাংস হবে এমন গরু শেষ বেলায় এক লাখ ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
কুষ্টিয়া সদরের জামান বেপারি ৩০টি গরু গাবতলী হাটে এনেছিলেন। এর মধ্যে ১০টি গরু বৃহস্পতিবার শেষ সময়ে লাভে বিক্রি করেছেন।
জামান বেপারি বাংলানিউজকে বলেন, শেষ মুহূর্তে গরু না রেখে খুবই ভুল করেছি। গতকাল (বুধবার) হাতির সমান গরু (বড় গরু) দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করেছি। আজকে সাড়ে পাঁচ মণ মাংস হবে সেই গরু এক লাখ ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। সমস্ত গরু শেষদিনে বিক্রি করলে আরও দুই লাখ টাকা লাভ করতাম’।
রাত দশটায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গাবতলী হাটের প্রবেশদ্বার ও আশেপাশের সমস্ত গরু বিক্রি হয়ে গেছে। শুধু ভেতরে কিছু গরু আছে যেগুলোর দাম দ্বিগুণ হাঁকাছেন ব্যবসায়ীরা।
শেষদিনে গরুর দাম বাড়ায় ক্রেতা-ব্যবসায়ীরা মিডিয়াকেও দুষছেন।
ধানমণ্ডি জিগাতলার ক্রেতা হারুন মুন্সি বলেন, ‘আমরা পেপার পত্রিকায় দেখেছি, ভারত-মায়ানমার থেকে গরু আসবে, শেষ বেলায় গরু দাম কমবে। কিন্তু হাটে দেখছি দেশি গরু। ছোট ছোট গরুর দাম দ্বিগুণ চাইছেন বিক্রেতারা’।
গরুর সংকটের কারণে হেসেছেন বড় গরুর ব্যবসায়ীরাও। চুয়াডাঙ্গার খামারি আওয়ালুজ্জামান রাসেল হাটে ১৪০টি বড় গরু এনেছিলেন। এর মধ্যে ১২৬টি গরু লাভে বিক্রি করেছেন তিনি। প্রতিটি গরুর মূল্য আনুমানিক ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা।
রাসেল বলেন, ‘ভারত ও মায়ানমারের গরু কম আসায় আমাদের জন্য আরও ভালো হয়েছে। আল্লাহ দিলে প্রতিটা গরুতে ভাত-কাপড়ের টাকা হয়েছে’।
রাতে দশটার সময় হাটে ক্রেতার ঢল আরও বাড়তে থাকে। এতে করে অনেক ক্রেতাকে গরু ছাড়াই হাট ছাড়তে হবে বলেও আশঙ্কা করছেন অনেকে।
বাংলাদেশ সময়: ২২১৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৫
এমআইএস/এএসআর
** গরুর সংকট, হঠাৎ দাম চড়া
** শেষ মুহূর্তে কোরবানির পশু কেনার হিড়িক