ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

রিকশাচালকদের ঈদ ভাবনা

সাঈদ শিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২১৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৫
রিকশাচালকদের ঈদ ভাবনা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। ঈদে ছোট-বড় সবাই সাজবেন নতুন পোশাকে।

ঘরে ঘরে সেমাই, পায়েস, পোলাও, মাংসসহ থাকবে বাহারি খাবারের আয়োজন। এটাই বাঙালির চিরায়ত সংস্কৃতি।

সকালে ঈদুল আজহার নামাজ শেষে সামর্থবানরা আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পন্ন করবেন কোরবানির কার্যক্রম। চলবে মাংস নিয়ে ব্যস্ততা। এছাড়া ঈদের বিকেলে যার যার মতো করবেন ঈদ উদযাপন।

তবে যাদের সামথ্য নেই কোরবানি করার তাদেরও তো ঈদ, তারাও নিয়েছেন প্রস্তুতি। কেউ নামাজ শেষে বন্ধু-বান্ধব নিয়ে বেরিয়ে পড়বেন ঘুরতে। সারাদিন এখানে ওখানে ঘোরাঘুরির মাধ্যমে কেটে যায় তাদের সময়।

কেউ বেড়াতে বের হবেন নিকট আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে। কেউ বা আবার দলবেঁধে ছুটে যাবেন সিনেমা হলে, একটু বিনোদনের আশায়। কারো সময় পার হবে মারবেল, তাস, কেরাম খেলায়।

হোক সে ধনী, গরিব, নিম্ন-মধ্যবিত্ত। ঈদ নিয়ে সবারই থাকে নিজস্ব কিছু ভাবনা। এবারের ঈদুল আজহা বা কোরবানি ঈদ নিয়ে কি ভাবছেন রিকশাচালকরা? সে সম্পর্কে জানতে বাংলানিউজের পক্ষ থেকে কথা হয় রাজধানীর বেশ কয়েকজন রিকশাচালকের সঙ্গে। সে থেকে তুলে ধরা হলো তাদের অভিমত।


রফ মিয়া
বয়স ৬০ পেরিয়েছে। জন্ম ফরিদপুরে। বছর ৩০ আগে আয়-উন্নতির আশায় চলে আসেন রাজধানী ঢাকায়। পরিবারের ভরণ-পোষণ চালাতে শুরু করেন রিকশা চালানো। শেষ বয়সে এসেও পরিবারের সদস্যদের মুখে খাবার তুলে দিতে রিকশা দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন রাজধানীতে।
 
ঈদ উদযাপনের বিষয়ে রফ মিয়া বলেন, আগে ঈদ অনেক আনন্দে কাটতো। একমাত্র ছেলে ৭ বছর আগে মারা গেছেন। ঈদ আসলেই ওর কথা মনে পড়ে। বড় চঞ্চল ছিল ছেলেটা।

এরপর একটু থেমে তিনি বলেন, ঘরে শুধু এক মেয়ে। ইচ্ছে আছে ঈদের দিন মেয়ে আর ওর মাকে নিয়ে হাতিরঝিলে ঘুরতে যাবো। আমাদের তো আর কোরবানি দেওয়ার সামর্থ নেই, তাই মুরগি অথবা গরুর মাংস কিনে একটু ভালো খাবারের আয়োজন করবো।


বেলাল হোসেন
বগুড়ার বেলাল হোসেন রাজধানীতে রিকশা চালাচ্ছেন ৪ বছর ধরে। ৪ মেয়ে ও ১ ছেলের জনক এই রিকশাচালক বলেন, আমার বাবা ছিলেন গরিব। ঈদে তেমন কিছু দিতে পারতেন না। তবে আমি চেষ্টা করি ঈদে পরিবারের সদস্যদের কিছু দেওয়ার জন্য। তবে সাধ থাকলেও সব সময় সামর্থে কুলায় না।
 
তিনি বলেন, আমাদের পক্ষে কোরবানি দেওয়া সম্ভব হয় না। তবে গ্রামে যাদের অর্থ আছে তারা কোরবানি দেন। সেখান থেকে আমরাও কিছু গোস্ত পাই। ফলে কোরবানির ঈদে আর গোস্ত কেনা লাগে না।


কাওসার
দুই ছেলের জনক পঞ্চগড়ের কাওসার বলেন, চাঁদ রাতে গ্রামের বাড়িতে যাবো। পরিবারের সবাই মিলে এক সঙ্গে ঈদ করবো। সেমাই, পায়েশ, পোলাও, গোস্তসহ পরিবারের সবার জন্য কিছু ভালো খাবারের আয়োজন থাকবে। ঈদ তো আর সব সময় হয় না, বছরে দুইবার আসে। যত কষ্টই হোক এই দুইদিন সবাই মিলে ভালো খাবার খেতে চাই।


কামাল
গাইবান্ধার কামাল রাজধানীতে রিকশা চালাচ্ছেন ২ বছর ধরে। বাবা-মা, স্ত্রী আর ২ সন্তান নিয়ে সংসার তার। রিকশা চালিয়ে যে আয় করেন তা দিয়েই চলে রাজধানীতে নিজের ও গ্রামের বাড়িতে পরিবারের অন্য সদস্যদের ভরণ-পোষণ।
 
ঈদ কিভাবে উদযাপন করবেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভাই আমাদের আবার ঈদ! রিকশা চালিয়ে যে আয় করি তা দিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কোনো রকমে খেয়ে-পড়ে জীবন চলে। ঈদে কোরবানি দেওয়া অথবা দুই ঈদেই নতুন পোশাক আমাদের জন্য বিলাসিতা। তারপরও চেষ্টা করবো সবাই যাতে ঈদের দিন ভালো খাবার খেতে পারি তার ব্যবস্থা করার।


রাহুল
কিশোরগঞ্জের রাহুল বলেন, গ্রামের বাড়িতে স্ত্রী ও দুই মেয়ে আছে। সেমাই-চিনির জন্য গ্রামে টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি। ঈদের আগে আমার গ্রামে যাওয়া হবে না। রিকশা চালিয়েই ঈদের দিন কেটে যাবে। হাতে কিছু টাকা জমলে ঈদের ৩-৪ দিন পরে গ্রামে যাবো সবার সঙ্গে দেখা করতে।


জামাল
দুই ছেলে ও দুই মেয়ের জনক জামালের বাড়ি ময়মনসিংহে। সবাইকে গ্রামে রেখে নিজে থাকেন রাজধানীর একটি মেসে। ঈদের আগের দিন রাতে সেমাই-চিনি কিনে গ্রামে যাওয়ার ইচ্ছে তার।
 
তিনি বলেন, আমি ঢাকায় থাকি। তাই গ্রামের বাড়িতে সবারই কিছু প্রত্যাশা থাকে। কিন্তু সব সময় সব প্রত্যাশা পূরণ করা যায় না। রোজার ঈদে সবাইকে নতুন পোশাক দিয়েছি। কিন্তু এবার দিতে পারবো না। আর কোরবানি দেওয়ার সামর্থ আমাদের নেই।


রুবেল
বগুড়ার রুবেল ঈদের খরচ সংগ্রহে দিন ১৫ আগে এসেছেন রাজধানীতে। তিনি বলেন, গ্রামের বাড়িতে বাবা-মা ও ভাই-বোন আছেন। আমিও গ্রামে থাকি। ঈদ উপলক্ষে ঢাকায় রিকশা চালাতে এসেছি। এর আগেও কয়েকবার ঈদের আগে রিকশা চালাতে এসেছিলাম।
 
অন্য সময় কী করেন? জানতে চাইলে রুবেল বলেন, বাবা গ্রামের বাড়িতে কৃষি কাজ করেন। আমিও মানুষের জমিতে কাজ করি। মাঝে মধ্যে ঢাকাতে রিকশা চালাতে আসি।


আজিজুর
দিনাজপুরের আজিজুর সাত বছর ধরে ঢাকাতে রয়েছেন। রিকশা চালিয়েই চলে তার সংসার। দুই ছেলে আর স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকাতেই ঈদ করার ইচ্ছে।
 
আজিজুর বলেন, আমাদের পক্ষে কোরবানি দেওয়া সম্ভব না। এতো টাকা নেই। তবে মহল্লায় যারা কোরবানি দেন তারা মাংস দেবেন। তা দিয়েই চলে যায়। ইচ্ছে আছে দুপুরে একটু ভালো-মন্দ খেয়ে বিকেলে সবাই মিলে ঘুরতে বের হবো।
 
বাংলাদেশ সময়: ০২১৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৫
এএসএস/আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।