ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

বিমা নির্বাহীদের কোরবানির ঈদ

সাঈদ শিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৩৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৫
বিমা নির্বাহীদের কোরবানির ঈদ

ঢাকা: ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। এই আনন্দ-খুশি ভাগাভাগি করতে একেক জনের থাকে একেক পরিকল্পনা।

আর সেই পরিকল্পনা সাজায় প্রত্যেকের নিজস্ব চিন্তা-চেতনায়।

আনন্দের মুহূর্তগুলোকে আরো আনন্দময় করতে কত পরিকল্পনাই না করি আমরা! বয়স ভেদে রয়েছে সেই পরিকল্পনায় ভিন্নতা। শৈশবের উদযাপন এক রকম। কর্মজীবনের আরেক রকম।

এবারের ঈদ উদযাপনে কী পরিকল্পনা করেছেন বিমা কোম্পানির শীর্ষপদের কর্মকর্তারা! কেমন ছিল তাদের শৈশবের ঈদ, তা বাংলানিউজের পাঠকদের উদ্দেশে তুলে ধরতে বাংলানিউজ কথা বলে কয়েকটি কোম্পানির শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে।
 
শেখ কবির হোসেন
বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) প্রেসিডেন্ট ও সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সর চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন।

পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঢাকাতে এবারের কোরবানির ঈদ উদযাপনের পরিকল্পনা করেছেন। সেই সঙ্গে ঈদের দিন লায়ন্স’র সদস্য, বিমার ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জড়িতদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করার পরিকল্পনা রয়েছে শেখ কবির হোসেনের।
 
শৈশবের ঈদের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, সে সময় গ্রামের বাড়িতে বাবা-মায়ের সঙ্গে ঈদ করতাম। রাতের বেলা প্রতি ঘরে হারিকেনের আলো জ্বালতো। সবাই যখন ঈদ করতে গ্রামে যেতাম, সেই আলোয় আলোকিত হয়ে উঠতো সমগ্র বাড়ি। এখনকার বিদ্যুতের আলো সেই আলোর কাছে কিছু না।

এখন প্রধানমন্ত্রী টুঙ্গিপাড়ায় গেলে যেমন সবকিছু আলোকিত হয়, সেই সময় ঈদের সময় ঠিক তেমন হতো।
 
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বাড়িতে গেলে রাজনৈতিক কর্মীদের সঙ্গে যেমন দেখা করেন, তেমনি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলাদাভাবে দেখা করেন। এতে আনন্দঘন এক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এবার আমার সেই পরিবেশ থেকে বঞ্চিত হবো। কারণ, এবার প্রধানমন্ত্রী ঈদের সময় দেশে থাকছেন না।
 
কবির হোসেন বলেন, শৈশবে পনি দিয়ে যে আইসক্রিম বানানো হতো তা খেয়ে অনেক আনন্দ পাওয়া যেতো। এখন অনেক সুন্দর আইসক্রিমেও সেই আনন্দ পাওয়া যায় না। শৈশবে এক ঘর থেকে অন্য ঘরে যেতাম, ঘুরতাম, খাইতাম। এখন আর তা হয় না।
 
এ বি এম নূরুল হক
এ বি এম নূরুল হক দীর্ঘদিন মেঘনা ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি প্রতিষ্ঠানটির উপদেষ্টা পদে রয়েছেন। এই বিমা নির্বাহীর শৈশবের ঈদের রয়েছে এক মধুর স্মৃতি।
 
এ বিষয়ে তিনি বলেন, বাবা ছোট চাকরি করতেন। আমরা ১০ ভাইবোন ছিলাম। একবার মার্কেটে গিয়ে একটি লাল চেক শার্ট খুব পছন্দ হয়। কিন্তু বাবার তেমন সামর্থ্য ছিল না। সে কারণে বাবা তা কিনে দিচ্ছিলেন না। তবে আমার আবদার ও কান্নাকাটির কারণে এক পর্যায়ে বাবা ওই শার্টটি কিনে দিতে বাধ্য হন। এতে আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু বাবার যে কী কষ্ট হয়েছিল, তা সে সময় বুঝতে পারিনি।
 
এবারের ঈদ পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি বলেন, ঈদের আগের দিন বাজারে গিয়ে গরু কিনবো। তারপর ঈদের দিন গরুর জবাই করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে মাংস ভাগ করবো। আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে পাঠাবো। ঈদ নিয়ে এর বাইরে বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নেই।
 
এ কে এম শরিফুল
ডায়মন্ড লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম শরিফুল ইসলাম। আত্মীয়-পরিজন নিয়ে ঢাকাতে ঈদ উদযাপনের পরিকল্পা করেছেন এই বিমা নির্বাহী।
 
তিনি বলেন, ছাত্রজীবনে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যেতাম। এখন ভাইবোন সবাই ঢাকাতে সেটেলড। সে কারণে ঢাকাতে‌ই ঈদ করা হয়।
 
শৈশবের ঈদের স্মৃতিচারণ করে শরিফুল বলেন, আগে কোরবানির ঈদ হতো শীতকালে। তখন গ্রামে যাওয়া হতো। সেই সময়ের পরিবেশ ছিল খুবই চমৎকার। শৈশবের ঈদ ছিল স্বাধীন। আর বর্তমানে ঈদ মানেই একটি চাপ। শৈশবে আবদার করতাম, ‌আর এখন অন্যের আবদার পূরণ করি। অবশ্য অন্যের আবদার পূরণেও অন্যরকম আনন্দ আছে।
 
জামিরুল ইসলাম
জামিরুল ইসলাম বলেন, এখন বাবা-মা নেই। তাই এবারের ঈদ হবে গতানুগতিক। বরাবরের মতো এবারও ঢাকাতে ঈদ করবো। শৈশবে বাবা-মায়ের সঙ্গে ঈদ করতাম। সেই ঈদে অনেক আনন্দ হতো। এখন বাবা-মাকে ছেড়ে ঈদ করতে কষ্ট হয়। শৈশবে অনেক বন্ধু-বান্ধব ছিল। অনেকের সঙ্গে দেখা হতো, কথা হতো। সেই সময় মানুষের মধ্যে আন্তরিকতা ছিল অনেক। এখন সেই পরিবেশটা খুব একটা পাওয়া যায় না।

শৈশবে বাবা-মা আমাদের আবদার পূরণ করতেন। এখন আমরা আমাদের ছেলে-মেয়েদের আবদার পূরণ করি। ভবিষ্যতে আমার ছেলে-মেয়েরা তাদের ছেলে-মেয়েদের আবদার পূরণ করবে। এটি হলো আমাদের ঐতিহ্য। এভাবেই নিজের ঈদ ভাবনা ও শৈশব স্মৃতি তুলে ধরেন ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স’র মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জামিরুল ইসলাম।
 
মো. হাফিজউল্লাহ
এবার আমি পরিবার-পরিজন নিয়ে গতানুগতিক ঈদ উদযাপন করবো। অন্যবারের মতো ঢাকাতেই কোরবানি দেবো। ঈদ নিয়ে বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নেই। এবারের কোরবানির ঈদ উদযাপনের বর্ণনা এভাবে দেন কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হাফিজউল্লাহ।
 
শৈশবের ঈদের বিষয়ে তিনি বলেন, শৈশবে গ্রামে ঈদ করতাম। সেখানে কোরবানি করতাম। এখন আর তা হয়ে ওঠে না। শৈশবের ঈদে অনেক আনন্দ হতো। গ্রামে সমাজ আছে। মাংসের তিন ভাগের একভাগ সমাজে আসতো। সেগুলো সমাজের সব মানুষের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হাতো। আমরা সেই ভাগের দায়িত্বে থাকতাম। এতে অন্যরকম এক আনন্দ ছিল। এখন আর তা হয় না।
 
জামাল এ নাসের
ঈদ নিয়ে নতুন কোনো পরিকল্পনা নেই। ভাইবোন ঢাকাতে আছে সবাই মিলে একত্রে ঈদ করবো। গরু কিনবো, ছাগল কিনবো। এক কথায় এবারের ঈদ সাদামাটা হবে- বলেন ন্যাশনাল লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা জামাল এ নাসের।
 
এই বিমা নির্বাহী বলেন, শৈশবে ঈদ অনেক আনন্দের ছিল। বাবা সরকারি চাকরি করতেন। ঈদের সময় বাবা যখন বাড়িতে আসতেন, তখন কার ভাগে কী জুটলো তার খোঁজ না নিয়ে আমার ভাগে কী জুটলো সেটাই খুঁজতাম। যা পেতাম, তা নিয়েই অনেক খুশি হতাম। সে সময়ের ঈদে প্রাণের ছোঁয়া ছিল।
 
শৈশবে গরুর পরিচর্যা করতে এক ভাই অন্য ভাইয়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতাম। এখন কসাই নিয়ে গরু কাটা হয়। সে সময় নিজ হাতেই গরু কাটা হতো। এতে অনেক আনন্দ ছিল। এছাড়া ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন খেলার আয়োজন করা হতো। তাতে প্রচুর আনন্দ পাওয়া যেতো। এখনকার ঈদ হয়ে গেছে অনেকটা কর্পোরেট- বলেন জামাল এ নাসের।
 
আহমেদ সাইফুদ্দিন
ঢাকাতে পরিবারের সব সদস্য নিয়ে ঈদ করবেন বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স’র মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা আহমেদ চৌধুরী। নেই ঈদ নিয়ে বিশেষ কোনো পরিকল্পনা এই বিমা নির্বাহীর।
 
শৈশবের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, শৈশবের ঈদ ছিল অনেক আনন্দের। যখন বড় হলাম, তখন আস্তে আস্তে সেই আনন্দ হারিয়ে গেছে। সে সময় বন্ধুরা মিলে একে অন্যের বাড়িতে যেতাম, খাওয়া-দাওয়া করতাম ও আড্ডা দিতাম। আর এখন ঈদ হয়ে গেছে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে দায়িত্বপালন করা।
 
মো. মনিরুল ইসলাম
আগে একটি গরু কিনে ৭ ভাগে কোরবানি দেওয়া হতো। শৈশবে বাবা-চাচারা গরুর এক ভাগা কোরবানি দিতেন। এখন অনেকে একাই একাধিক গরু কোরবানি দেন। কিন্তু তারপরও ওই এক ভাগা কোরবানিতেই অনেক আনন্দ ছিল। এখন দুইটা, তিনটা গরু কোরবানি দিয়েও সেই আনন্দ পাওয়া যায় না- বলেন প্রগতি ইন্স্যুরেন্স’র মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম।
 
এবারের কোরবানির ঈদ পরিকল্প নিয়ে তিনি বলেন, ঈদ নিয়ে বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নেই। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একেবারের সাদামাটাভাবে ঈদ উদযাপন করবো।
 
বাংলাদেশ সময়: ০২৩৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৫
এএসএস/এবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।