খুলনা: পোলাপান (ছেলে-মেয়ে) নিয়ে তিন বেলা খাওয়ার (খাবার) জুটছে না, আমাগো (আমাদের) আবার ঈদ কোরবানি।
বুকভরা হতাশা নিয়ে ঈদের দিন শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন খুলনার বন্ধ দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরির কর্মচারী আব্দুল আজিজ।
জানালেন, ২০১০ সালের ১৮ আগস্ট ফ্যাক্টরিটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর এখানকার ৭৫০টি শ্রমিকের পরিবারের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। সে সময় ১০মাসের বকেয়া বেতনও অবসর ভাতা না দিয়ে ফ্যাক্টরিটি বন্ধ করে দেওয়ায় মহাবিপদে পড়েন কর্মচারীরা।
‘আর সেই থেকে এসব পরিবারে ঈদ আনন্দ নেই। মিল চালুর দীর্ঘদিন অপেক্ষায় এ ফ্যাক্টরি শ্রমিক পরিবারের মধ্যে লুকিয়ে আছে নীরব কান্না,’ বলেন আবদুল আজিজ।
![Khulna_Dada_match_1 Khulna_Dada_match_1](files/September2015/September25/Khulna_Dada_match_1_930567214.jpg)
বাংলানিউজকে তিনি অভিযোগ করেন, বিগত ঈদগুলোতে স্থানীয় রাজনীতিকরা শ্রমিক পরিবারে ঈদ সামগ্রী সহায়তা দিতেন। কিন্তু এবারের ঈদে কেউ সে সহযোগিতা করেননি।
দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরির ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাবেক সহ-সভাপতি শাজাহান জাহাঙ্গীর বাংলানিউজকে বলেন, ‘ঠিকমতো দু’মুঠো খেতে পারে না শ্রমিকরা। খুলনায় বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় শ্রমিক-কর্মচারীরা বেকার জীবন যাপন করছেন। এ কারণে অনেকের ছেলে-মেয়ের লেখাপড়াও বন্ধ হয়ে গেছে। ’
‘আর এরই মধ্যে দীর্ঘদিন জটিল রোগে ভোগে অর্থের অভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দিলখোশ মিয়াসহ ৭৪ জন শ্রমিক। ’
তিনি জানান, রোদ-বৃষ্টিতে বন্ধ ফ্যাক্টরির কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। কারখানার অনেক যন্ত্রপাতি মরিচা পড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রায় ৪২জন নিরাপত্তা প্রহরীর মধ্যে অনেকেই হতাশ হয়ে ছেড়ে দিয়েছেন তাদের দায়িত্ব।
![Khulna_Dada_match_2 Khulna_Dada_match_2](files/September2015/September25/Khulna_Dada_match_2_531214799.jpg)
‘বর্তমানে এখন মাত্র ৩-৪জন ফ্যাক্টরির নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। রাতের আঁধারে বহিরাগত চোর ফ্যাক্টরির মূল্যবান তার চুরি করে নিয়ে যায়,’ যোগ করেন এই শ্রমিক নেতা।
জাহাঙ্গীর বলেন, শ্রমিক কলোনির অবস্থাও এখন বেহাল। তবুও জরাজীর্ণ এ কলোনিতে কোনো মতে থাকছেন শ্রমিক পরিবার।
সরেজমিনে গেলে দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরির ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের নেতারা জানান, নগরীর রূপসা শিল্পাঞ্চল এলাকায় রূপসা নদীর তীরে ১৯৫৬ সালে ১৮ একর জমির উপর যাত্রা শুরু করে সুন্দরবনের গেওয়া কাঠ নির্ভর দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরি।
ফ্যাক্টরির লিজ গ্রহীতা মালিক আব্দুল মারুফ সাত্তার ২০১০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি উৎপাদন ও একই বছরের ১৮ আগস্ট রাতের আঁধারে নোটিশ টানিয়ে ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দেন।
![Khulna_Dada_match_4 Khulna_Dada_match_4](files/September2015/September25/Khulna_Dada_match_4_703520695.jpg)
সেই থেকে ৫ বছর ধরে ফ্যাক্টরির প্রায় সাড়ে ৭০০ শ্রমিকের অপেক্ষা আর শেষ হচ্ছে না। ওই মালিক ১০মাসের বকেয়া পাওনাও পরিশোধ করেনি শ্রমিকদের।
এমনকি শ্রমিকরা পায়নি অবসর ভাতাও। বরং সরকার ফ্যাক্টরিটি চালুর উদ্যোগ নিলে মালিক আব্দুল মারুফ সাত্তার উচ্চ আদালতে রিট করেন।
শুক্রবার দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এইচএম শাহাদাৎ বাংলানিউজকে বলেন, মিলটি চালুর জন্য আমরা অনেক আন্দোলন, সংগ্রাম, মানববন্ধন, অনশন করেছেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালের ৫ মার্চ খুলনার খালিশপুরের প্রভাতী স্কুলের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্যাক্টরিটি চালুর প্রতিশ্রুতি দেন।
‘তখন আমরা বেশ আশ্বস্ত হয়েছিলাম। কিন্তু চার বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হয়নি। ’
বর্তমানে মিল চালুর দাবিতে আন্দোলন, সংগ্রাম এমনকি এজন্য একটি ব্যানার, ফেস্টুন করার মতো অর্থ শ্রমিকদের নেই বলে জানান তিনি।
![Khulna_Dada_match_3 Khulna_Dada_match_3](files/September2015/September25/Khulna_Dada_match_3_125790499.jpg)
শাহাদাৎ বলেন, ফ্যাক্টরিটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে এখানকার ৭৫০ পরিবারের ঈদ, পূজায় কোনো আনন্দ নেই। উৎসব এলেই তাদের দীর্ঘশ্বাস যেন আরও বেড়ে যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৫
এমআরএম/এমএ