ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

ভেজাল প্যারাসিটামল মামলা

দণ্ডপ্রাপ্ত এমতাজুল হক কারাগারে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৫
দণ্ডপ্রাপ্ত এমতাজুল হক কারাগারে

ঢাকা: ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ পানে শিশুমৃত্যুর মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বিসিআই কোম্পানির ব্যবস্থাপক এমতাজুল হককে কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছেন আদালত।

রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঢাকা বিভাগীয় বিশেষ জজ এম আতাউর রহমানের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন জানান এমতাজুল হক।

এ আবেদন নামঞ্জুর করে সাজা পরোয়ানা দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।

গত ১৭ আগস্ট এমতাজুল হকসহ বিসিআই কোম্পানির ৬ জনকে দশ বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দেন একই আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেককে দুই লাখ টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে ছয়মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

দণ্ডপ্রাপ্ত অন্য পাঁচজন হলেন- কোম্পানির নির্বাহী পরিচালক বদরুদ্দোজা, পরিচালক শাজাহান সরকার, নূরুন্নাহার বেগম, শামসুল হক ও ব্যবস্থাপক আয়েশা খাতুন। পরিচালক শাজাহান সরকার ছাড়া দণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচজনই পলাতক ছিলেন। তাদের মধ্যে এমতাজুল হক আত্মসমর্পণ করায় এখনও পলাতক চারজন।

রাজধানীর ঝিগাতলার বিসিআই কোম্পানির উৎপাদিত প্যারাসিটামলে বিষাক্ত দ্রব্যের উপস্থিত থাকার প্রমাণ পেয়ে ১৯৯২ সালের ১৮ নভেম্বর ওষুধ প্রশাসন অফিদফতরের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক আবুল খায়ের চৌধুরী মামলাটি দায়ের করেছিলেন।

এটি একই অভিযোগে দায়ের করা মামলাগুলোর মধ্যে দ্বিতীয়টির রায়। এর আগে গত বছরের ২২ জুলাই অন্য একটি মামলায় অপর ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাডফ্লেম ফার্মাসিউটিক্যালসের তিনজনকে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড এবং দুই লাখ টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- কোম্পানির প্রশাসনিক ব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান, পরিচালক ডা. হেলানা পাশা ও প্রধান উৎপাদন কর্মকর্তা নৃগেন্দ্র নাথ বালা।

প্রায় ২৩ বছর আগে দায়ের করা এসব মামলার আসামিদের সাক্ষ্য ও রায়ের বিবরণ থেকে জানা গেছে, ১৯৯০ সাল থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ঢাকা শিশু হাসপাতালে কিডনি বিকল হয়ে শিশুমৃত্যুর হার অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়।

এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে ঢাকা শিশু হাসপাতালের তৎকালীন পরিচালক বিগ্রেডিয়ার (অব.) মকবুল হোসেন ১৯৯১ সালের ৩ জুলাই ওষুধ প্রশাসনকে মৌখিকভাবে বিষয়টি অবগত করেন। ওই সময়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ভেজাল প্যারাসিটামল সেবনে শিশুমৃত্যুর খবর প্রকাশিত হয়।

এরপর ১৯৯২ সালের ২৫ নভেম্বর ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের পরিদর্শক আবুল খায়ের চৌধুরী ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাডফ্লেম ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি থেকে তাদের উৎপাদিত ফ্লামোডল নামক প্যারাসিটামল সিরাপ নমুনা হিসেবে সংগ্রহ করে ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও)ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার জন্য পাঠান। একই সময়ে পাঠানো হয় বিসিআই কোম্পানির প্যারাসিটামল ওষুধের নমুনাও।

নমুনা পরীক্ষা শেষে ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরি তাদের অভিমতে জানায়, প্যারাসিটামল তৈরিতে ব্যবহৃত প্রোপাইলিন গ্লাইকলের পরিবর্তে চামড়া শিল্পে ব্যবহৃত ডাই ইথিলিন গ্লাইকল ব্যবহার করা হয়েছে। এসব প্যারাসিটামল সিরাপ সেবনে কিডনি বিকল হয়ে হতভাগ্য ওইসব শিশুদের মৃত্যু হয়েছে।

এরপর আবুল খায়ের চৌধুরী বাদী হয়ে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৫
এমআই/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।