ময়মনসিংহ: ‘ভাই কী করলাইন? আমার মা-বাপের কোনো খোঁজ পাইছেন? মুয়াল্লিমরে কতবার ফোন দিলাম। কোনো তথ্য দিবার পাইতেছে না।
রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) মোবাইল ফোনে বাংলানিউজের কাছে এভাবেই আহাজারি করছিলেন শারমিন আক্তার বুলবুলি (২৮)। সৌদি আরবের মিনায় মিনার বড় জামারাতে (প্রতীকী শয়তান) পাথর ছোড়ার সময় পদদলিতের ঘটনায় নিখোঁজ লতিফুর রহমান লতিফ (৬০) ও জাহানারা বেগম (৫০) দম্পতির দু’মেয়ের একজন এ বুলবুলি।
লতিফ-জাহানারা দম্পতির বাড়ি ময়মনসিংহের ত্রিশালের চরপাড়া এলাকায়। আর বুলবুলি থাকেন নেত্রকোনার জারিয়ায় স্বামীর বাড়িতে। সেখান থেকেই বাংলানিউজকে ফোন করেন তিনি। মা-বাবার জন্য দুশ্চিন্তায় শোকে পাথর হয়ে গেছেন বড় বোন লাভলীও।
বুলবুলির স্বামী নেত্রকোনার একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুজন খান বাংলানিউজকে জানান, নিখোঁজ লতিফুর রহমান ও জাহানারা বেগমের পাসপোর্ট নম্বর যথাক্রমে বিএস ০২১৩১৭৩ ও বিএস ০২১৩১৭৪। তারা মুবাল্লিক ট্রাভেলস নামে একটি এজেন্সির মাধ্যমে হজ পালনে সৌদি গিয়েছিলেন।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে বুলবুলি বলেন, ‘এ দুনিয়াতে আমাদের মা আর বাবাই ছিল। অহন তারা থাইক্ক্যাও নাই। জীবিত থাকলে তো খোঁজ পাওয়া যাইতো। শনিবার ও রোববার কয়েকবার মুয়াল্লিম সেলিমের কাছে ফোন করছে। সে তো কোনো তথ্য দিবার পাইতাছে না। ’
‘সেখানকার চারটা হাসপাতালে খুঁজছে, পায় নাই। হাসপাতালের একটি মর্গে কিছু ছবি টাঙায়েছে, সেখানেও আমার মা-বাপের ছবি নাই। আমরা আস্তে আস্তে আশা ছাইড়া দিতাছি। অহন মা-বাপের মুখটা শেষবারের মতো দেখবার পাইলেই মনটারে একটু সান্ত্বনা দিতে পারমু। ’
বাবা-মা’র সঙ্গে নিজের শেষ স্মৃতি বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে জানিয়ে বুলবুলি বলেন, ‘আমগর কোনো ভাই না থাকায় আমার মা আমার ছোট ছেলে ময়েজকে ভীষণ আদর করতেন। যাবার আগে আমারে শুধু বলছিল, ময়েজরে দেইখ্যা রাখিস। ওরে কোনো মাইরপিট করবি না। ’
‘আমার ছেলেটাও নানীরে খুঁজতাছে। কথা বলতে চাইতাছে। কিন্তু ওর নানী-নানা আর মনে হয় নাই। এইটা তো ওরে বুঝাবার পাইতাছি না। আমার কান্দুনে ও কান্দতাছে। ’
সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বুলবুলি বলেন, ‘আমগর কষ্টটা তারা যদি একটু বুঝতো, তাহলে আমার আব্বা-আম্মারে খুইজ্যা বাইর করতো। শেষবারের মতো আব্বা-আম্মারে একটু দেখবার চাই। সেই ব্যবস্থাটা ওনারা কইরা দেক। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৫
এইচএ