ঢাকা: নৌপথে ঢাকা-বরিশাল রুটে সদ্য চালু হওয়া গ্রিন লাইন ওয়াটার ওয়েজে শুরুতেই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। নানামাত্রিক ভোগান্তিতে পড়ে যাত্রীরা হচ্ছেন নাজেহাল।
সম্পূর্ণ শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত এই সার্ভিসে ঢাকা থেকে বরিশাল কিংবা বরিশাল থেকে ঢাকা পৌঁছাতে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা সময়ের কথা বলা হলেও যান্ত্রিক নানা ক্রটি দেখিয়ে যাত্রীদের অতিরিক্ত সময় ব্যয় করছে তারা। বরাবরের মতো রোববারও (২৭ সেপ্টেম্বর) ঠিক এমনই ঘটেছে। বরিশাল থেকে বিকেল ৩টায় ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে গ্রিন লাইন ওয়াটার ওয়েজ।
যাত্রা শুরুর কিছুক্ষণ পরই লঞ্চ কর্তৃপক্ষ জানায়, লঞ্চের একটি ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে গেছে। এখন থেকে ধীরে ধীরে যাবে, তবে ঠিক সময় মতো (রাত ৮টার দিকে) ঢাকায় পৌঁছে দেওয়া হবে যাত্রীদের। কিন্তু রাত সাড়ে ৮টার বেশি হয়ে গেলেও লঞ্চটি পৌঁছাতে পারেনি। এতে যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এছাড়া অনেকে ক্যাপ্টেনের রুম ঘেরাও করেন। শুরু হয় উত্তেজনা। এরই মধ্যে গ্রিন লাইনের সুপারভাইজার সাইফুল গা ঢাকা দেন বা লুকিয়ে যান।
রাত সাড়ে ৮টার দিকে কর্তৃপক্ষ নতুন করে জানায়, ঢাকায় পৌঁছাতে রাত ১১টা থেকে ১২টা বেজে যাবে।
এই লঞ্চে থাকা যাত্রী মহসীন হোসেন বাংলানিউজকে অভিযোগ করে বলেন, দুপুরে ছেড়ে আসা লঞ্চ যদি মধ্যরাতে ঢাকায় পৌঁছায় তবে বিষয়টি মেনে নেওয়ার মতো নয়। এটি কোনো সার্ভিস-সেবা হলো না। যে প্রতিশ্রুতি নিয়ে তারা যাত্রা শুরু করেছে তার কোনোটাই পূরণ করতে পারছে না। প্রতিদিনই এমন ভোগান্তি হচ্ছে।
শুধু তাই নয়, যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তারা ঈদে ঢাকা থেকে বরিশাল যেতেও ভোগান্তিতে পড়েন।
যাত্রী মহসীন হোসেন আরও জানান, এখানে তাদের খাবারও নিম্নমানের। এছাড়া তারা ঘাটে যাত্রী তুলে অন্য লঞ্চের মাধ্যমে। যা বেশ ঝঁকিপূর্ণ।
লঞ্চটিতে একজন থাইল্যান্ড প্রবাসী রয়েছেন। তিনি ঈদ করতে গ্রামের বাড়ি বরিশালে যান। রোববার রাত ১০টায় তার ফ্লাইট ছিল। তিনি ভেবেছিলেন রাত ৮টার দিকে ঢাকায় ফিরে রাতে থাইল্যান্ডে রওয়ানা দেবেন। কিন্তু লঞ্চ পৌঁছাতে দেরি হবে জেনে টিকিট বাতিল করতে বাধ্য হন।
শুধু তিনিই নন, তার মতো এমন অনেক যাত্রীই রয়েছেন, যাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রাতে রওয়ানা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারা তা পারছেন না। তারা বলছেন, গ্রিন লাইনের এটি লোক দেখানো সার্ভিস। যত টাকা তারা নিচ্ছেন, তার তুলনায় এ রকম সার্ভিসকে ভোগান্তি-বিরক্তি ছাড়া আর কিছুই বলে না।
চলতি মাসের মাঝামাঝি চালু হয় এই বিশেষ লঞ্চ। প্রতিদিন যাওয়া-আসায় ২টি সার্ভিস তাদের। তিন তলাবিশিষ্ট সম্পূর্ণ শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত ওয়াটার ওয়েজ এমভি গ্রিন লাইন-২ ও এমভি গ্রিন লাইন-৩। উদ্বোধনের সময় কর্তৃপক্ষ জানায়, এ সার্ভিসের মাধ্যমে নৌপথের যাত্রীরা বরিশাল থেকে ৪-৫ ঘণ্টায় ঢাকায় পৌঁছতে পারবেন। এতে রয়েছে ওয়াইফাই ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক, টিভি বিনোদন, সাকলের নাস্তা, দুপুরের খাবার, ফুড কর্নার, ম্যাসেজ চেয়ার, অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা, লাইফ প্রিজার্ভার ও লাইফ জ্যাকেট, নয়নাভিরাম প্রকৃতিক দৃশ্য অবলোকনের সু-ব্যবস্থা এবং জাহাজের ভেতরে প্যাসেঞ্জার গাইডের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক সেবা প্রদান। প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ক্যাটামেরিন ভ্যাসেল টাইপের এ জাহাজ অনেকটা প্লেন সার্ভিসের মতো। নিচতলায় ভাড়া ৭০০ ও উপরে ১ হাজার টাকা। যাত্রী নিতে পারে ৬শ’ বেশি।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৫, আপডেট ২১২৬
এমএম/আইএ