ঢাকা, রবিবার, ২৬ মাঘ ১৪৩১, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিদেশি অনুদান আনার সক্ষমতা চায় এনজিও

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৫
প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিদেশি অনুদান আনার সক্ষমতা চায় এনজিও

ঢাকা: বিদেশি অনুদান আনার ক্ষেত্রে ব্যক্তি নয়, প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আনার সক্ষমতা চায় বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান (এনজিও) প্রতিনিধিরা।

দশম জাতীয় সংসদের সপ্তম অধিবেশনে উত্থাপিত বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম) রেগুলেশন বিল-২০১৫’তে ‘এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর নিজস্ব ক্ষমতার বাইরে ব্যক্তি পর্যায়ে অনুদান আনার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।



বুধবার বিকেলে (৩০ সেপ্টেম্বর) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে ‘বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবমূলক কার্যক্রম) রেগুলেশন বিল-২০১৫’ নিয়ে এনজিও প্রতিনিধিদের মতামত নেওয়া হয়।

কমিটির বৈঠকে টিআইবি, ব্রাক, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, সাক্ষতার জন্য প্রচারাভিযান, নিজেরা করি, বেলা, এফএনবি, এডাব, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, অ্যাকশন এইড, অক্সফাম, কেয়ার আদিবাসী ফোরাম, প্রিপ ট্রাস্ট, ওয়াটার এইড, কনসার্ন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড, এসিএফ, সেভ দ্যা চিলড্রেনকে মতামত নেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পর্যায়ের অনেকই কমিটিতে উপস্থিত হয়ে তাদের মতামত দেন।

সংসদীয় কমিটির কাছে এনজিওগুলো সংসদে উত্থাপিত খসড়া আইনের ওপর আট দফা লিখিত মতামত দেয়। বৈঠক শেষে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি'র) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন,বিলটি খসড়া প্রণয়নের আগে আমাদের কাছে মতামত নেওয়া হয়েছিল। সেই খসড়ায় অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। এই আইনটি বেসরকারি সংগঠনগুলোর কাজে সহায়ক হবে।

তিনি বলেন, বিলটিতে এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর নিজস্ব ক্ষমতার বাইরে ব্যক্তি পর্যায়ের সক্ষমতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এই বিষয়টি আমরা যৌক্তিক মনে করি না। কেননা এটা করা হলে প্রতিষ্ঠানের বাইরে ব্যক্তি পর্যায়ে অনুদান আনবে। এতে দেশের রাজস্ব আয় কমবে। আনঅফিসিয়ালি টাকা আসলে তার বিশ্বস্ততা হারানোর শঙ্কা থাকবে। ব্যক্তিকে এই আইনের আওতায় আনা উচিত না।
 
নিজেরা করি’র সমন্বয়ক খুশি কবীর জানান, কমিটি আমাদের কথা শুনেছে। তারা বলেছে, চূড়ান্ত খসড়া তৈরির সময় আমাদের কথা আবারও শুনবে।

এদিকে বিলটির ওপর লিখিত মতামতে এনজিওগুলো তাদের মতামতে জানিয়েছে, এই আইনের ফলে ‘প্রবাসী বাংলাদেশিসহ অন্যরা জনহিতকর ও স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রমে নিরুৎসাহিত হতে পারেন; এতে অবৈধ অর্থ প্রবাহ এবং কর ফাঁকির সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে; এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর নিজস্ব সক্ষমতার বাইরে অতিরিক্ত কাজের চাপ বৃদ্ধির ঝুঁকি সৃষ্টি হবে। ’

গত ১ সেপ্টেম্বর বিলটি সংসদে তোলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। পরে বিলটি পরীক্ষার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়।

বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন (এনজিও) কার্যক্রম বর্তমানে পরিচালিত হয় ১৯৭৮ ও ১৯৮২ সালের দুটি অধ্যাদেশ দিয়ে। সামরিক শাসনামলের অধ্যাদেশ দুটি একত্র করে নতুন আইন করতে বিলটি উত্থাপন করা হয়েছে।

বিদেশি অনুদান নেওয়ার ক্ষেত্রে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করে এবং অনুমোদন ছাড়া প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন না করার বিধান রাখা হয়েছে বিলটিতে।

বিলে বলা হয়েছে, একটি এনজিও ১০ বছরের জন্য নিবন্ধন পাবে। তবে আইন অমান্য করলে যে কোনো সময় নিবন্ধন বাতিল বা স্থগিত করা যাবে।

এনজিও প্রতিনিধিরা সংসদীয় কমিটিতে জানিয়েছে, খসড়া আইনের এনজিও নিবন্ধন ও নবায়নের কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা উল্লেখ নেই। তারা ৯০ দিনের  মধ্যে নিবন্ধন এবং ৪৫ দিনের মধ্যে নবায়ন করার বিধান রাখার প্রস্তাব দিয়েছে।

সংসদে উত্থাপিত বিলে, প্রকল্প শেষ হওয়ার পর খরচের ভাউচার সংরক্ষণের বিধান সংশোধন করার সুপারিশ করেছে এনজিওগুলো। তারা ৫ বছরের জন্য ভাউচার সংরক্ষণের বিধান রাখার প্রস্তাব করেছে।

এছাড়া পার্বত্য এলাকার এনজিওদের তত্ত্বাবধানের জন্য আলাদা কমিটির বিরোধিতা করেন তারা।   এনজিওগুলো এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক বা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা পার্বত্য জেলা পরিষদের কাছে ন্যস্ত করার বিধানের প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত আইনে প্রকল্প প্রস্তাব পরিবর্তন ও সংশোধনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের আপত্তির বিধানে দ্বিমত করে এনজিওগুলো বলেছে, এর ফলে প্রকল্পের মৌলিক বৈশিষ্ট্য ক্ষুণ্ন হতে পারে। এনজিও খাতের সাবলীল বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

সংসদীয় কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা তাদের কথা শুনেছি। এরপরেও তারা লিখিতভাবে পরে আরও মত দিতে পারবেন। তবে একটা বিষয় হচ্ছে, দেশটা সার্বভৌম, এখানে এনজিও ডমিনেন্স চলবে না। ফেক এনজিওর ব্যাপারেও কঠোর হতে হবে। ”

তিনি আরও বলেন, “আমরা আবারো বসবো। নতুন গ্লোবাল পলিটিক্সের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই আমরা আইন করতে চাই। ”

সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে বিলটির ওপর আসা এনজিও প্রতিনিধিদের  মতামত গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা হয়।

সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, মো. তাজুল ইসলাম চৌধুরী, আবদুল মতিন খসরু, সাহারা খাতুন ও মো. শামসুল হক টুকু অংশ নেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৫
এসএম/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ