ঢাকা: মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের চূড়ান্ত পূর্ণাঙ্গ রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, ‘এটা (আলবদর বাহিনীর নৃশংসতা) এতোটাই নৃশংস যে, গ্যাস চেম্বারে ঢুকিয়ে হিটলার যেভাবে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিলেন তাকেও হার মানায়। ওই সময় আলবদর বাহিনীর ওইসব নৃশংসতা সারা বিশ্বই প্রত্যক্ষ করেছে’।
অন্যদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরীর রায়ে সর্বোচ্চ আদালত বলেন,‘সাকা চৌধুরী সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও নীলনকশা অনুসরণ করে অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় এসব হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন’।
একাত্তরের কিলিং স্কোয়াড আলবদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন মুজাহিদ আর সাকা চৌধুরী ছিলেন চট্টগ্রাম অঞ্চলের নৃশংসতম মানবতাবিরোধী অপরাধের হোতা। গত ১৬ জুন মুজাহিদ এবং ২৯ জুলাই সাকা চৌধুরীর মামলার আপিল মামলার সংক্ষিপ্ত চূড়ান্ত রায় দেন আপিল বিভাগ। বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দেশের শীর্ষ এ দুই যুদ্ধাপরাধীর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পায়।
রায়ে আপিল বিভাগ বলেন, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে ও পরে আপিলকারীর (মুজাহিদ) কর্মকাণ্ড সেই সঙ্গে মৌখিক ও দালিলিক প্রমাণাদি পর্যালোচনা করে সন্দেহতীতভাবে প্রমাণিত হয় মুজাহিদের নেতৃত্বে আলবদর বাহিনী ঠাণ্ডা মাথায় নৃশংস হত্যাযজ্ঞ পরিচালনা করেছে’।
‘এটা এতোটাই নৃশংস যে, গ্যাস চেম্বারে ঢুকিয়ে হিটলার যেভাবে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিলেন তাকেও হার মানায়। ওই সময় আলবদর বাহিনীর ওইসব নৃশংসতা সারা বিশ্বই প্রত্যক্ষ করেছে। তিনি (মুজাহিদ) নিঃসন্দেহে একজন যুদ্ধাপরাধী এবং এজন্য তাকে ট্রাইব্যুনাল যে সাজা দিয়েছেন, শুধু সে সাজাই দেওয়া যায়’।
সুপ্রিম কোর্টের মতে, মানুষ যেমন হিরোসিমা এবং নাগাসাকিকে ভুলতে পারেনি। তেমনি এই জাতি কখনোই ১৯৭১ সালকেও ভুলতে পারবে না।
সাকার রায়ে আপিল বিভাগ বলেন, ‘সাকা চৌধুরী ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের প্রতি কোনো সম্মান প্রদর্শন করেননি। তার এ উগ্র আচরণ এবং একাত্তরে তার গণহত্যা, নৃশংসতা বিবেচনায় নিয়ে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে’।
‘সাকা চৌধুরী ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিদ্বেষপ্রসূত সাধারণ মানুষকে হত্যা, নির্যাতন এবং গুম করেছেন। তিনি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও নীলনকশা অনুসরণ করে অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় এসব হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।
বুধবার বিকেলে মুজাহিদের ১৯১ পৃষ্ঠার এবং সাকা চৌধুরীর ২১৭ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাসহ আপিল মামলার রায় প্রদানকারী চার বিচারপতির স্বাক্ষরের পর তা প্রকাশ করা হয়। অন্য বিচারপতিরা হচ্ছেন, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
চূড়ান্ত রায়ে মুজাহিদ বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে আর সাকা চৌধুরী অধ্যক্ষ নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যাসহ যে চার হত্যা-গণহত্যার দায়ে সর্বোচ্চ সাজা পেয়েছেন। বিচারিক আদালত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মৃত্যু পরোয়ানা জারি করার পর এখন তাদের সামনে কেবলমাত্র শেষ দুই সুযোগ থাকবে, ১৫ দিনের মধ্যে রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন আর তা খারিজ হলে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা।
সেসব প্রক্রিয়া শেষে দণ্ডাদেশ বহাল থাকলে ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে হবে মুজাহিদ-সাকা চৌধুরীকে, এমনটা জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) মৃত্যু পরোয়ানা জারি হয়ে কারাগারে যাবে তা কার্যকরের লক্ষ্যে বলে জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল সূত্র। আর রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা জানিয়ে দিয়েছেন, রিভিউয়ের অপেক্ষায় না থেকে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর থেকেই ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু করেছে রাষ্ট্র।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৫
ইএস/এএসআর
**মুজাহিদ-সাকার ফাঁসির পূর্ণাঙ্গ রায় ট্রাইব্যুনালে
** যেভাবে মুজাহিদ-সাকার ফাঁসি কার্যকর
** মুজাহিদ-সাকার ফাঁসির পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ