ঢাকা: সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস জঙ্গিবাদ বিশ্বশান্তি ও উন্নয়নের পথে প্রধান অন্তরায়। আর জলবায়ু পরিবর্তন মারাত্মক উন্নয়ন হুমকি হিসেবে আবির্ভূত।
বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদফতরে সংস্থার সাধারণ পরিষদের ৭০তম অধিবেশনে ভাষণ দিচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে, ঢাকার সময় রাত ১০টা ৫৫ মিনিটে ভাষণ শুরু করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বে মানব সভ্যতার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে আমরা সবচেয়ে বড় দু’টি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছি। প্রথমটি হচ্ছে সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস জঙ্গিবাদ। বিশ্বশান্তি ও উন্নয়নের পথে এটি প্রধান অন্তরায়। সন্ত্রাসীদের কোনো ধর্ম নেই। সন্ত্রাসবাদ এবং জঙ্গিবাদ একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সকল রাষ্ট্রকে একযোগে কাজ করতে হবে। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে মারাত্মক উন্নয়ন হুমকি হিসেবে আবির্ভূত জলবায়ু পরিবর্তন। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চ্যালেঞ্জ কার্যকরভাবে মোকাবেলা করা সম্ভব না হলে, আমাদের উন্নয়ন প্রচেষ্টা এগিয়ে নেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। এ বিশ্বকে নিরাপদ, আরও সবুজ এবং আরও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে আমাদের অবশ্যই সফলকাম হতে হবে।
‘শুধু জাতিসংঘ নয়, সামগ্রিক অর্থে সারাবিশ্বের জন্য এ বছরটি আমূল পরিবর্তনের’-কথাটি দিয়ে বক্তব্য শুরু করে শেখ হাসিনা বলেন, টেকসই উন্নয়নের জন্য এই বছরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জাতিসংঘের গৌরবান্বিত ইতিহাস তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের নিয়তি একইসূত্রে গাঁথা’- আমাদের পূর্বসূরীদের এই বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে যে বিশ্বসংস্থার গোড়াপত্তন, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা এবং উন্নয়ন ও মানবাধিকারের অগ্রগতির জন্য জাতিসংঘ গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়ে আসছে। সত্তর বছর ধরে জাতিসংঘ মানব সম্প্রদায়ের জন্য আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হয়ে আছে।
তিনি স্মরণ করেন আদ্দিস আবাবায় অনুষ্ঠিত উন্নয়নের জন্য অর্থায়ন শীর্ষক শীর্ষ-সম্মেলন এবং নিউইয়র্কে সদ্যসমাপ্ত ২০১৫-পরবর্তী উন্নয়ন শীর্ষ সম্মেলনের কথা। বলেন, গোটা বিশ্বের জনগণের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে নতুন আশার সঞ্চার করেছে এই উদ্যোগ।
আর ভবিষ্যতের আশাবাদ করতেও ভোলেননি প্রধানমন্ত্রী। বলেন, এ বছরের শেষে প্যারিসে আমরা একটি অর্থবহ জলবায়ু চুক্তিতে উপনীত হওয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছি। আমরা আশা করছি দারিদ্র্য নিরসন, জলবায়ু পরিবর্তন সীমিত রাখা এবং ধরিত্রীকে সুরক্ষার মাধ্যমে আমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত নিশ্চিত হবে।
![](files/hasina_inner_310842094.jpg)
টেকসই উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা এবং শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য আঞ্চলিক সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে - SAARC, BIMSTEC এবং BCIM-EC–এর মত আঞ্চলিক সংস্থা প্রতিষ্ঠায় নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করে চলেছে। এছাড়া, বাংলাদেশ, ভূটান, ভারত এবং নেপালের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য আমরা অবকাঠামো উন্নয়নের পদক্ষেপ নিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি অভিবাসন এবং মানব চলাচল আজ নতুনভাবে ইতিহাস এবং ভৌগোলিক পরিসীমা নির্ধারণে নিয়ামক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০৩০ উন্নয়ন এজেন্ডায় উন্নয়নের জন্য অভিবাসন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপযোগ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। অভিবাসনের পূর্ণ সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে সহযোগিতা প্রয়োজন। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে, উৎস এবং গন্তব্য দেশ হিসেবে আমরা ২০১৬ সালে Global Forum on Migration and Development (GFMD) এর নেতৃত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের অবদান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ কার্যক্রমে অন্যতম প্রধান শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী হিসেবে বাংলাদেশ গর্বিত। এ পর্যন্ত আমাদের সাহসী শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা বিশ্বের ৪০টি দেশের ৫৪টি মিশনে নিয়োজিত হয়েছেন। আমরা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সর্বোচ্চ সংখ্যক নারী পুলিশ সদস্য নিয়োজিত করার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছি। জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বাংলাদেশের অবদান জাতিসংঘের শান্তি অন্বেষায় আমাদের বিশ্বস্ত অংশীদার করেছে।
তিনি বলেন, বিগত প্রায় ১৫ বছর যাবত আমাদের উন্নয়ন পরিকল্পনার এটি বৃহদাংশ এবং এর বাস্তবায়ন সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাকে (এমডিজি) ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে। এমডিজির সার্বিক অগ্রগতি আমাদের আরও বৃহদাকার, বলিষ্ঠ এবং উচ্চাভিলাষী টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে অনুপ্রাণিত করেছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় (এসডিজি) যে উচ্চাশা প্রতিফলিত হয়েছে তা বাস্তবায়নে আমাদের সরকারি ও ব্যক্তিখাতসহ অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক তহবিলের যোগান অবশ্যই বৃদ্ধি করতে হবে। এজন্য উন্নত দেশগুলোর পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তাদের GNI-এর শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ ODA হিসেবে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এবং শূন্য দশমিক ২ শতাংশ হারে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে প্রদান জরুরি। পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশগুলোর পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার ও বিস্তার এবং অভিযোজনের যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে তার দ্রুত সমাধান প্রয়োজন। এ ধরণের প্রযুক্তি এবং সক্ষমতা হস্তান্তর ব্যতীত অনেক উন্নয়ন লক্ষ্য বাস্তবায়ন অনার্জিত থেকে যাবে বলে আমার আশঙ্কা।
শান্তিপূর্ণ, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্ব গড়তে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী বলেন, চার দশকেরও বেশি আগে, বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তার প্রথম বক্তৃতায় ‘শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থান, সামাজিক ন্যায়বিচার, দারিদ্র্য, ক্ষুধা, বঞ্চনা ও আগ্রাসনমুক্ত একটি বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে তোলার’ স্বপ্ন দেখেছিলেন। তার সেই উদাত্ত আহ্বান আজও আমাদের জাতীয় উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সম্পৃক্ততার পথ প্রদর্শক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা বর্তমানে এমন এক বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে এগোচ্ছি, যেখানে দারিদ্র্য, অসমতা এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতির পরিবর্তে সামাজিক ন্যায়বিচার এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এর আগে আমি ‘রূপকল্প-২০২১’ উপস্থাপন করেছিলাম। এর মাধ্যমে আমরা একটি মধ্যম-আয়ের, জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি অর্থাৎ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ে তুলতে চাই। উন্নয়নের পথে যেভাবে আমরা দৃপ্ত পদক্ষেপে অগ্রসর হচ্ছি, তাতে আমি বিশ্বাস করি, অচিরেই আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সমৃদ্ধশালী সোনার বাংলা গড়ে তুলতে পারব।
বাংলাদেশ আজ সারাবিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর দরবারে রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সীমিত সম্পদ দিয়ে বিশ্বের অন্যতম দ্রুত দারিদ্র্য হ্রাসকারী দেশ হিসেবে নিজেদের পরিচিত করতে সক্ষম হয়েছি। দারিদ্র্যের হার ১৯৯১ সালে যেখানে ৫৬.৭ শতাংশ ছিল, বর্তমানে তা ২২.৪ শতাংশে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই এমডিজি-১,২,৩,৪,৫ এবং ৬ অর্জন করেছে অথবা অর্জনের ক্ষেত্রে সঠিক পথেই এগোচ্ছে। বিশ্বমন্দা সত্ত্বেও গত ৬ বছরে জিডিপি’র গড় প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ২ শতাংশ। ২০০৫-০৬ থেকে ২০১৪-১৫ পর্যন্ত রপ্তানি আয় এবং প্রবাসীদের রেমিটেন্স পাঠানোর পরিমাণ তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় সাড়ে ৭ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে চলতি অর্থবছরে ২৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ ইউএনডিপি’র নিম্ন মানবসম্পদ উন্নয়নের দেশ থেকে মধ্যম সারিতে উন্নীত হয়েছে এবং বিশ্ব ব্যাংকের মান অনুযায়ী নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে।
তিনি বলেন, বিপুল সংখ্যক যুব সম্প্রদায়কে মানবসম্পদে পরিণত করার জন্য বিনিয়োগ করা হলে তা ভবিষ্যতে সুফল বয়ে আনবে বলে আমরা মনে করি। এজন্য আমার সরকার শিক্ষা এবং সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার ওপর সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেছে। আমরা ষষ্ঠ থেকে স্নাতক পর্যন্ত ১ কোটি ৩৪ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি ও উপবৃত্তির আওতায় এনেছি। ঝরে পড়া রোধে মেয়েদের উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষাকে সম্পূর্ণ অবৈতনিক করা হয়েছে। এ বছরের প্রথমদিনেই আমরা সারাদেশে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত ৩২৬.৩৫ মিলিয়ন পাঠ্যবই বিনামূল্যে বিতরণ করেছি। ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১.৫৯ বিলিয়ন পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হয়েছে। সমগ্র বিশ্বে এ ধরণের উদ্যোগ সম্ভবত এটাই প্রথম। আমরা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ৫ হাজার ২৭৫টি ডিজিটাল কেন্দ্র স্থাপন করছি। এগুলো থেকে জনগণ দু’শোর বেশি সেবা গ্রহণ করছেন। গ্রামাঞ্চলে স্থাপিত তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে সংযুক্ত প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে উন্নত চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।
![](files/hasina_inner_2_911302845.jpg)
শেখ হাসিনা বিশ্বনেতাদের বলেন, উৎপাদনমুখী সম্পদে নারীর প্রবেশাধিকার এবং জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে তাদের প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধির মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নের ফলাফল দৃশ্যমান হচ্ছে। একইভাবে আমরা আমাদের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রয়োজন এবং সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করে অগ্রাধিকারভিত্তিতে সেগুলো সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছি। অটিজম ও অন্যান্য বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের অধিকার আদায়ে জাতিসংঘে আমরা নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করছি। আমাদের একটি অন্তর্ভূক্তিমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টারই ফলেই এটা সম্ভব হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে আমরা যেভাবে কাজ করেছি, তা দৃষ্টান্ত হিসেবে গ্রহণ করে এসডিজি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও তার প্রয়োগ ঘটাতে চাই। এসডিজি ফ্রেমওয়ার্ককে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে বর্তমানে আমরা ২০১৬-২০২০ মেয়াদী নতুন জাতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করছি। একটি টেকসই, শান্তিপূর্ণ এবং সমৃদ্ধশালী সমাজ প্রতিষ্ঠায় আমাদের যে আকাঙ্ক্ষা সেখানে কেউ যেন পিছিয়ে না পড়ে তা নিশ্চিত করতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। সমাজে স্থায়ী শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতিষ্ঠিত না হলে আমরা টেকসই উন্নয়নও নিশ্চিত করতে পারব না। এজন্য আমরা শান্তি সমুন্নত রাখতে সমাজে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতির অবসান ঘটাতে বদ্ধপরিকর। এই চেতনা থেকেই আমরা দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি। যারা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, ধর্ষণ এবং গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে। আমার সরকার ধর্মীয় সম্প্রীতি এবং সহনশীলতা বজায় রাখার ব্যাপারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়। যুগ যুগ ধরে এই চর্চা আমাদের সামাজিক কাঠামোরই অংশ হয়ে উঠেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সম্প্রতি আমরা আমাদের প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারত এবং মিয়ানমারের সঙ্গে স্থল এবং সমুদ্র সীমানা সমস্যা সংক্রান্ত সমস্যাগুলির শান্তিপূর্ণ সমাধান করেছি। গত ৩১ জুলাই মধ্যরাতে আমরা ভারতের সঙ্গে ১৬২টি ছিটমহল বিনিময় করেছি। যার মাধ্যমে প্রায় ৫০ হাজার রাষ্ট্রবিহীন ছিটমহলবাসী তাদের পছন্দের রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে পেরেছেন। তাদের দীর্ঘদিনের মানবেতর জীবনের অবসান হয়েছে। এ কাজটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার মাধ্যমে আমরা সমগ্র বিশ্বের কাছে কূটনৈতিক সাফল্যের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সমর্থ হয়েছি।
তিনি বিশ্বনেতাদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, আসুন সবাই মিলে আমাদের সামষ্টিক অঙ্গীকার অনুযায়ী এমন একটি শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ উন্নত বিশ্ব গড়ে তুলি যেখানে দারিদ্র্য এবং অসমতা, সন্ত্রাস ও সহিংস জঙ্গিবাদ, জলবায়ু পরিবর্তন ও সংঘাত, এবং বিদ্বেষ ও বৈষম্য থাকবে না। আসুন, আমরা আমাদের নৈতিক সাহস এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের সন্তান এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর ও নিরাপদ জীবন ও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রেখে যাওয়ার সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করি।
জাতিসংঘের ৭০তম অধিবেশনে যোগ দিতে ২৩ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার জাতিসংঘে ভাষণের মধ্য দিয়েই শেষ হচ্ছে নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শেষ কার্যদিবস। এদিন স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। সদরদফতরে মহাসচিবের কার্যালয়ে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
আর ১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার প্রত্যুষে প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্ক ছাড়ার উদ্দেশ্যে হোটেল ত্যাগ করবেন। জন এফ কেনেডি বিমানবন্দর থেকে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের বিএ-১৭৮ এ লন্ডনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবেন সকাল ৮টায়।
লন্ডনের স্থানীয় সময় রাত ৮টার দিকে তার হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রী যাবেন লন্ডনের ব্রুক স্টিটস্থ হোটেল ক্লারিজে। পরের দিন ২ অক্টোবর বিকেলে লন্ডনে বাংলাদেশি কমিউনিটির একটি কর্মসূচিতে অংশ নেবেন শেখ হাসিনা। ওই রাতেই তিনি দেশের উদ্দেশে যাত্রা করবেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশের ফ্লাইট বিজি ০০২ উড়াল দেবে। এটি বাংলাদেশ সময় ৩ অক্টোবর বেলা ১২টার দিকে পৌঁছাবে সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দরে। সেখান থেকে ফের রওয়ানা দিয়ে বেলা দেড়টার দিকে ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন শেখ হাসিনা।
** বছরটি আমূল পরিবর্তনের
** সন্ত্রাসীদের কোন ধর্ম নেই
বাংলাদেশ সময়: ২৩১৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৫
এইচএ/এমএমকে/