বাগেরহাট: দু’দিন আগেও যেখানে ছিলো পাকা রাস্তা, চলতো যানবাহন, আজ সেই পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে নৌকা আর ট্রলারে।
পানগুছি নদীর আকস্মিক ভাঙনে রাস্তা বিলীন হওয়াতে এমন অবস্থা বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার চালতাবুনিয়া এলাকায়।
উপজেলার এই অংশে নদী তীরের প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা ভেঙেছে কয়েক বছর আগেই। এর পর থেকে একটি বিকল্প রাস্তা দিয়ে মানুষ চলাচল করত। কিন্তু সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে পানগুছির আকস্মিক ভাঙনে বিলীন হয়েছে আশপাশের কয়েকটি বসতঘরসহ চলাচলের সেই পথও।
![](files/October2015/October01/Bagerhat_2_356473425.jpg)
ফলে মোরেলগঞ্জের সঙ্গে উপজেলার সন্ন্যাসী, খাউলিয়া, বানিয়াখালীসহ কয়েকটি এলাকার সড়ক যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন এসব এলাকার কয়েক হাজার মানুষ।
ভাঙনে সদ্য বিলীন হওয়া বিকল্প সড়কের পাশেই বাড়ি আবুল হাসেমের (৭৬)। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, কাইল গো সকালেও গাড়ি চলছে এই রাস্তা দিয়া, হের পর হঠাৎ-ই ভাইঙ্গা গ্যাছে। এহন নৌকা আর ট্রলারে উইডা মাইনসে (মানুষ) পার হইতাছে।
চালতাবুনিয়া উপজেলার মোরেলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন। এর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পানগুছি নদী। নদীর তীর ধরে পিচঢালা ও ইট বিছানো পাকা রাস্তা। ঢাকা থেকে আসা স্টিমার ভেড়ে সন্ন্যাসী বাজারের কাছে। এসব কারণে এ সড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
![](files/Bagerhat_3_342817178.jpg)
গ্রামের আব্দুল গফ্ফার তালুকদার বাংলানিউজকে জানান, এ পথে যাওয়া যায় পার্শ্ববর্তী উপজেলা শরণখোলায়। এক সময় বাসও চলতো এই পথে। প্রায় সাড়ে চার বছর আগে নদী তীরের এই অংশ ভাঙতে শুরু করে। এর পর গত কয়েক বছরে এই সড়কের প্রায় এক কিলোমিটার নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
ভেঙে যাওয়ার পর দীর্ঘ দিনেও নতুন করে রাস্তা নির্মাণের তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। গত তিন বছর ধরে বিকল্প এই পথে চলছিলো চলাচল। এখন রাস্তা পর হতে হয় নৌকায়।
স্থানীয় ট্রলার চালক লুৎফর শিকদার জানান, সোমবার সকাল ৮টার দিকে সড়কের একটি অংশ বেশ কিছুটা বসে (ডেবে) যায়। সোয়া ৯টার দিকে রাস্তার ওই অংশ ভেঙে নদীতে বিলীন হওয়ার পর থেকে ভরসা নৌকা আর ট্রলার। সবাই তাতে করেই রাস্তা পার হচ্ছে। কোনো ঘাট না থাকায় পারাপারে খুবই সমস্যা হচ্ছে।
![](files/Bagerhat_4_816752584.jpg)
সোমবারের ভাঙনে প্রায় তিনশ’ মিটার রাস্তা ছাড়াও বিলীন হয়েছে তিনটি বসতঘর ও ভিটা।
ভাঙনে ঘর হারানো সামছু তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, সোমবার ভোর রাত থেকে বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে আমার চার কাঠা জমিসহ বসতঘর সম্পূর্ণ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আকস্মিক ভাঙনের শুরু হওয়ায় তেমন কিছুই রক্ষা করতে পারিনি। ঘরের চালও (ছাউনি) নদীতে ভেসে গেছে। ছেলে-মেয়ে নিয়ে এখন রাস্তায় এসে আশ্রয় নিয়েছি।
![](files/Bagerhat_9_681348443.jpg)
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পানগুছির ভাঙনে গত কয়েক বছর ধরে এই এলাকার বহু বাড়ি-ঘর, দোকান-পাট ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। বহু মানুষকে নিঃস্ব করেছে এই পানগুছি। অনেকে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। দিনে দিনে এই ভাঙন আরো তীব্র হচ্ছে।
স্থানীয় সংবাদ কর্মী জামাল হোসেন বাপ্পা বাংলানিউজকে জানান, বর্ষার জোয়ারের সময় ওই অংশ দিয়ে পানি ঢুকে প্লাবিত হয় গ্রামের পর গ্রাম। ঘর ডুবে থাকে পানিতে। বেশি প্লাবিত হয় ইউনিয়নের পশুরবুনিয়া, চালিতাবুনিয়া, মিশানবাড়িয়া আর খাউলিয়া গ্রাম। বেড়িবাঁধ না থাকলেও এলজিইডির ৬ ফুট উঁচু এই রাস্তা ঠিক থাকলেও অন্তত গ্রাম গুলোতে স্বাভাবিক অবস্থায় পানি প্রবেশ করতো না।
![](files/Bagerhat_11_943613975.jpg)
উপজেলার খাউলিয়া ইউনিয়নের সন্ন্যাসী গ্রামের বাসিন্দা রুহুল আমীন শেখ ক্ষোভের সঙ্গে বাংলানিউজকে বলেন, এমন একটা দেশে আছি, রাস্তা পার হইতে হয় নৌকা আর ট্রলার দিয়া।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন, মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ ওবায়দুর রহমান, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আশরাফ হোসেন ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মাহমুদ আলী।
![](files/Bagerhat_13_605579163.jpg)
ইউএনও মুহাম্মদ ওবায়দুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, পানগুছির আকস্মিক ভাঙনে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার একটি অংশ পুরোপুরি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বিকল্প আরেকটি রাস্তা দিয়ে যান চলাচলের ব্যবস্থা করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু একটি কালভার্ট ও ছোট কাঠের ব্রিজ ভাঙা থাকায় আপাতত জনসাধারণকে হেঁটেই চলাচল করতে হচ্ছে।
দ্রুত এই পথটি চলাচল উপযুগী করার চেষ্টা চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।
![](files/Bagerhat_6_405256186.jpg)
বাগেরহাটের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মশিউর রহমান বাংলানিউজকে জানান, পানগুছি নদীর ভাঙন রোধে একটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি পাশ হলে ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ০১২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০১, ২০১৫
আরএ