ঢাকা, রবিবার, ২৫ মাঘ ১৪৩১, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

প্রাণ ফিরে পাচ্ছে মৃতপ্রায় মংলা বন্দর

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৫
প্রাণ ফিরে পাচ্ছে মৃতপ্রায় মংলা বন্দর ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বাগেরহাট (মংলা) থেকে ফিরে: দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে মংলা বন্দর। সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের কারণে মৃতপ্রায় মংলা বন্দর আবার ফিরে পাচ্ছে প্রাণ চঞ্চলতা, সচল হচ্ছে বন্দরটি।

বন্দর এলাকার মানুষ দেখছেন সোনালী স্বপ্ন।
 
শনিবার (১০ অক্টোবর) মংলা ঘসিয়াখালী  এলাকায় ঘুরে বন্দরের কর্মকর্তা ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
 
সুন্দরবনের পাশ দিয়ে চলাচলকারী পশুর নদীর মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলে একসময় বড় বড় জাহাজ নোঙর গেড়ে বসে থাকতো। কিন্তু পলি মাটিতে ভরাট হওয়ার পর সেই জাহাজ আর দেখা যায়নি দীর্ঘ কয়েক বছর, বলছিলেন  বন্দর কর্মকর্তা মো.  জয়নাল আবেদিন।
 
তিনি বলেন, মংলা-ঘসিয়াখালী চ্যানেল দিয়ে আগে অনেক জাহাজ যাতায়াত করতো। পলি মাটিতে চ্যানেলটি প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, ড্রেজিং করার পর আবার চ্যানেলটি চালু হয়েছে। গত  প্রায় ৫ বছর এই চ্যানেল দিয়ে কোনো জাহাজই চলতে পারতো না। এখন চলছে। দিনে প্রায় ২০টির মতো জাহাজ এখান দিয়ে চলাচল করে। ফলে জাহাজের জ্বালানি খরচ কমেছে কয়েকগুণ, সময়ও রক্ষা পেয়েছে অনেক।  
 
মংলা বন্দর এলাকার লঞ্চের মাস্টার মো. ছারোয়ার হোসেন (৪৮) বাংলানিউজকে বলেন, মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল বন্ধ হওয়ার পর সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে জাহাজ চলাচল করতো। চ্যানেলটি খননের পর এখন আর সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে জহাজ চলাচল  করে না।
 
তিনি বলেন, আগে জয়মনিখাল দিয়ে জাহাজ চলাচল করার কারণে প্রায়  ১০ ঘণ্টা সময় বেশি লাগতো প্রতিটি জাহাজের। এছাড়া ভাটার সময় জাহাজ আটকে যাওয়ার ভয়ে অনেকেই এই এলাকা দিয়ে চলাচলই করতো না। তাই  মংলা-ঘষিয়াখালী  চ্যানেলটি চালু হওয়ার পর বন্দরটি অনেক বেশি  গুরুত্ব পেয়েছে।
 
বাংলাদেশ আভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, মংলা বন্দরের সঙ্গে সারাদেশের দূরত্ব কমানোর জন্য ১৯৭৪ সালে প্রায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার কৃত্রিম পথ খনন করে প্রায় ৩১ কি.মি দীর্ঘ ‘মংলা-ঘষিয়াখালী’ নৌপথটি চালু করা হয়। এটি ‘বাংলাদেশ-ভারত’ নৌ প্রটোকলভুক্ত ও  বাংলাদেশ-ভারত  ট্রানজিট পথের একটি প্রধান অংশ। চট্টগ্রাম, ঢাকা, বরিশাল, নারায়নগঞ্জ, উত্তরাঞ্চল ও সিলেট অঞ্চল থেকে খুলনা, নোয়াপাড়া, আংটিহারা হয়ে ভারতগামী পণ্যবাহী সকল জাহাজ এ নৌপথ দিয়ে চলাচল করে থাকে। মংলা সমুদ্র বন্দর ও খুলনার সঙ্গে দেশের অন্যান্য জেলার নৌ যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম মংলা-ঘষিয়াখালী রুটটি।
 
চরম নাব্যতা সংকটের কারণে ২০১০ সাল থেকে এ নৌপথে জাহাজ চলাচলে চরম বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। চ্যানেলের ২২ কিলোমিটার অংশ পলি পড়ে নাব্যতা হারায়। এ সমস্যার সমাধানকল্পে ২০১০ সালের মে মাসে প্রথমবারের মতো  বিআইডব্লিউটিএ প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে এখানে ড্রেজিং কাজ শুরু করে। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণ দেখিয়ে ১৫ দিনের মধ্যে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখন খননকৃত এলাকা তিন মাসের মধ্যে পলি পড়ে ভরাট হয়ে যায়।

এরপর আবারও বিআইডব্লিউটিএ ২০১১ সালের ২৮ মার্চ থেকে মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলে ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নদী খনন কাজ শুরু করে। সেবারও উপকার না পাওয়ায় এক মাসের মধ্যে খনন কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখন খুলনা মংলাসহ দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগের বিকল্প পথ হিসেবে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে ভোলা নদী হয়ে নৌযান চলাচল শুরু করে। এতে সুন্দরবনের জীব-বৈচিত্র্য চরম হুমকির মুখে পড়ে।
 
পরে ২০১৪ সালে ২২ মে থেকে তৃতীয়বারের মতো বিআইডব্লিউটিএ প্রায় দুইশত চল্লিশ কোটি টাকা ব্যয়ে এক কোটি ঘনমিটার পলি অপসারণের লক্ষে এ নৌপথে খননকাজ শুরু করে। চায়না হারবার ৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩২ লাখ ঘনমিটার, বসুন্ধরা ড্রেজিং কোম্পানি লিমিটেড ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২ লাখ ঘনমিটার এবং এস.এফ রহমান কোম্পানির ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২ লাখ ঘনমিটার পলি অপসারণ করার কথা। ৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে বাকি ৪৬ লাখ ঘনমিটার অপসারণ করার কথা বিআইডব্লিউটিএ’র।
 
শনিবার (১০ অক্টোবর) সরেজমিনে দেখা যায় একদিকে ড্রেজিং এর কাজ চলছে, অন্যদিকে চলাচল শুরু করেছে জাহাজ। নতুন করে  প্রাণ ফিরে পেয়েছে বন্দরটি।
 
বাংলাদেশ সময়: ১১১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৫
এসএম/পিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ