ঢাকা, রবিবার, ২৫ মাঘ ১৪৩১, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

মিনা ট্র্যাজেডি

ভালুকার নিখোঁজ ও নিহত হাজিদের ঘরে ঘরে মাতম

এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১, ২০১৫
ভালুকার নিখোঁজ ও নিহত হাজিদের ঘরে ঘরে মাতম

ময়মনসিংহ: ‘বাবা পাঁচ দিন নিখোঁজ ছিলেন। এরপর মোয়াল্লিম হাজি শফিক আমাকে জানালেন, বাবা আর নেই।

এ খবর শোনার পর থেকেই মা’র অবস্থা খুব খারাপ। বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন। বাবাকে শেষ দেখাও দেখতে পারলাম না। বুকের মধ্যে এ কষ্টটাই থাকবে। ‘

কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন সৌদি আরবের মিনায় ‘শয়তান স্তম্ভে’ পাথর ছুড়তে গিয়ে পদদলিত হয়ে নিহত ভালুকা উপজেলার মেদুয়ারী গ্রামের আবুল কাশেমের (৬২) ছেলে আজাহারুল ইসলাম রুবেল।

আশুলিয়া থানায় কর্মরত পুলিশের এ উপ-পরিদর্শক (এসআই) বৃহস্পতিবার (০১ অক্টোবর) বিকেলে বাংলানিউজকে বলেন, ‘নিখোঁজ হবার পর থেকেই মা চিন্তায় অস্থির। কিন্তু যখন জানলেন, বাবা আর জীবিত নেই, তখন থেকে মা অঝোরে কাঁদছেন, মুর্ছা যাচ্ছেন। আমরা তাকে শান্তনা দিচ্ছি। আল্লাহর রাস্তায় গিয়ে বাবা শহীদ হয়েছেন, এজন্য আমরা মরদেহ দেশে আনবো না। পবিত্র মক্কা নগরীতেই বাবার দাফন হবে, মা-ই এ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।

শুধু ভালুকার আবুল কাশেমই নন, এ ঘটনায় মরদেহ সনাক্ত হয়েছে উপজেলার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আমান উল্লাহ খান হবি’র স্ত্রী মনোয়ারা খাতুনের (৫০)। পরিবারের ৬ সদস্যের সঙ্গে হজে গিয়েছিলেন তিনি।

মনোয়ারা খাতুনের ছোট ভাই স্থানীয় পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ আনসারুল ইসলাম সবুজ বাংলানিউজকে বলেন, আমার ভাই, বোন ও বোনের স্বামীসহ পরিবারের ৬ জন সদস্য হজে গিয়েছিলেন। আমার বড় ভাই জয়নাল আবেদিন (৬০) ও আপা মনোয়ারা খাতুন একসঙ্গে ছিলেন। ভিড়ের মধ্যে বড় ভাই চাপা পড়লেও বেঁচে যান। কিন্তু আপা মারা যান।

স্ত্রীকে হারিয়ে এখন পাগল প্রায় স্বামী আমান উল্লাহ খান হবি। প্রতিবন্ধী এক ছেলেকে শান্তনা দিতে গিয়ে নিজের কান্নাই ধরে রাখতে পারছেন না তিনি। কান্নায় বুক ভাসাচ্ছেন তার স্বজনরাও। প্রতিবেশীদের মধ্যেও নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

ওয়ার্ড কাউন্সিলর সবুজ আরও জানান, পরশু রাতে আমার বোনের মরদেহের সন্ধান পাওয়া যায়। আগামীকাল শুক্রবার (০২ অক্টোবর) পবিত্র মক্কা নগরীতেই তার দাফন হবে।

এদিকে, মিনার ঘটনার পর থেকে খোঁজ মিলছে না উপজেলার হবিরবাড়ী ইউনিয়নের সিডস্টোর বাজার এলাকার প্রয়াত আলাউদ্দিনের ছেলে মো. নুরুল ইসলামের (৫৫)। তার স্ত্রী শাহানাজ খুকিকে (৪৫) মিনার একটি হাসপাতালে পাওয়া গেলেও নুরুল ইসলামের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

তিনি বেঁচে আছেন, না মারা গেছেন, এ নিয়ে চরম উৎকণ্ঠায় আছেন স্বজনরা। অনলাইন ও সংবাদমাধ্যমে প্রতিদিনই একেকজন হাজির মরদেহ উদ্ধারের খবর আসতেই বুকের ভেতরটা ধক করে ওঠে নুরুল ইসলামের পরিবারের সদস্যদের।

বৃহস্পতিবার নুরুল ইসলামের ছোট ভাই হাজি শহীদুল ইসলাম জানান, ভাইয়ের সঙ্গে আরাফার ময়দানে শেষ কথা হইছিল। মেলাক্ষণ আলাপ করছিলাম। মানুষের পাড়া খাইয়া ভাবি হাসপাতালে ভর্তি হইছিল। পরে তারে হাসপাতাল থেইক্যা হজ মিশনে দিয়া গেছে। ভাবির একেবারে পাগলের মতো অবস্থা। যখনই ফোন দেই, আমারে বলেন, তোমার ভাইরে পাইলা?

পাঁচ সন্তানের জনক নুরুল ইসলামের ছোট ছেলে খোকনের বয়স ৮ বছর। হাজী শহীদুল ইসলাম আরও বলেন, খোকন কিছুক্ষণ পরপর আইসা জিজ্ঞেস করে, কাকা, আমার বাবা কই? আমি উত্তর দিতে পারি না। পাশ কাটাইয়্যা যাই। কিন্তু এমনে কয়দিন? ভাই জীবিত আছেন, নাকি মারা গেছেন- এটা জানতে পারতাম যদি, একটু শান্তি পাইতাম।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০১, ২০১৫
আরএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ