আশুগঞ্জ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকে: সিঁড়ি দিয়ে নামছিলাম। পেছন থেকে একজন দ্রুত নামার চেষ্টা করছিলেন তাই তার গায়ের সঙ্গে মৃদু ধাক্কা লাগে।
কিন্তু তার এই পড়িমরি করে ছোটা এবং ভ্যানিটি ব্যাগ নিয়ে কৌতূহল সৃস্টি হয় মনের মধ্যে। তাকে অনুসরণ করতে দ্রুত পা চালাই। সিঁড়ির গোড়ায় একজন মহিলার দুই ফুট দূরত্বে দাঁড়িয়ে পড়েন ভ্যানিটি ব্যাগবাহী।
ভদ্র মহিলা হাঁটা শুরু করলে তাকে অনুসরণ করতে থাকেন ছায়ার মতো। ব্যাগ ও ফাইল তখনও তার হাতেই। পরিচয় জানতে চাইলে জানান, নাম মনির হোসেন; ব্রাহ্মণবাড়িয়া ডিসি অফিসের অফিস সহকারী পদে চাকরি করেন।
আগে ছিলেন সদর ভূমি অফিসে। বছর খানেক থেকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) লুৎফুন নাহারের অফিসে কাজ করেন তিনি। জেলা প্রশাসক না থাকায় তিনিই আছেন এখন চার্জে। ভ্যানিটি ব্যাগটি কার জানতে চাইলে বলেন, ‘কেন ম্যাডামের’।
আশুগঞ্জে নতুন তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ শেষ হয়েছে। ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেছিলেন। ৪৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন নতুন এই তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র আগামী ৮ অক্টোবর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
![](files/manual1_930525562.jpg)
এ কারণেই ঢাকা থেকে সাংবাদিকদের নিয়ে যাওয়া হয় আশুগঞ্জে। সাংবাদিক দলের সহযাত্রী হয়েছিলাম আমিও।
বেলা ১২টার দিকে পৌঁছার পর প্রথমে কনফারেন্স রুমে সাংবাদিকদের কয়েক মিনিটের ব্রিফিং শেষে ঘুরে দেখার পালা। পথ প্রদর্শক আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানির কর্তারা।
পরিদর্শনে অংশ নেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা লুৎফুন নাহারও। আর তাকে পড়িমরি করে অনুসরণ করতে থাকেন তার সহকারী মনির হোসেন। বেচারার কী অবস্থা চোখে না দেখলে বর্ণনা করা কঠিন।
কিছুদূর যেতেই টিভি সাংবাদিকরা ঘিরে ধরেন এডিসিসহ বড় কর্তাদের। সেখানে ৪০ মিনিট ধরে চলে প্রশ্নত্তোর পর্ব। সেখানেও লুৎফুন নাহারকে ছায়ার মতো অনুসরণ করতে থাকেন মনির হোসেন। পরিদর্শনকালের পুরো সময় জুড়েই ওই এডিসিকে অনুসরণ করেন তিনি। কখন ২ ফুট দূরত্বে কখনও বা ৫ ফুট দূরত্বে দাঁড়িয়ে। তবে এর বেশি ব্যবধান হতে দেননি কখনও।
![ADC_Brahmanbaria ADC_Brahmanbaria](files/October2015/October06/ADC_Brahmanbaria_250331527.jpg)
বর্তমান সময়ে অনেক দেশেরই পদস্থ কর্মকর্তারা নিজের চা বানানো থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত অনেক কাজই নিজেরাই করছেন। সেখানে সামান্য ভ্যানিটি ব্যাগ একজন এডিসি বহন না করে স্টাফের হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন। বিষয়টি কতটা যৌক্তিক তা পাঠকরাই মূল্যায়ন করবেন।
কর্তার ভ্যানিটি ব্যাগ বহনের জন্য যে কর্মচারী প্রয়োজন তা কখনই চোখে দেখার সৌভাগ্য হতো না আশুগঞ্জে না গেলে। আর এই সৌভাগের দুয়ার উন্মোচন করার জন্য কৃতজ্ঞতা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের জনসংযোগ পরিদপ্তরের পরিচালক সাইফুল হাসান চৌধুরীর প্রতি। যিনি দু’দফায় এসএমএস ও ফোনে আশুগঞ্জ যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৬, ২০১৫
এসআই/এমজেএফ