ঢাকা: বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা আরও জোরদার করতে সরকারের কাছে দাবি করেছেন ঢাকাস্থ সব মিশনের কূটনীতিকরা।
সম্প্রতি ইতালি ও জাপানের নাগরিক হত্যাকাণ্ডের পর বিদেশিদের সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে মঙ্গলবার (০৬ অক্টোবর) ঢাকাস্থ মিশনগুলোকে অবগত করেছে সরকার।
এ সময় বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের বাড়তি নিরাপত্তা চেয়েছেন তারা। বৈঠক সূত্র এসব তথ্য জানায়।
বৈঠকে জাতিসংঘের প্রতিনিধি, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, স্পেন, নেপালসহ ৪৫টি দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও মিশন প্রধানসহ প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, স্বরাষ্ট্র সচিব মো. মোজাম্মেল হক খান, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক, পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক, র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় কূটনীতিকদের সঙ্গে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক সূত্র জানায়, দুই বিদেশি নাগরিক হত্যাকাণ্ডের পর সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ বৈঠকে কূটনৈতিকদের অবগত করা হয়।
বৈঠকে কূটনৈতিক এলাকাতে সার্বিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি, বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে সরকারের ভাবনা, দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ড নিয়ে তদন্তের হালনাগাদ তথ্য, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জঙ্গি সংগঠন আইএস’র দাবির বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।
এ সময়ে কূটনীতিকরা সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলোকে স্বাগত জানান। সেই সঙ্েগ বাংলাদেশে অবস্থানরত সব বিদেশি নাগরিকের নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও নিশ্চিত করতে অনুরোধ করেছেন।
এছাড়া বেশ কিছু দেশের রাষ্ট্রদূত জঙ্গিবাদ দমনে সরকারকে সহায়তা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আর আইএস’র সম্পৃক্ততা নিয়ে সত্যতা যাচাইয়ের বিষয়ে সহায়তার কথাও জানান তারা।
বৈঠক শেষে বের হয়ে কূটনৈতিক কোরের ডিন ও ঢাকাস্থ ব্রিটিশ হাইকমিশনার রর্বাট গিবসন উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে জানানো হয়েছে। এতে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সম্পূর্ণ তথ্য দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র সচিব, পররাষ্ট্র সচিব এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক।
‘এছাড়া বৈঠকে আমরা বিদেশি কর্মীদের নিরাপত্তা ও সাহায্যের জন্য সারা দেশে অতিরিক্ত নিরাপত্তা নিয়েও আলোচনা করেছি। আর অতিরিক্ত নিরাপত্তার জন্য আমরা সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। ’
এ সময় তিনি বিট্রিশ প্রধানমন্ত্রীর উক্তি উল্লেখ করে বলেন, জঙ্গিবাদ সব দেশের জন্যই হুমকি। শুধু বাংলাদেশই নয় পুরো বিশ্বে আমরা সবাই মিলে জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় একত্রে কাজ করতে উন্মুখ।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার নিয়ে সরকারকে কোনো পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে রর্বাট গিবসন বলেন, আজকের বৈঠকে নতুন কোনো পরামর্শ দেওয়া হয়নি। তবে সরাসরি পুলিশের মহাপরিদর্শক এবং তার কিছু সহকর্মীদের আগেই আমাদের কিছু ভাবনা ও পরামর্শের বিষয়ে বিবেচনার জন্য জানিয়েছিলাম।
আরেক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশে কূটনৈতিক কোরের ডিন বলেন, সরকার আমাদের নিশ্চিত করেছে যে, বিদেশি নাগরিক হত্যাকাণ্ডের তদন্তে কোনো কিছুই বাদ দেওয়া হবে না। পাশাপাশি দুস্কৃতিকারীদের গ্রেফতারে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব দেখানো হবে।
বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কূটনীতিকদের আশঙ্কা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার বলেন, কূটনৈতিক এলাকাতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য আমরা সরকারকে আমাদের সাধুবাদ জানাই। আমরা কৃতজ্ঞও প্রকাশ করছি।
এর আগে কূটনৈতিক কোরের ডিন হিসেবে বাংলাদেশে অবস্থানরত বৈদেশিক মিশনগুলোকে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ও বাংলাদেশে দুই বিদেশি হত্যার হালনাগাদ তথ্য জানানোর দাবি করেছিলেন ঢাকাস্থ যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রর্বাট গিবসন।
বৈঠক শেষে দুই বিদেশি হত্যার রহস্য সমাধানে সরকারের দৃঢ় প্রতিজ্ঞার কথা ব্যক্ত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
সাংবাদকিদের তিনি বলেন, আমরা যা যা করার দরকার, তার সব করছি। রাষ্ট্রদূতরা নিশ্চিত থাকতে পারেন। শুধু ঢাকা বা কূটনৈতিক এলাকাই নয়। বরং সারা দেশে যেখানে বিদেশিরা আছেন সেখানে তাদের নিরাপত্তার জন্য সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
‘যারা এ দুটি ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদেরকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা জারি আছে,’ বলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী।
বিদেশিদের ভ্রমণ সর্তকতা তুলে নেওয়ার জন্য বৈঠকে কোনো কিছু বলা হয়েছে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আজকে মাত্র নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে তাদের অবগত করা হয়েছে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন কূটনীতিকরা।
‘সেই সঙ্গে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করার অনুরোধ জানিয়েছেন তারা,’ যোগ করেন এএইচ মাহমুদ আলী। আইএস নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা কূটনীতিকদের জানিয়েছি যে আইএস জড়িত থাকার বিষয়টিতে আমরা কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাইনি। আর যুক্তরাষ্ট্র সরকার এর সতত্যা খোঁজার জন্য চেষ্টা করছে।
সম্ভব্য হামলা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তথ্য দিয়েছিলো, মার্কিন রাষ্ট্রদূতের এমন বক্তব্য নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তা দিয়েছিলো তা ঠিক আছে। কিন্তু সেখানে তো ঘটনা ঘটে নাই। যারা এসব করে, তারা কিন্তু বলে একটা আর করে আরেকটা।
হয়তো বললো যে এই জায়গাতে আমরা আক্রমণ করবো। কিন্তু করলো আরেক জায়গায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৬,২০১৫, আপডেট: ২০৪৩ ঘণ্টা
এসএমএ/জেপি/এমএ
** সরকারের পদক্ষেপে বিদেশি কূটনীতিকরা কৃতজ্ঞ
** কূটনীতিকদের ব্রিফিং করলো সরকার
জাতীয়
সন্তুষ্ট কূটনীতিকরা, তবে আরও নিরাপত্তা দাবি
বাংলানিউজ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
![সন্তুষ্ট কূটনীতিকরা, তবে আরও নিরাপত্তা দাবি](public/uploads/2015/10/06/abul_mahmud_sm_486937128.jpg)
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।