ঢাকা, শুক্রবার, ২৪ মাঘ ১৪৩১, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

বিনামূল্যের বই নিয়ে দিনভর নাটক!

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ৬, ২০১৫
বিনামূল্যের বই নিয়ে দিনভর নাটক! ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা সড়ক থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে এসে থামলো একটি ট্রাক। ট্রাকটি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সরকারি বিনামূল্যের পুরনো বইয়ে ঠাসা।

স্থানীয়রা দেখে সন্দেহ হওয়ায় ট্রাকটি আটকে দিলেন।

বৈধভাবে টেন্ডারে একজন বইগুলো কিনেছেন- এমন দাবি করে তাকে ডাকার নাম করে চম্পট দিলেন চালক। ঘটনাটি মঙ্গলবার (০৬ অক্টোবর) সকাল ১০টার। দুপুর গড়ালেও ওই চালক আর এলেন না। এলেন না কোনো বৈধ দাবিদারও।

পরে স্থানীয় এলাকাবাসী খবর দিলেন পুলিশে। বিকেলে পুলিশ এসে ট্রাকটি নিয়ে এলো কোতোয়ালি মডেল থানায়। সরকারি বিনামূল্যের বই নিয়ে এমন লঙ্কাকাণ্ড ঘটেছে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার শম্ভুগঞ্জ লেবারমোড় এলাকায়।

অবশ্য কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম বলেন, টেন্ডারে একজন বইগুলো কিনেছেন। এর বৈধ কাগজপত্রও আছে। ট্রাক শ্রমিকরা কিছু টাকার জন্য ওই ট্রাকটি আটকে রেখেছিলেন। পরে পুলিশ পাঠিয়ে ট্রাকটি থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।

পুলিশের এমন দাবির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন স্থানীয় এলাকাবাসী। তাদের একজন আবুল কাশেম। বয়স ৪৩। সদর উপজেলার শম্ভুগঞ্জের চর নিলক্ষীয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

তিনি বলেন, সকালে স্থানীয় লেবারমোড় এলাকায় আমরা কয়েকজন বসে ছিলাম। হঠাৎ দেখি পশ্চিম দিক থেকে একটি ট্রাক (ঢাকা মেট্রো-ট-১৮৩৬৪৭) এ পথে আসছে। ট্রাকে প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের বিনামূল্যে বিতরণের বই বোঝাই।

চালককে জিজ্ঞাসা করলাম, এ পথে আসছো কেন? চালক উত্তর দিলেন, আমরা এক্সিডেন্ট কইরা আসছি। পুলিশ তাড়া করছে। এ কারণে এ পথে ঢুইকা পড়ছি। চালক জানালো, নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে তারা ভোরে বইগুলো ট্রাকে লোড করেছেন। কিশোরগঞ্জের এক পার্টি টেন্ডারে বই কিনেছেন।

ওই আওয়ামী লীগ নেতার ভাষ্যমতে, এরপর আমরা ট্রাকটি থামিয়ে টেন্ডারের কাগজপত্র দেখতে চাইলে চালক এবার বললো, পার্টি শম্ভুগঞ্জেই আছেন। তাকে নিয়ে আসি। কাগজপত্র তার কাছেই আছে। এ কথা বলেই চালক চম্পট দিলেন।

একই রকম কথা শোনা গেলো ফজলুল হক নামে আরেকজনের মুখ থেকে। তিনি বলেন, ট্রাকের চালক প্রথমে বললেন ট্রাকে মাছের খাদ্য। ত্রিপল দিয়ে ডাকা থাকায় প্রথমে বুঝতে পারিনি। পরে ত্রিপল তুলে দেখলাম হাজার হাজার সরকারি বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক।

বইগুলো ২০১২, ২০১৩ ও ২০১৪ সালের। এরপর চালককে কাগজপত্র দেখানোর জন্য চাপ দিলে মালিককে ডেকে আনার কথা বলে তিনি পালিয়ে যান। দুপুর গড়ালেও ওই চালক তো আসেননি। কোনো বৈধ দাবিদারও আসেননি, বলেন ফজলুল হক।

এ বিষয়ে ঘটনাস্থল ঘুরে আসা কোতোয়ালি মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোমেন সিরাজী জানান, টেন্ডারে সিলেটের মেসার্স ফাহিম এন্টার প্রাইজসহ ৩টি প্রতিষ্ঠান নিয়ম তান্ত্রিকভাবেই বইগুলো নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে কিনেছেন।

তবে কেন এ লঙ্কাকাণ্ড? এ প্রশ্ন করতেই ট্রাক চালকের উপর ক্ষোভ ঝাড়লেন এ পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, স্থানীয় লোকজনদের নিয়ে ধান্ধার জন্যই ট্রাকের চালক এ কাণ্ড ঘটিয়েছেন। পরে সুযোগ বুঝে ট্রাক চালক পালিয়ে গেছেন। ট্রাকটি থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। বইগুলো ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৬, ২০১৫
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।