ঢাকা, শুক্রবার, ২৪ মাঘ ১৪৩১, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

মেঘনার ভাঙনে আশ্রয়হীন মানুষের দুর্দশা কাটছে না

ছোটন সাহা, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০১৫
মেঘনার ভাঙনে আশ্রয়হীন মানুষের দুর্দশা কাটছে না ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ভোলা: কেউ হারিয়েছে বসতঘর, কেউ জমি, কেউ বা পুকুর কিংবা মাছের ঘের। প্রতি নিয়ত জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে চলা এসব মানুষ আয়ের উৎস আর মাথা গোঁজার শেষ সম্বল হারিয়ে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন।



অনিশ্চয়তার মধ্যে কাটছে তাদের দিন। কোথায় আশ্রয় নিবেন আর কিভাবে ঘুরে দাঁড়াবেন এখন এই একটাই চিন্তা তাদের।
 
ভোলা সদরের ইলিশা ইউনিয়নে মেঘনার ভয়াবহ ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে মানুষ। ১১ দিনে এ পর্যন্ত নতুন করে পাঁচ শতাধিক পরিবার গৃহহারা হয়েছেন।
 
মেঘনায় বিলিন হয়ে গেছে রাস্তাঘাট, বসতঘর, ফসলি জমি, পুকুর ও মাছের ঘের। নদী ভাঙনে দিশেহারা এসব মানুষের জীবনে নেমে এসেছে দুঃখ আর দুর্দশা।
 
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোজার ঈদের সময় হঠাৎ করেই চড়ার মাথা পয়েন্ট দিয়ে ভাঙন শুরু হয়। পরে এই ভাঙন ভয়াবহ রুপ ধারন করে।
 
তালতলী থেকে দক্ষিণ রাজাপুর পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন দেখা দেয়। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে মানুষ। ভাঙনের ফলে রোজার ঈদ থেকে কোরবানি ঈদ পর্যন্ত নতুন ও পুরাতন ফেরিঘাট, দু’টি লঞ্চঘাট, দু’টি গুচ্ছ গ্রাম, একটি বেসরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্র, একটি মসজিদ, দু’টি মৎস্য অবস্থান কেন্দ্র ও প্রায় ২০ হাজার একর ফসলের জমি। ভাঙন রোধে নদীর তীরে জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেললেও কাজ হয়নি।

সর্বশেষ কোরবানি ঈদ থেকে ছয় অক্টোবর পর্যন্ত নতুন করে কালুপুর, দক্ষিণ রাজাপুর ও পূর্ব ইলিশা গ্রামের পাঁচ শতাধিক পরিবার গৃহহারা হয়ে পড়েছে।
 
বর্তমানে নদী থেকে ইলিশা জংসন বাজারের দূরত্ব মাত্র ১শ’ গজ। মেঘনার ভয়ঙ্কর ভাঙন অব্যাহত থাকায় জংসন বাজার ছাড়াও একটি পুলিশ ফাঁড়ি, ১৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, দুই হাজার দোকান-পাট, দু’টি বরফকল, মোবাইল টাওয়ার বেশ কিছু মসজিদ-মাদ্রাসা ও ৫০ হাজার ঘরবাড়িসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হুমকির মুখে পড়েছে।
 
এলাকাবাসী বলছেন, মেঘনার ভাঙন অব্যাহত থাকলে ভোলা শহর হুমকির মুখে পড়বে। তাই ভাঙন রোধে দ্রুত স্থানীয় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

সোম ও মঙ্গলবার ভাঙন কবলিত রাজাপুর ও ইলিশা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সহায়-সম্বলহারা মানুষের আহাজারি। কেউ ব্যস্ত ঘর সরাতে কেউ মালামাল গোছাতে। কিছুদিন আগেও এসব পরিবারে মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিলো। কিন্তু এখন তাদের চোখে-মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ। কোথায় যাবেন, কি করবেন এ নিয়েই তাদের চিন্তা। তবে এখনও নতুন আশ্রয়ের ঠিকানা খুঁজে পায়নি তারা।

ভাঙন কবলিত এলাকার জাকির হোসেন, শাহিনুর, মানসুরা বেগম, রুহুল আমিন, নারগিস বেগম বলেন, নদী ঘরভীটা ভেঙে নিয়ে গেছে। এখন খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছি। সরকার আমাদের কোনো খোঁজ খবর নেয় না।

নারগিস বেগম বলেন, নদীতে চার গন্ডা জমি নিয়ে গেছে এখন আরো ছয় গন্ডা ভাঙনের মুখে রয়েছে। সম্বল বলতে জমি ও ঘরভীটাটুকুই ছিলো। কিন্তু এখন সব শেষ।

কুলসুম বেগম বলেন, আমরা গরিব মানুষ দিন এনে দিন খাই, মাথা গোঁজার যে আশ্রয়ট‍ুকু ছিল সেই ঠাঁইটুকুও নদীতে নিয়ে গেছে।

রুহুল আমিন বলেন, নয় গন্ডা জমিতে ফসলের ক্ষেত ও একটি মাত্র বাড়ি ছিলো। কিন্তু সর্বনাশা মেঘনা সব নিয়ে গেছে। এখন থাকার আশ্রয়টুকুও নেই।

এদিকে, নদী ভাঙন থেকে রক্ষার দাবিতে ১০ দিনের আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছে ইলিশা, রাজাপুর ও ভোলা বাঁচাও সংগ্রাম কমিটি। তারা ইতোমধ্যে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, লিফলেট বিতরণ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে।

কমিটির সদস্য সচিব নুরে আলম ও সদস্য আনোয়ার হোসেন জানান, ভাঙনে বহু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভাঙন রোধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ না করা পর্যন্ত এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
 
ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল হেকিম বলেন, সাড়ে তিন কিলোমিটার এলাকায় স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধে সিসি ব্লক স্থাপন করার প্রক্রিয়া হাতে নেওয়া হয়েছে। ৩১০ কোটি টাকার এ প্রজেক্ট অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে এবং শুষ্ক মৌসুমে এই কাজ শুরু হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০১৩৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০১৫
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।