ঢাকা: বিদেশি নাগরিক হত্যার ঘটনায় কূটনৈতিক পাড়া খ্যাত রাজধানীর বারিধারা-গুলশান-বনানীতে নিরাপত্তা জোরদার করেছে সরকার। বিশেষ করে মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর কড়াকড়ি একটু বেশিই।
রোববার (১১ অক্টোবর) সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, গুলশানের সব প্রবেশ পথেই বসানো হয়েছে নিরাপত্তা চৌকি। একইসঙ্গে এর আশেপাশ এলাকা হিসেবে বনানী, নিকেতন এবং মহাখালীতেও যান চলাচলে চলছে কড়াকড়ি। তবে মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ সতর্ক দৃষ্টি। একই অবস্থা বিরাজ করছে রিকশার ক্ষেত্রেও।
বনানী, নিকেতনে নিরাপত্তা চৌকির সদস্যদের তল্লাশি এড়াতে পারলেও গুলশানে কোনো রিকশা ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। এতে নিরাপত্তা রক্ষা হলেও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
গুলশান-১ এর প্রবেশ পথ হিসেবে নিকেতনের সামনে বসানো হয়েছে পুলিশের নিরাপত্তা চৌকি। এই পজিশনেই পুলিশের কড়াকড়ি সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা গেছে। এই রুটে কোনো মোটরসাইকেল আরোহীই পুলিশের নজর এড়িয়ে গুলশানে ঢুকতে পারছেন না।
এখানে তেজগাঁও শিল্প পুলিশের এএসআই (সহকারি উপ-পরিদর্শক) কামাল বাংলানিউজকে বলেন, রিকশা আরোহীদের তল্লাশি করা হচ্ছে মোটিভ দেখে। সন্দেহ হলেই তল্লাশি করা হচ্ছে। বিদেশিদের নিরাপত্তার জন্য এটুকু করতেই হচ্ছে। তবে যেসব যাত্রীর সঙ্গে ব্যাগ রয়েছে তারাই সবচেয়ে বেশি নজদারিতে রয়েছেন।
গুলশান-বাড্ডা লিংক রোড়, শ্যুটিং ক্লাব, গুলশান-১ থেকে মহাখালী রুটে ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা, বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ, ইউএন ব্রিজ ও নতুন বাজার মোড়ে বসানো চেক পয়েন্টগুলোতেও একই অবস্থা দেখা গেছে।
তবে এই পয়েন্টগুলো পেরিয়ে আসতে পারলেও কোনো রিকশাকে গুলশানের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে রিকশা আরোহীদের বাক-বিতণ্ডা হচ্ছে রীতিমতো। এদিকে পুলিশের এই কড়াকড়ির সুযোগ নিচ্ছেন রিকশাওয়ালারাও।
যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গন্তব্যের মাঝপথে কোনো চেকপোস্ট দেখতে পেলে দূর থেকেই রিকশা চালক থেমে যান। বলেন, আর যাওয়া যাবে না। এরপর কিছু দূর পায়ে হেঁটে গিয়ে আবার রিকশা নিতে হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন ব্যয় বাড়ছে, অন্যদিকে কষ্টও ভোগ করতে হচ্ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত যাত্রীদের।
বনানী এ ব্লকের ১৮ নম্বর রোডে লেক পার হয়ে গুলশান-২ যাওয়ার পথেই বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। এখানেই কথা হলো রুমানা আক্তার নামে এক যাত্রীর সঙ্গে। রিকশা থেকে নামিয়ে দেওয়ায় পুলিশকে এক হাত নিচ্ছেন তিনি। তা দেখে এগিয়ে যেতেই রুমানার চোখে মুখে বিরক্তির স্পষ্ট ছাপ দেখা গেলো। গুলশান থানা পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মাসুমের কাছে তিনি রীতিমত জবাবদিহিতা চাইছেন। বলছেন, পায়ে ব্যথা নিয়ে হাঁটতে পারছি না। এভাবে কিছুদূর পরপর চেক পোস্টে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মানুষের চেহারা দেখলেই তো আন্দাজ করা যায়, কে অপরাধী হতে পারে। এসব ট্রেনিং আপনাদের দেওয়া হয়নি?-ক্ষোভের সঙ্গে প্রশ্ন তার।
জবাবে মাসুম বলেন, আপা আমরা সবাইকে নামিয়ে দিচ্ছি না। স্কুলের শিক্ষার্থী, বয়স্কদের ছেড়ে দিচ্ছি। নিরাপত্তার খাতিরে এমন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এই শুনে আরো তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলেন রুমানা। বলেন, মানুষের কষ্ট দেওয়ার এমন নিয়ম বানায় কারা? আপনাদের ঊর্ধ্বতনরা কী এসব দেখেন না? এই বলে হাঁটতে শুরু করেন তিনি।
সমস্যার কথা জানতে চাইলে অনেকটা অভিমানের সুরেই এ প্রতিবেদকে রুমানা বলেন, কোনো সমস্যা নেই। আমাদের আবার সমস্যা কি! তবে অনেক চেষ্টার পরও তিনি ফটো তোলার সম্মতি না দিয়ে চলে গেলেন।
এএসআই মাসুম বাংলানিউজকে বলেন, এ অবস্থা কতোদিন চলবে তা বলা যাচ্ছে না। তবে আমাদের লক্ষ্য গুলশান থেকে সব রিকশা বের করে দেওয়া। যে কারণে কোনো রিকশা ঢুকতে দিচ্ছি না।
এদিকে গুলশান, বনানী ও নিকেতনে দিনভর র্যাব-পুলিশের ব্যাপক টহল লক্ষ্য করা গেছে। কোথাও মোটরসাইকেলে, কোথাও ভ্যানযোগে চলছে নিরবচ্ছিন্ন টহল।
আবার সাইরেন বাজিয়ে চলছে পুলিশের আর্মড পারসোনেল কেরিয়ার (এপিসি) বা সাঁজোয়া যান। সন্দেহ হলেই প্রাইভেটকার, সিএনজিসহ অন্যান্য বড় যানবাহনে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। তবে সাধারণ যাত্রীদের দাবি, বিদেশিদের নিরাপত্তা যেমন রক্ষা করতে হবে, তেমনি দেশি নাগরিকদের সুবিধার কথাও ভাবতে হবে।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর গুলশানে ইতালিয়ান নাগরিক তাবেলা সিজার এবং ৩ অক্টোবর রংপুরে জাপানি নাগরিক কুনিং হোশি খুন হন। এরপর কূটনৈতিক পাড়ায় নিরাপত্তা জোরদার করে সরকার।
বাংলাদেশ সময়: ০৬২৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৫
ইইউডি/বিএস/জেডএম