ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৩ মাঘ ১৪৩১, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা

আচরণবিধি মানছেন না কাদের সিদ্দিকী

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৫
আচরণবিধি মানছেন না কাদের সিদ্দিকী

ঢাকা: টাঙ্গাইল-৪ আসনের উপ-নির্বাচনে আচরণবিধির তোয়াক্কা করছেন না কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কর্ণধার ও প্রার্থী কাদের সিদ্দিকী। প্রায় প্রতিদিনই জনসভা, জনসংযোগ করে গামছা মার্কায় ভোটা চাচ্ছেন তিনি।

ফলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা করছে গোয়েন্দারা।
 
নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও টাঙ্গাইল জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আলিমুজ্জামানের কাছে টাঙ্গাইল পুলিশ সুপারের (জেলা বিশেষ শাখা) পাঠানো এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। যার একটি অনুলিপি বাংলানিউজের হাতেও আছে।
 
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আগামী ১০ নভেম্বর টাঙ্গাইল-৪ আসনের উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এতে অংশ নিতে কাদের সিদ্দিকী নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে কালিহাতী থানা এলাকায় সভা, সমাবেশ, মিছিল, মিটিং, শো-ডাউন, পথসভা, শোভাযাত্রা করে ভোটারদের গামছা মার্কায় ভোটা দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। যা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের সামিল।
 
এছাড়া উপ-নির্বাচনের বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা ক্রমেই কাদের সিদ্দিকীর মতো প্রচারণার জন্য পোস্টার, ব্যানার, লিফলেট বিতরণ, প্রদর্শন শুরু করেছেন। যা নির্বাচনী বিধির লংঘন। এমন কার্যাবলী অবিলম্বে বন্ধ না হলে কালীহাতী থানা এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই কাদের সিদ্দিকীসহ অন্যান্য প্রার্থীদের নির্বাচনী আচরণবিধি বহির্ভূত প্রচারণা বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
 
সংসদ নির্বাচনের আচরণ বিধিমালার ১২ বিধি অনুযায়ী, কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কিংবা তার মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি ভোটগ্রহণের জন্য নির্ধারিত দিনের তিন সপ্তাহ সময়ের পূর্বে কোনো ধরনের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করতে পারবেন না।
 
ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ভোটগ্রহণ হবে ১০ নভেম্বর। অর্থাৎ ১০ নভেম্বরের আগের ২১ দিন বা ২১ অক্টোবরের আগে প্রচারণার উপর আইনি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
 
কিন্তু কাদের সিদ্দিকী উল্লেখিত ওই সময়ের অনেক আগেই প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন বলেও ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে বলা হয়, আচরণ বিধি লংঘন করে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বিকাল ৪টায় কালিহাতীর রামপুর হাইস্কুল মাঠ, ১৫ সেপ্টেম্বর বিকালে দুর্গাপুর ইউনিয়নের পটল বাজার উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ, ১৭ সেপ্টেম্বর বিকেলে আউলিয়াবাদ বাজারে, ১৯ সেপ্টেম্বর বিকেলে ঘাটাইল থানার ফাতেমা হালিম উচ্চ বিদ্যালয় ও ২১ সেপ্টেম্বর কালিহাতী থানার নারিন্দা টি আর কে এন স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে জনসভা করেছেন কাদের সিদ্দিকী।

এছাড়া ২২ সেপ্টেম্বর বিকেলে দক্ষিণ বেতডোবা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে উত্তর বেতডোবাস্থ একতা রাইস মিল প্রাঙ্গণ, ৩ অক্টোবর বিকেলে কস্তুরীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ, ৪ অক্টোবর বিকেলে কালিহাতীর কোকডহরা হাসপাতাল মাঠ ও ৫ অক্টোবর বিকেলে বেরীপটল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠেও জনসভা করেছেন তিনি।
 
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ গত ১৫ সেপ্টেম্বর এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। যদিও হজের কারণে ১৭ সেপ্টেম্বর এ নির্বাচনের পুনঃতফসিল দেওয়া হয়।

কাদের সিদ্দিকী তফসিল ঘোষণার দিন থেকেই প্রচারণা শুরু করেছেন। যদিও আইন অনুযায়ী, তফসিল ঘোষণার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সব ধরনের প্রচারণা বন্ধ করতে হয়।
 
ওই প্রতিবেদনের একটি অনুলিপি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহবুব হোসেনের কাছে পাঠিয়েও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন ওই পুলিশ সুপার (জেলা বিশেষ শাখা)।

এর পরিপ্রেক্ষিতে মাহবুব হোসেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সোমবার নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব সিরাজুল ইসলামকে একটি চিঠি দিয়েছেন।

চিঠির সঙ্গে ওই প্রতিবেদনও সংযুক্ত করা হয়েছে। এতে তিনি আচরণবিধি ভঙ্গ করে নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণা বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ইসি সচিবের সদয় দৃষ্টি কামনা করেছেন।

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৪ সালে টাঙ্গাইল-৮ আসনের উপ-নির্বাচনেও মনোনয়নপত্র জমা দেন কাদের সিদ্দিকী। কিন্তু সে নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হতে পারেননি। ওই সময় ঋণখেলাপের দায়ে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করে দিয়েছিলেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।

এবারও আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে তার মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। মঙ্গলবার (১৩ অক্টোবর) মনোনয়নপত্র বাছাই করবেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।

এ নির্বাচনে ১১জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে কাদের সিদ্দিকী ও তার সহধর্মিনী নাসরিন সিদ্দিকীসহ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগেরই রয়েছে চার প্রার্থী।
 
দশম সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৪ আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রী হয়েছিলেন কাদের সিদ্দিকীর ভাই আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী। কিন্তু হজ নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় মন্ত্রিত্ব হারানোর পাশাপাশি দলীয় পদও হারাতে হয় তাকে।

এরপর লতিফ সিদ্দিকীর এমপি পদের ‘বৈধতা’ নিয়ে প্রশ্ন উঠে। নির্বাচন কমিশন এই প্রশ্ন কিংবা বিরোধ নিষ্পত্তির সময়ই সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন লতিফ সিদ্দিকী। তার পদত্যাগের পর গত ১ সেপ্টেম্বর আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়।
 
বাংলাদেশ সময়: ২১০৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৫
ইইউডি/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।