ঢাকা: শিগগিরই বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে উপকূলীয় জাহাজ চলাচলে অপারেটিং প্রটোকল বা স্ট্যার্ন্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) স্বাক্ষর হতে যাচ্ছে। দুই প্রতিবেশী দেশের পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে কাস্টমসের নথিপত্র কমিয়ে আনার বিষয়টি উল্লেখ রেখে খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে।
এছাড়া খসড়ায় দুদেশের পণ্য পরিবহনে প্রতি ট্রিপে মালামাল ৬ হাজার টনের মধ্যে রাখার কথা বলা হয়েছে।
এদিকে কাস্টমস নথির ক্ষেত্রে নূন্যতম কাগজপত্র নিশ্চিত করাসহ পণ্য ওঠা-নামার জন্য দুদেশকেই প্রয়োজনীয় জেটি, ক্রেনসহ অন্যান্য হ্যান্ডিলিং সেবা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ, জাহাজে অবস্থানরত নাবিকদের খাদ্যসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, ব্যাংকসেবা, এমনকি বিমাসহ অন্যান্য বিষয়গুলোও এসওপিতে উল্লেখ আছে।
উপকূলীয় নৌ চলাচল চুক্তির আওতায় দুদেশের মধ্যে উপকূলীয় জাহাজ চলাচল করার নীতিমালা ঠিক করতেই এই এসওপি স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে প্রতিবেশী দুদেশ। যার খসড়া চুড়ান্ত করে ইতিমধ্যে মতামত জানতে ভারতের কাছে পাঠানো হয়েছে। তারা চূড়ান্ত করলেই নভেম্বরে স্বাক্ষর সম্পন্ন হবে।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, আগামী ৩ ও ৪ নভেম্বর নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ-ভারত নৌসচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সেখানেই খসড়া এসওপি সই হওয়ার কথা রয়েছে। ”
তবে এ বৈঠকের আগে ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট ফি নির্ধারণ, নৌ প্রটোকলসহ অন্যান্য ইস্যু নিয়ে ঢাকায় দুই দেশের যৌথ কমিটির মধ্যে একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
এ বিষয়টি নিশ্চিত করে নৌ পরিবহন সচিব শফিক আলম মেহেদী বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে উপকূলীয় জাহাজ চলাচল নিয়ে একটা প্রটোকল বা চুক্তি দরকার আছে। শিগরিরই বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার নৌ সচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সে বৈঠকেই এ প্রটোকলের অনুসাক্ষর হয়ে যেতে পারে। ’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রের তথ্যানুযায়ী, দুদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে পণ্য পরিবহনের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এসওপি সই হতে যাচ্ছে। এর আওতায় পূর্ব অনুমতি ছাড়াই দুই পক্ষ ট্রান্সশিপমেন্টের পণ্য পরিবহন করতে পারবে। আর উপকূল দিয়ে চলাচলকারী জাহাজগুলো নদী পথেও পণ্য পরিবহন করার সুযোগ পাবে।
এদিকে, চলাচলের জন্য জাহাজের মান সর্বনিন্ম ধরা হয়েছে রিভার সি ভেসেল বা আরএসভি শ্রেণী-৪। আরএসভি শ্রেনী-৩’র ভারতীয় জাহাজগুলো বাংলাদেশের যে কোনো বন্দরে যেতে পারলেও একই শ্রেণীর বাংলাদেশি জাহাজগুলো শুধু ভারতের কলকাতা এবং হলদিয়া বন্দরে যাওয়ার অনুমুতি পাবে। সেটাও নির্ভর করছে বাংলাদেশ সরকারের ছাড়পত্র ও নিবন্ধনের উপর। এছাড়া বিমা ও অনুকুল আবহাওয়ার বিষয়গুলোও গুরুত্ব পাবে।
এই চুক্তিতে, দুদেশের পণ্য আসা-যাওয়ার জন্য চট্টগ্রাম, মংলা, খুলনা, পায়রা, নারায়ণগঞ্জ, পানগাঁও এবং আশুগঞ্জ- বাংলাদেশের এই সাতটি এবং ভারতের চেন্নাই, কৃষ্ণপত্তম, কাকিনাদা, বিশাখাপত্তম, পারাদ্বীপ, হলদিয়া এবং কলকাতা এই আটটি বন্দরকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এক্ষেত্রে আটটি রুটও চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হল- চেন্নাই-কৃষ্ণপত্তম-কাকিনাদা-বিশাখাপত্তম,-পারাদ্বীপ-হলদিয়া-কলকাতা-মংলা-পায়রা-চট্টগ্রাম এবং একই ভাবে চট্টগ্রাম থেকে চেন্নাই পর্যন্ত। চেন্নাই-কৃষ্ণপত্তম-কাকিনাদা-বিশাখাপত্তম, পারাদ্বীপ-হলদিয়া-কলকাতা-মংলা-খুলনা এবং একইভাবে খুলনা থেকে চেন্নাই পর্যন্ত। চেন্নাই-কৃষ্ণপত্তম-কাকিনাদা-বিশাখাপত্তম-পারাদ্বীপ-হলদিয়া-কলকাতা-পায়রা এবং একই ভাবে পায়রা থেকে চেন্নাই। চেন্নাই-কৃষ্ণপত্তম-কাকিনাদা-বিশাখাপত্তম-পারাদ্বীপ-হলদিয়া-কলকাতা-পানগাঁও-নারায়ণগঞ্জ-আশুগঞ্জ এবং একই ভাবে আশুগঞ্জ থেকে চেন্নাই পর্যন্ত। তবে পরবর্তীতে আলোচনার মাধ্যমে আরো রুট বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে বলে খসড়ায় উল্লেখ আছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২১৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১৫
জেপি/জেডএম