ঢাকা, বুধবার, ২২ মাঘ ১৪৩১, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কাঁচা হাতের কবিতা

মহিউদ্দিন মাহমুদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৫
প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কাঁচা হাতের কবিতা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

দাসিয়ারছড়া, কুড়িগ্রাম থেকে: আত্মপরিচয়হীন ছিটমহলের জীবন থেকে মুক্তি পাওয়ার আনন্দ, আবেগ কতোটা মধুর, তা ফুটে উঠেছে কুড়িগ্রামের সদ্য বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়ার এক কিশোরের একটি কবিতায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে শাহরিয়ার রহমান শাওনের কাঁচা হাতের লেখা এ কবিতায় যেন দাসিয়ারছড়াসহ সদ্য বিলুপ্ত সব ছিটমহলবাসীর আবেগ ফুটে ওঠে।


 
বুধবার (১৪ অক্টোবর) দুপুরে দাসিয়ারছড়ার কালিরহাট বাজারে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ শাওনের সঙ্গে দেখা। ছিটমহল থেকে মুক্তি পাওয়া নতুন জীবনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপের এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে তার লেখা একটি কবিতা বের করে পড়ে শোনায় সে।

শাওন বিলুপ্ত ছিটমহলের বাইরের কাশিপুর ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণি মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী।

শাহরিয়ার রহমান শাওন বাংলানিউজকে বলেছে, আমাদের পরিচয় ছিলো না। আমরা পড়াশোনা করতে পারতাম না, চাকরি করতে পারতাম না। যারা পড়াশোনা করতো, তারা চুরি করে ভুয়া ঠিকানা দিয়ে পড়াশোনা করতে হতো। এখন বিলুপ্ত ছিটমহলবাসী সত্য ঠিকানা, সাহস নিয়ে কাজ করতে পারবে।
 
এখানে কোনো চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিলো না, স্কুল ছিলো না। কোনো আইন-কানুন ছিলো না।
 
শাওন আরো বলে, কেউ কোনোদিন কল্পনাও করতে পারেনি ছিটমহলের বাসিন্দারা একটি দেশের স্বীকৃতি পাবেন। ৬৮ বছরে ছিটমহলগুলোতে কোনো সরকার প্রধান আসেননি। এই প্রথম আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসছেন। তার নেতৃত্বের কারণে মুক্তি পেয়েছেন ছিটমহলবাসী। আর এজন্য আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে আমরা সবাই ধন্যবাদ জানাই, স্বাগত জানাই।

বাংলানিউজ পাঠকদের জন্য নিচে কবিতাটি হুবহু তুলে ধরা হলো -
 
বদলে যাওয়া দিন
শাহরিয়ার রহমান শাওন
 
সংগ্রাম সংগ্রাম অবিরাম চলছে
সংগ্রামের শেষ যে কবে হচ্ছে?
 
অন্ধকারে বেঁচে আছি আটষট্টি বছর ধরে
শিক্ষা আছে তবু যে নেইকো মোদের দাম
শক্তি আছে তবু যেন পাই না কোনো কাম।
 
ওগো আমরা যে আছি সেই আলোর ভিতরে অন্ধকারচ্ছন্নে।
 
নেইকো বিচার, নেইকো শালিশ
নেই যে কোনো আইন।
 
আলো জ্বালাতে আসেনি তো কেউ
আমরাও ভাবিনি যে পাবো কখনো আলো।
 
তবে সেই কন্যা মানব দরদী দেশরত্ন
আমাদের দেখে যে চোখের জল ফেললো
সেই দূর বাংলার সাহসী মেয়ে বললো
‘আমি জ্বালাবো গো আলো’।
 
তার কথা শুনে ভাবিনি পাবো মুক্তি
তার কথা শোনা শেষ, এদিক ওদিক সবখানে
জ্বলতে থাকলো আলো।
 
মনে হলো ওগো স্বপ্নে আছি, নাকি জাগন্তে
একি গো; একি অবস্থা, এ কেমন মেয়ে
 
দুর্বার ভেঙ্গে করেছে সব চুরমার
নতুন, এ নতুন করিয়া সাজাচ্ছে
আটষট্টি বছরের সব সংগ্রামী বন্ধু
হাসিয়া বুক খুলছে।
 
বলছে, ‘ওগো মা, ওগো মা আসো
তোমাকে সালাম করি।
 
শোধ করিতে পারিবো না তোমার ঋণ’।
 
সেই মা জননী ছেলে-মেয়েদের ডাকে থাকতে পারলো না ঘরে।
আসিতেছে মা জননী ১৫ই অক্টোবরে।
 
বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুড়িগ্রামের দাসিয়ারছড়ায় সুধী সমাবেশে যোগ দেবেন। এছাড়া তিনি কুড়িগ্রামে একটি জনসভায় যোগ দেওয়ার পাশাপাশি দাসিয়ারছড়া ও কুড়িগ্রামের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করবেন।
 
ব্যাপক এ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের পদক্ষেপে আনন্দে আত্মহারা বিলুপ্ত ছিটমহলবাসী। তারা আশা করছেন, দ্রুত এসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বাস্তবায়ন হবে।
 
গত ৩১ জুলাই ঐতিহাসিক মুজিব-ইন্দিরা সীমান্তচুক্তি কার্যকর করা হয়। ওইদিন রাতে বাংলাদেশের ভেতরে থাকা ভারতের ১১১টি ছিটমহল এবং ভারতে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল হস্তান্তরের মাধ্যমে ৬৮ বছরের সমস্যার সমাধান হয়। ছিটমহলের মানুষগুলো ফিরে পান নাগরিক স্বীকৃতি, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ মৌলিক অধিকার এবং নাগরিক সুবিধা।
 
ছিটমহলবাসীদের নাগরিক সুবিধা দিতে পরিচয়পত্র প্রদান, বিদ্যুৎ, স্কুল, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন পরিষদ, রাস্তা নির্মাণসহ ব্যাপক উন্নয়নের কাজ হাতে নিয়েছে সরকার।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৫
এমইউএম/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।