সালনা বাজার, গাজীপুর থেকে: ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কের গাজীপুরের সালনা বাজার। বুধবার (১৪ অক্টোবর) বিকেল পৌনে ৪টা।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গাড়ি থেকে নামতেই চম্পট দিলেন অসাধু, বেআইনি এ কারবারিরা। মন্ত্রী কারখানার প্রতিটি দোকানে যাচ্ছেন। জিজ্ঞাসা করছেন, মাইক্রোবাস কেটে লেগুনা বানাতে কে বলেছে? দোকানগুলোতে বসে থাকা দু’একজন নীরব। মুখে টু শব্দ নেই।
মন্ত্রী আবার বললেন, দোকান ফেলে সবাই পলিয়েছে নাকি? এ দোকানের মালিক কে? সামনে তখন দাঁড়িয়ে কেবল এক শিশু। ‘তুমি কে?’ মন্ত্রী জিজ্ঞাসা করতেই ঝটপট উত্তর, ‘আমি কেউ না। ’ স্মিত হেসে ‘তুমি নায়ক নাকি?’ বলে মন্ত্রী তলব করলেন সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি)।
অনেক ডাকাডাকির পরেও ওসির দেখা মেলেনি। অবশেষে ছুটে এলেন হাইওয়ে থানার কবির নামে এক কর্মকর্তা। তাকে মন্ত্রী নির্দেশ দিয়ে বললেন, ‘মাইক্রোবাস কেটে লেগুনা তৈরি হচ্ছে। এগুলোর ফিটনেস নেই। কাগজপত্র নেই। এসব অবৈধ। এগুলো জব্ধ করুন। ’
এ সময় স্থানীয় সাংবাদিকদের কেউ কেউ বললেন, ‘স্যার এসব অবৈধ লেগুনার কারণে প্রায় সময়েই মারাত্মক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। ৮ জনের লেগুনাতে ১৫ জন চড়ে। ’
হাইওয়ে পুলিশের ওসিকে ওবায়দুল কাদের বললেন, ‘ওসি আসতে কতক্ষণ লাগে? ওসি কী আরব সাগরে গেছেন? এসব জব্ধ করুন। আমাকে আপনারা খবর দেননি। টঙ্গীর লোক আমাকে খবর দিয়েছে। সেই খবরে ছুটে এসেছি। ’
এরপর মন্ত্রীর গাড়ি চললো গাজীপুর চৌরাস্তার দিকে। সেখানে মন্ত্রী গাড়িতে থাকতেই তাকে দেখতে ভিড় জমালেন শত শত স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারী।
ওবায়দুল কাদের গাড়ি থেকে নামতেই স্থানীয় সাংবাদিকরা বললেন, ‘যানজটের কারণে সন্ধ্যার পর এখানে হাঁটা যায় না। প্রতিদিনই ছিনতাই হয়। ’ মন্ত্রী এসব কথা শুনছেন আর এগিয়ে যাচ্ছেন। সামনে ছুটছেন সাংবাদকর্মীরা। স্থানীয় বাসিন্দারাও তার পেছন পেছন ছুটছেন। খানিকটা এগোতেই সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে এবার কথা বলা শুরু করলেন মন্ত্রী।
বললেন, ‘গাজীপুরে অবৈধ যানবাহন তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। এর ফলে তো হাইওয়ে অচল হয়ে যাবে। এখানে পুরনো মাইক্রোবাস কেটে লেগুনা তৈরি হচ্ছে। ১২ থেকে ১৪ বছরের ছেলেদের দিয়ে গাড়ি চালানো হচ্ছে। এর পেছনে একটি সিন্ডিকেট কাজ করছে। আমি সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে বলবো। ’
তিনি বলেন, ‘সুলতান সরকার নামের একজন নাকি এসবের পেছনে নেতৃত্ব দিচ্ছে। ৪ লেন দখল করে ট্রাক, রিকশা, বাসসহ পুরনো বিভিন্ন যানবাহন চলছে। তাহলে জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ চার লেন করে লাভ কী হলো? অবৈধ এসব গাড়ির জন্যই যানজট হচ্ছে। যারা এগুলোর নেতৃত্ব দেয়, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। ’
অবৈধ লেগুনা কারখানা আর যানবাহনের বিরুদ্ধে অ্যাকশন অব্যাহত থাকবে বলেও জানান মন্ত্রী। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমি বারবার এখানে আসবো। অবৈধ যানবাহনের কারখানা বন্ধ করতে হবে। রাস্তার চারপাশে দখল থাকলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চলবে?’
সংবাদকর্মীদের সঙ্গে কথা শেষ করে মন্ত্রী চলে যান গাজীপুর সড়ক ভবনে। সেখানে বসেই ডাকেন সুলতান সরকারকে। যিনি গাজীপুর বাস মোটরযান কর্মচারী ইউনিয়ন সভাপতি। নিজের পরিচয় দিতেই মন্ত্রী বলেন, ‘ভাল হয়ে যান। ’
এসময় তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আওয়ামী লীগের কর্মী পরিচয় দিলে এবার মন্ত্রী বললেন, ‘আমি এখানে নেতা নয়। এখানে সরকারের কাজে এসেছি, সরকারের মন্ত্রী। জনগণের সমস্যাই আমার কাছে বড়। এইসব অবৈধ লেগুনা চলবে না, এ নির্দেশ পালন করো। ’
এ সময় গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস.এম.আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ উদ্দিন খান, বাংলাদেশ সংবাদপত্র পরিষদের (বিএসপি) মহাসচিব মো. শামসুল আলম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৫
এইচএ/