ঢাকা, বুধবার, ২২ মাঘ ১৪৩১, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

নব সাজ, নব রব দাসিয়ারছড়ায়

মহিউদ্দিন মাহমুদ ও ফজলে ইলাহী স্বপন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৫
নব সাজ, নব রব দাসিয়ারছড়ায় ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

দাসিয়ারছড়া, কুড়িগ্রাম থেকে: ৬৮ বছরের ছিটমহলের বন্দি জীবন থেকে মুক্তি পাওয়ার আনন্দকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর।

প্রধানমন্ত্রীকে বরণে নতুন সাজে সেজেছে সদ্যবিলুপ্ত ছিটমহল কুড়িগ্রামের দাসিয়ারছড়া।

নব সাজের সঙ্গে নব রব উঠেছে এখানকার মানুষের মুখে মুখে।

বন্দিত্ব থেকে মুক্তি পাওয়া এখানকার মানুষ বলছেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের এখানে আসছেন। তিনি আমাদের গুরুত্ব দিয়েছেন। আমাদের কষ্ট অনুভব করেছেন, আশা করি আমাদের আর কোনো দুঃখ থাকবে না।

বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রীর কুড়িগ্রাম জেলা এবং দাসিয়ারছড়া সফর উপলক্ষে এ এলাকায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। এখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে বিরাজ করছে ঈদের আনন্দ। গোটা এলাকাজুড়ে তৈরি হয়েছে শত শত তোরণ। ব্যানার ও পোস্টারে চেয়ে গেছে পুরো এলাকা। রাস্তার পাশের গাছগুলোতেও লেগেছে নতুন রং।

এলাকায় এলাকায় চলছে মাইকিং, জনসংযোগ, বাজানো হচ্ছে জাগরণী গান। সবার মুখে প্রধানমন্ত্রীর আগমনের কথা।

কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে আয়োজিত জনসভার জন্য ১৩০ ফুট র্দৈঘ্য এবং ৩০ ফুট  প্রস্থের বিশাল নৌকার মঞ্চ বানানো হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগ এ মঞ্চ তৈরি করেছে।

প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে পুরো কুড়িগ্রামে উৎসব ভাব দেখা গেলেও এর ঢে‌উ সবচেয়ে বেশি লেগেছে দাসিয়ারছড়ায়।
নতুন রাস্তায় কিছু দূর পরপরই তোরণ। রাস্তার দুই পাশ সাজানো হয়েছে রঙিন কাগজ দিয়ে। মানুষের মুখে মুখে প্রধানমন্ত্রীর আগমনী বার্তা। আলোচনায় নানান স্বপ্ন ও সম্ভাবনার কথা।

প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে দাসিয়ারছড়া ও কুড়িগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় দেড় হাজারের মতো তোরণ তৈরি করা হয়েছে বলে জানায় জেলা আওয়ামী লীগ।

দাসিয়ারছড়ার নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা নাগরিক স্বীকৃতি পাব এটাই কল্পনা করতে পারিনি। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের এখানে আসছেন এটা আমাদের কাছে স্বপ্নের মতো।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের এখানে আসছেন। তিনি আমাদের দুঃখ-কষ্টকে যেভাবে উপলব্ধি করছেন তাতে আমাদের আর পিছনে তাকাতে হবে না। অতীত কষ্ট আমাদের কাছে শুধু স্মৃতি হয়ে থাকবে। আমরাও পাব  উন্নত জীবন।

দাসিয়ারছড়া এবং কুড়িগ্রামে প্রধানমন্ত্রীর একগুচ্ছ উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন মানুষের উচ্ছাসকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে অবহেলিত কুড়িগ্রামের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে কার্যকর পদক্ষেপের পাশাপাশি কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর ট্রেন চালু, মেডিকেল কলেজ স্থাপনসহ আরো কিছু দাবিও আছে কুড়িগ্রামবাসীর।

অপরদিকে, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে গোটা কুড়িগ্রাম ও দাসিয়ারছড়াসহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় নেওয়া হয়েছে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা।

প্রধানমন্ত্রীর উপ প্রেস সচিব মামুন অর রশিদ বাংলানিউজকে জানান, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টায় কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন প্রধানমন্ত্রী।

সকাল ১০টায় ফুলবাড়ী উপজেলায় নির্মিত হেলিপ্যাডে অবতরণ করবেন তিনি। পরে সেখান থেকে সকাল ১০টা ১০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী দাসিয়ারছড়ার উদ্দেশে যাত্রা করবেন।

সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত দাসিয়ারছড়ার কালিরহাট বাজার সংলগ্ন প্রস্তাবিত গার্লস হাইস্কুল মাঠে দাসিয়ারছড়ার বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন, ইডকলের প্রোগ্রামের অধীনে সোলার হোম সিস্টেম বিতরণ ও সুধী সমাবেশে যোগদান করবেন।

দাসিয়ারছড়ার কর্মসূচি শেষে প্রধানমন্ত্রী হেলিপ্যাডে ফিরে আসবেন। সেখান থেকে তিনি কুড়িগ্রাম জেলায় আসবেন। পরে দুপুর আড়াইটার দিকে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।

এ সময় তিনি ১৫টি উন্নয়নকাজের উদ্বোধন এবং ১৬টি উন্নয়নকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।

প্রধানমন্ত্রীর উপ প্রেস সচিব মামুন অর রশিদ আরো জানান, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলাধীন ত্রিমোহনী এলাকায় নির্মিত সমন্বিত বীজ হিমাগার, কুড়িগ্রাম টেকনিকেল ট্রেনিং সেন্টার, চিফ জুড়িশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন, কুড়িগ্রাম সদর ডাকবাংলো, জেলা পরিষদ, ফুলবাড়ী মৎস্য কর্মকর্তার অফিস ভবন কাম ট্রেনিং সেন্টার; ফুলবাড়ী ডিগ্রি কলেজের দ্বিতল একাডেমিক ভবন,  দাসিয়ারছড়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ কার্যক্রম,  রাজারহাট কৃষি-আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার, নাজিমখাঁন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রাজারহাটের দ্বিতল ভবন, চিলমারী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, রাজিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নবনির্মিত ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ভবন, রাজিবপুর মহিলা কলেজের একাডেমিক ভবন, রাজিবপুর থানা ভবন, দাঁতভাঙ্গা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রৌমারীর একাডেমিক ভবন, নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নবনির্মিত ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ভবন, ভুরুঙ্গামারী ডাকবাংলো ও উপজেলা পরিষদের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।

এছাড়া কুড়িগ্রাম জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, কুড়িগ্রাম নার্সিং হোস্টেলের নতুন ভবন, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের ১০০ শয্যা বিশিষ্ট ছাত্রাবাস, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের ১০০ শয্যা বিশিষ্ট ছাত্রীনিবাস, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের বিজ্ঞান ভবন, কুড়িগ্রাম পৌর অডিটোরিয়াম, কুড়িগ্রাম জেলা স্টেডিয়াম, মজিদা আদর্শ ডিগ্রি কলেজের একাডেমিক ভবন, খলিলগঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাডেমিক ভবন, কাঁঠালবাড়ী ডিগ্রি কলেজের একাডেমিক ভবন, কৃষ্ণমঙ্গল স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাডেমিক ভবন, নাগেশ্বরী ডিগ্রি কলেজের একাডেমিক ভবন, রাজিবপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, কর্তিমারী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, নামাজের চর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র ও  উলিপুরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন তিনি।

জনসভা শেষে প্রধানমন্ত্রী বিকেলে ঢাকায় ফিরে যাবেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি জাফর আলী বাংলানিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। কুড়িগ্রাম শহরকে সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। এখন শুধু তাকে বরণের অপেক্ষার প্রহর গুণছেন নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সফর ঘিরে দীর্ঘ ৬৮ বছরের অন্ধকার জীবনের অবসানের স্বপ্ন দেখছে বিলুপ্ত ছিটবাসীরা। তেমনি দারিদ্রপীড়িত এ জেলার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ দৃষ্টি দেবেন এটাই সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা।                  

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দাসিয়ারছড়ার দুঃখী মানুষগুলোর খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য শেখ হাসিনা দাছিয়ারছড়ায় আসবেন। আশা করি দাসিয়ারছড়া ছিটমহলটি যেভাবে উন্নয়নের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে তা দ্রত বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।

** যা ঘটছে, সব কল্পনার বাইরে ছিলো’ (ভিডিওসহ)
** প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কাঁচা হাতের কবিতা

বাংলাদেশ সময়: ২৩০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৫
এমইউএম/এসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।