ঢাকা, বুধবার, ২২ মাঘ ১৪৩১, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

হাওরে শিকারি পাখি ভুবন চিল

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৫
হাওরে শিকারি পাখি ভুবন চিল ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কিশোরগঞ্জ: ‘হায় চিল, সোনালী ডানার চিল, এই ভিজে মেঘের দুপুরে,
তুমি আর কেঁদো নাকো উড়ে উড়ে, ধানসিঁড়ি নদীটির পাশে!
তোমার কান্নার সুরে বেতের ফলের মতো, তার ম্লান চোখ মনে আসে!...’

প্রকৃতি-পরাবাস্তবতার কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতায় এভাবেই এসেছে সোনালি ডানার চিলের বর্ণনা। বিস্তীর্ণ আকাশে চিলের ওড়াউড়ি এখন ঠিক আগের মতো চোখে না পড়লেও কিশোরগঞ্জের হাওরে এলে দেখা মিলবে তাদের।



মাছের আশায় ধ্যানমগ্ন গাছের ডালে অথবা হাওরের বিস্তীর্ণ জলরাশি ফুঁড়ে ছোঁ মেরে মাছ শিকারের দারুণ দৃশ্য চোখে পড়বে হাওরে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিশক্তির চিল মাছ শিকারি আশ্চর্য এক পাখি।

সোনালি ডানার চিল ভুবন চিল হিসেবে পরিচিত। এছাড়া ভুবন চিল, বাদামি চিল, গোদা চিল বা ডোম চিল নামে অঞ্চলভেদে আলাদা পরিচিতি আছে।

এ চিলের বৈজ্ঞানিক নাম- Milvus migrans। বাংলাদেশে চিল ধরা নিষিদ্ধ।

ভুবন চিল লম্বা লেজওয়ালা কালচে-বাদামি বর্ণের মাঝারি আকারের শিকারি পাখি। পাখিটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৬০ সেন্টিমিটার, ডানা ৪৩.৮ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ৩.৬ সেন্টিমিটার, পা ৫.২ সেন্টিমিটার ও লেজ ২৬.৫ সেন্টিমিটার।

খোলা এলাকা ও বিস্তীর্ণ আকাশ এ পাখির বিচরণের জন্য অতি প্রিয়। তবে ঘন বন, পাহাড়ি এলাকা, নদীর পাড়ে এ পাখির বিচরণ চোখে পড়ে। ভুবন চিল বড় গাছে দলবদ্ধভাবে রাত কাটায়। সকালে সূর্য ওঠার পর দলবদ্ধ ভাবে চক্রাকারে উড়ে বেড়ায়। তবে খাবারের সন্ধানে আলাদা হয়ে যায়।

ভুবন চিল সুযোগ সন্ধানী ধূর্ত শিকারি ও খাদক পাখি। জলের আবাসস্থলের মাছ শিকার এদের খাদ্য সংস্থানের প্রধান নিয়ামক। এছাড়া, এরা ব্যাঙ, সরীসৃপ ও পোকামাকড় খেয়ে থাকে। গ্রামের গৃহস্থের হাঁস-মুরগির ছানা শিকারে এরা বেশ পটু। শরীরের তুলনায় ডানা বেশ বড় হওয়ায় এরা বেশ দীর্ঘক্ষণ ধরে আকাশে ভেসে বেড়াতে সক্ষম। এরা বাতাসের প্রতিকূলে উড়তে সক্ষম। আর দ্রুত জলাধারে নেমে এসে মাছ শিকারে দক্ষ।

কিশোরগঞ্জের হাওরে বর্ষা পরবর্তী মৌসুমে এদের আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়েছে। হাওরে সরেজমিনে গিয়ে বেশ কিছু ভুবন চিলের দেখা মিলেছে। হাওরের জলাধারে পত্রপল্লবহীন একটি শুকনা গাছের ডালে বেশ কিছু চিল পাখি বিশ্রাম নিতে দেখা গেছে। মাঝে মাঝে এরা হাওরের পানিতে মাছ শিকারে ছোঁ মারছে।

অষ্টগ্রাম উপজেলার কাস্তুল ইউনিয়নের জেলে ফারুক মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, হাওরে কিছুদিন ধরে চিলের আনোগোনা বাড়ছে। তবে চিল আগের মতো আর দেখা যায় না।
 
জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আলী বাংলানিউজকে বলেন, চিলের সংখ্যা কমে গেছে। বনাঞ্চল কমে যাওয়ায় চিলের সংখ্যা কমছে।

বাংলাদেশ সময়: ০০০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৫
এমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।